সাম্প্রতিককালে জলবায়ুু পরিবর্তন ও জনজীবনে তার প্রভাব নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশেও ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতের প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। যদিও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত ঘটে ভেনিজুয়েলা ও ব্রাজিলে। তবে সেখানকার তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার বেশি। যেমন- গত ১৮ মে, ২০২১ ঢাকাসহ সারাদেশে প্রবল ঝড় ও বজ্রপাতে ১৮ জন মারা গেছে। বিশেষত হাওড়বেষ্টিত জেলা নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ আরও এলাকায়, যাদের মধ্যে অনেকেই মাঠে ধানকাটা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু এ বছর অনেকটা ব্যতিক্রম লক্ষণীয়, যাকে অনেকেই বলছে জলবায়ুু পরিবর্তনের ফল এটি।

তাহলে পরিবর্তনটা কি? সম্প্রতি (ভাদ্র, ২০২২) সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামের মাঠের মধ্যে একটি ইঞ্জিনচালিত ঘরে বজ্রপাতে ১৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়, যাদের বেশির ভাগই কৃষি শ্রমিক। এদের মধ্যে দুই বোনসহ তিন কিশোরী রয়েছে। সবাই গিয়েছিল ফসলের খেতে। কৃষি শ্রমিকরা রোপা আমনের চারা তুলছিল। সে সময় বৃষ্টি শুরু হলে তারা সবাই টিনের তৈরি একটি সেচঘরে আশ্রয় নিয়েছিল। তখন বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জনের মৃত্যু হয়। পরে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।

এতে আহত হয়েছে অপর পাঁচজন। এই ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও শোকাভিভূত। বজ্রপাতে একসঙ্গে অনেক সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর  ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরযাত্রীদের একটি দলের ওপর বজ্রপাত হলে মারা যায় ১৭ জন। বরযাত্রীরা বৃষ্টির সময় নদীতীরে অবস্থিত ইজারাদারের টিনের চালার টং ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে প্রায়ই মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। বন্যা বা সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তুলনায় বজ্রপাতে এখন বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সারাদেশে বজ্রপাতে মারা গেছে ২ হাজার ১৬৪ জন। তবে বজ্রপাতে কত মানুষ আহত হয়, গবাদিপশু মারা যায় কত, তা সঠিক জানা যায় না। ঘরবাড়ি বা গাছপালা ধ্বংসের পরিসংখ্যানও জানা যায় না। কৃষি জমি, খেলার মাঠ বা উন্মুক্ত প্রান্তরে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটে। বৃষ্টির সময়ে এসব স্থানে থাকা মানুষ আশ্রয় খুঁজে পায় না। যে কারণে তারা বজ্রপাতের সহজ শিকার হয়।

আবার টিনের ঘরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে আশ্রয় নিয়েও অনেকে মারা যায়। বজ্রপাতের বিপদ সম্পর্কে এখনও বহু মানুষ অসচেতন। বিশেষ করে বজ্রপাতের কবল থেকে রক্ষা পেতে হলে কী করতে হবে, আর কী করা উচিত নয়, সেটা অনেকেই জানে না। সেক্ষেত্রে বজ্রপাত সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরী।
তালগাছ লাগানো হলেও এর সুফল মিলতে অনেক বছর অপেক্ষা করতে হবে। গাছগুলোকে বজ্রপাত প্রতিরোধের মতো সক্ষম বা বড় হতে কমবেশি ১০ বছর সময় লাগতে পারে। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা জরুরী ভিত্তিতে লাইটনিং এ্যারেস্টার বসানোর ওপর জোর দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেশের কোন কোন স্থানে লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর বসিয়েছে। এ ধরনের আরও যন্ত্র স্থাপন করা দরকার। হাওড়াঞ্চলসহ যেসব এলাকায় বেশি বজ্রপাত হয়, সেসব এলাকায় লাইটনিং এ্যারেস্টার যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে বজ্রপাত প্রতিরোধী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে।
এখন বজ্রপাত সংক্রান্ত ঝুঁকির বিষয়ে গবেষকদের ফল নিয়ে আলোচনা করা যাক। গবেষক বিজ্ঞানীরা বলছেন, বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে বায়ুম-লের তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি সম্পর্ক রয়েছে, যা প্রমাণিত। প্রকৃতির এক ভয়াবহ পরিণাম যে বজ্রপাতে কয়েক মিলি সেকেন্ডে এর তাপমাত্রা সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রার কাছাকাছি চলে যায়। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, বিগত কয়েক বছরে ঢাকার বাতাসে কার্বনের পরিমাণ ৪% এর বেশি বেড়েছে। বাতাসে ধূলিকণার মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ২০০ মাইক্রোগ্রামের মনে করা হলেও এলাকা ভেদে প্রতি ঘনমিটারে ৬৬৫ থেকে ২০০০ পর্যন্ত মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেছে ।

তাহলে ঢাকা শহরে দেশের সবচাইতে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা হওয়ার কথা থাকলেও তা বৈদ্যুতিক তারের বেড়াজালের কারণে বোঝা যায় না। কিন্তু বিদ্যুতচালিত যন্ত্রপাতি যেমন- বাল্ব, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, ওভেন, এয়ারকুলার ইত্যাদি মূলধন যন্ত্রপাতির ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। এই ক্ষতি আবার সাধারণ ভোক্তাদের মেরামত খরচ বাড়িয়ে তোলে, যা তাদের সাংসারিক বাজেট বহির্ভূত। বজ্রপাত একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও বর্তমানে এর ব্যাপকতা জনজীবনকে ভাবিয়ে তুলছে এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এখন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ কিংবা ডাটাবেস সৃষ্টিতে কর্তৃপক্ষ খুবই তৎপর। সরকারী পর্যায়ে ত্রাণ ও দুুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন এনজিও, গণমাধ্যম কর্তৃক প্রদত্ত তথ্যে দেখা যায় যে, বিগত পাঁচ বছরে সারাদেশে বজ্রপাতে দুই হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ দিয়েছে। চার শতাধিক আহত হওয়ার খবর রয়েছে, যা গ্রামাঞ্চলে ফসলের মাঠে, পুকুরের পাড়ে ও হাওড়ে বেশি সংগঠিত হচ্ছে। বজ্রপাতে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

এত বেশি মৃত্যুহারের জন্য মানুষের অসচেতনাকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকগণ। তারা বলেছেন, বজ্রপাত সম্পর্কে এদেশের প্রান্তিক ও নিরক্ষর জনসাধারণের সঠিক ধারণা না থাকার দরুন মৃত্যুহার বেশি। ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাতের সময়ও এদেশের লোকজন খোলা মাঠে কাজ করে, বিশেষ করে হাওড় অঞ্চলের কৃষক ও জেলে সম্প্রদায়। এর কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে তাল, নারিকেল, সুপারি ও বট বৃক্ষের মতো বড় গাছের অভাব। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ধাতব দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধি, নদনদী শুকিয়ে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট হওয়া, গাছপালা ধ্বংসের কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি বজ্রপাতের হার বাড়ার অন্যতম কারণ।

আবার আবহাওয়াবিদগণ  বলছেন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর থেকে আসা আর্দ্র বায়ু এবং উত্তর হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বাতাসের মিলনে বজ্রমেঘ, বজ্রঝড় ও বজ্রপাতের সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় গড়ে ৪০টি বজ্রপাত হয়ে থাকে। বিষয়টি যেহেতু পরিবেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই গবেষণা, গবেষক ও জাতীয় নীতি নির্ধারণীতে তার প্রভাব নিয়ে তেমন কোন খবরাখবর পাওয়া যায় না। এই কারণে যে, গবেষণা বিষয়টি সবসময়ই একটি অনাগ্রধিকারের বিষয়, যা জাতীয় পরিকল্পনা কিংবা জাতীয় বাজেটেই হোক। তারপরও পৃথিবীব্যাপী কিংবা বাংলাদেশে কিছু কিছু গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বজ্রপাতের অবস্থান নির্ণয়ের গবেষণায় দেখা যায় যে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে মোট বজ্রপাতের সংখ্যা ১৮০০ ছাড়িয়ে গেছে প্রতি বর্গকিলোমিটারে।

নাসার জিআইএসএসের  গবেষক কাল প্রাইস তার গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন দুটি প্রকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বজ্রপাত ও দাবানলকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে থাকে। পরিবেশে এখন যে পরিমাণ কার্বন আছে, তার যদি দ্বিগুণ বৃদ্ধি ঘটে, তাহলে বজ্রপাত ঘটবে ৩২ ভাগ। তার মতে, বায়ুদূষণের সঙ্গে বজ্রপাতের সম্পর্ক খুব নিবিড়। বেশির ভাগ গবেষকই মনে করেন, বাতাসে সালফার ও নাইট্রোজেনের যৌগগুলোর পরিমাণ, তাপ শোষণ ও সাময়িক সংরক্ষণকারী গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বজ্রপাত বাড়া কিংবা কমার সর্ম্পক রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালী একজন গবেষক উল্লেখ করেছেন, দেশের উচ্চশীল গাছপালা কিংবা বনায়ন কমে যাওয়ায় বজ্রপাতের ঘটনা ত্বরান্বিত হয়েছে।

বাংলাদেশে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সরকার ২০১৬ সালে ১৭ মে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করলেও এর কারণ অনুসন্ধান কিংবা প্রতিকারের কি উপায় হতে পারে, সে বিষয়ে দেশের আবহাওয়াবিদরা বা দুর্যোগ বিজ্ঞানীরা সে সস্পর্কে কোন তথ্য-উপাত্ত দিতে পারছে না। অথচ বাংলাদেশের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে। যাদের পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণার পরিমাণ কিংবা গুণগত ফল আশাব্যঞ্জক নয়। এ ছাড়াও আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা করার মতো গবেষক কিংবা বিশেষায়িত গবেষণা প্রতিষ্ঠান দেশে সরকারী পর্যায়ে থেকেও না থাকার মতো  অবস্থায় রয়েছে।

এ বিষয়ে দু’একজন গবেষকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় জানা যায়, একাধারে অত্যাধুনিক গবেষণাগারের স্বল্পতা, অপরদিকে অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ আবহাওয়া গবেষণার প্রধান প্রতিবন্ধক। আরও উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, বাংলাদেশে এত বেশি মৃত্যুহার হলেও বজ্রপাত নিয়ে কোন গবেষণা এবং তা থেকে মৃত্যুরোধের কোন কার্যক্রম নেই। সীমিত পরিসরে বজ্রপাত সম্পর্কে শুধু পুস্তিকা এবং সেমিনারের মাধ্যমে সরকারী কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে। সচেতনতার অভাব, বজ্রনিরোধক এবং উল্ল্যেখযোগ্য সরকারী কোন কার্যক্রম না থাকায় প্রতিবছর এত প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। বজ্রপাতের কারণে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যেহেতু বজ্রপাত প্রতিরোধের কোন উপায় বের হয়নি, সেহেতু বজ্রপাতের সময় আমাদের বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আমরা জীবন বাঁচানোর তাগিদে এখন কিছুটা নড়েচড়ে বসেছি। প্রবাদ আছে, ’জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ’, তার সঙ্গে আরও একটি যোগ হয়েছে ’আকাশে বজ্রপাত’। এখন মানুষ যাবে কোথায়। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কি ভাবছে বা কি আয়োজন করছে তা নিয়ে জনমনে কিছুটা আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক। দুর্যোগ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতে দেশের সব জেলায় তালবীজ বপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমাণ তালবীজ রোপণের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এখন তালগাছকে বজ্রপাতের উপশম হিসেবে কাজে কেন বাছাই করা হলো, তা অনেকেরই মনে প্রশ্ন।

কৃষি ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ডঃ এম এ ফারুক অনেক আগেই বলেছেন, তালগাছ একটি বহুজীবী উদ্ভিদ, যার জীবনকাল নব্বই থেকে একশত বছর, ভূমি সংরক্ষণের সহায়ক সব জমিতে আইলে জম্মায়, তালগাছের মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে বিধায় ফসল ক্ষতিকারক নয়, কম বৃষ্টিতে অধিক তাপমাত্রায় ও তীব্র বায়ুপ্রবাহ সহ্য করতে পারে ইত্যাদি। কিন্তু বীজ বপনের পর বজ্রপাতের ঝুঁকি হ্রাসের উপযোগী করতে ১৪ থেকে ১৬ বছরের অধিক সময় লাগে। তবে এই পরিকল্পনার সঙ্গে সুপারি গাছও বিবেচনায় আনা যায়, যা দ্রত বর্ধনশীল, ৫০-৬০ ফুট উচুঁতে হয় এবং তালগাছের প্রতি ৩০ ফুটের মধ্যবর্তী স্থানে রোপণ করা যায় ইত্যাদি। এই ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুফল পাওয়া গেছে।
তবে স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা হিসেবে বজ্রপাতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হিসেবে এক- দেশের বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলো শনাক্ত করতে হবে আবহাওয়া জরিপের ভিত্তিতে। বর্তমানে গণমাধ্যমের বদৌলতে আমরা যে সকল তথ্য পাই তা থেকে দেখা যায় যে, দেশের ১৪ টি জেলা বজ্রপাতের ঝুঁকির আওতায় রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে সুনামগঞ্জের নাম সর্বাগ্রে রয়েছে। তবে এলাকার মানুষকে এই বার্তাটি দেয়ার দায়িত্ব কার? অবশ্যই স্থানীয় প্রশাসনের। স্থানীয়ভাবে কর্মরত সামাজিক সংগঠনগুলোর দায়িত্বও কম নয়। যেহেতু মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এই বজ্রপাতের প্রকোপ খুব বেশি। সেহেতু বিভিন্ন ভাবে প্রচারণা, সতর্কীকরণ, সামাজিক সভা ও মাইকিং করা যেতে পারে।

যে সকল বিষয় এতে স্থান পাবে তা হলো- বজ্রপাতের সময় পাকা ভবনের নিচে আশ্রয় নেয়া, উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে থাকা, বাড়ির জানালা থেকে দূরে থাকা, ধাতব বস্তু স্বর্শ না করা, বিদ্যুতচালিত যন্ত্র থেকে দূরে থাকা, গাড়ির ভেতরে না থাকা, পানি থেকে দূরে থাকা, বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখা দিলে নিচু হয়ে বসা, রাবারের জুতো ব্যবহার করা,  বজ্রপাতজনিত আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
দুইÑ দেখা গেছে, বজ্রপাতের কারণে মহিলাদের তুলনায় কর্মক্ষম পুুুুুরুষের মধ্যে মৃত কিংবা আহতের সংখ্যা বেশি, যা সামাজিকভাবে একটা দুশ্চিন্তার কারণ। এই সকল পরিবারকে পুনর্বাসন করার দায়িত্ব সরকারের এবং এর জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্ধ থাকা প্রয়োজন।

শুধু তাই নয়, চাকরির ক্ষেত্রেও এই পরিবারের প্রার্থীদেরও অগ্রাধিকার দিতে হবে। তৃতীয়ত- মাঠে ঘাটে কিংবা জলাধারে মৎস্য শিকারের সময় বেশি মানুষ দুর্ঘটনায় পতিত হয়, বিশেষত হাওড়ে। এসব জায়গায় মুঠোফোনের টাওয়ার লইটেনিং এ্যারস্টার লাগিয়ে বজ্রপাতের ঝুঁকি কমানো যায়, যা কোম্পানিগুলো তাদের দায়িত্বের অংশ হিসেবে করতে পারে। গত কয়েক বছরে প্রায় চার হাজার নারী-পুুরুষ বজ্রপাতের কারণে আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছে। তাদের বেঁচে থাকার জন্য ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হবে। উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, বাংলাদেশে এত বেশি মৃত্যুহার হলেও বজ্রপাত নিয়ে কোন গবেষণা ও তা থেকে মৃত্যুরোধের কোন কার্যক্রম প্রায় নেই। সীমিত পরিসরে বজ্রপাত সম্পর্কে শুধু পুস্তিকা এবং সেমিনারের মাধ্যমে সরকারী কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে।

সচেতনতার অভাব, বজ্রনিরোধক এবং উল্ল্যেখযোগ্য সরকারী কোন কার্যক্রম না থাকায় প্রতিবছর এত সংখ্যক জীবন ঝরে যাচ্ছে। বজ্রপাতের কারণে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যেহেতু বজ্রপাত প্রতিরোধের কোন উপায় বের হয়নি, সেহেতু বজ্রপাতের সময় আমাদের বেশ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বজ্রপাতের সময় দালান বা পাকা ভবনের নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোন অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। সবচেয়ে ভাল হয় কোন একটি পাকা দালানের নিচে আশ্রয় নিতে পারলে। উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুত লাইন থেকে দূরে থাকতে হবে। উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে বেশি। খোলা স্থানে বিচ্ছিন্ন একটি যাত্রীছাউনি, তালগাছ বা বড় কোন গাছ ইত্যাদিতে বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি থাকে। বজ্রপাতের সময় বাড়িতে জানালার কাছাকাছি থাকা যাবে না।

এ সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না। বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বজ্রপাতের আভাস পেলে টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদির প্লাগ খুলে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। সবশেষে বলা যায়, সরকারের বিদ্যুত বিভাগ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তাদের কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করবে, এই প্রত্যাশাই রইল।

লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি, সাবেক  জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews