ব্রুনাই, এর দেশের সম্পূর্ণ নাম হল Negara Brunei Darussalam। এ নামের অর্থ হল সতর্ক এবং শান্তি। এটি একটি ইসলামী রাষ্ট্র। দেশের আয়তন শুধু মাত্র চীনের শাংহাই শহরের সমান। তবে এ দেশের মহান রাজপ্রাসাদ, বিশ্ববিখ্যাত নদীগ্রাম, বিশেষ কারুকার্যময় এবং স্থাপত্যশৈলীর মসজিদ, সারা বিশ্বকে অবাক করেছে। দেশটির আয়তন- ৫,৭৬৫ বর্গকি.মি. রাজধানী-বন্দর সেরি বেগাওয়ান। লোকসংখ্যা- ৪,০০,০০০। মুদ্রা- ব্রুনেই ডলার।
অবস্থান: বোর্নিও দ্বীপপুঞ্জের উত্তর উপকূলে অবস্থিত দেশটি ভূমির দিকে মালয়েশিয়ার সারাওয়াক রাজ্য দ্বারা বেষ্টিত।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: সুলতান শাসিত ব্রুনেই ষোড়শ শতাব্দীর প্রারম্ভে অত্যন্ত শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিল এবং এর কর্তৃত্ব সম্পূর্ণ বোর্নিও দ্বীপপুঞ্জ এবং ফিলিপাইন ও সুলু দ্বীপপুঞ্জের এক বিরাট অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ১৮৮৮ সালে এক চুক্তির মাধ্যমে ব্রুনেই ব্রিটেনের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। ১৯৮৩ সালে ব্রুনেই সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
২০১৩ সালে দেশটি আবার আসিয়ানের চেয়ারম্যান দেশ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এবং এ অর্জন বিশ্বভূবনে আরো বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। বলা যায় প্রায় সমগ্র বিশ্বই ছোট্ট অথচ বিশেষ এই দেশটিকে জানতে অনেক আগ্রহী। বর্তমান ইন্টারনেটের দুনিয়ায় বিশ্ব যেন সত্যিই একটি গ্রামের মত ছোট হয়ে গেছে। হাত বাড়ালেই পেয়ে যাচ্ছেন সব তথ্য, পা বাড়ালেই পৌঁছে যাচ্ছেন দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।
দেশের রাজপ্রাসাদ এবং ইসলাম ধর্মীয় স্থাপত্য নিদর্শন সমূহ ব্যপক কারুকার্যময় আর দৃষ্টিনন্দন এবং দেখতে সত্যিকার অর্থেই চোখ ধাঁধানো স্বর্ণসন্দুর, যেন প্রতিটি রাজপ্রাসাদ আর মসজিদ স্বর্ণখোচিত- কিন্তু তা আসল স্বর্ণ নয়। আর এই সব বাহারী অট্টালিকার পাশেই আপনি পেয়ে যাবেন হতদরিদ্র সেই সব মানুষদের যাদের থাকার জন্য সামান্য কুটিরগুলি দেখতে ঠিক যেন বিপরীত অর্থাত্ বিবর্ণ আর মলিন। অনেক নাগরিকের বাড়ি কেনার সামর্থ নেই তাইজন্যে তারা নদীগ্রাম বানিয়ে নদীতে বসবাস করে। এমন দৃশ্য খোদ ব্রুনাই-এর রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানের ব্রুনাই নদীতেই। তবে বর্তমানে এটি বিশ্বের বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী নদীগ্রামে পরিণত হয়েছে, কেননা এটিই এখন বিশেষ দর্শনীয় একটি স্থানের মর্যাদা অর্জন করেছে। বর্তমানে এখানে বসবাসকারী নাগরিকেরা তাদের ছোট ছোট বাড়িগুলোক উজ্জ্বল রং দিয়ে বেশ সুন্দর নক্সাখোচিত আলপনা এঁকে সাজিয়ে রাখেন, যাতে পর্যটক আকর্ষণ করতে পারে। বর্তমানে এই নদী গ্রামে ৩০ হাজারেরও বেশি লোক বাস করে।
গৃহহীন একদল মানুষ থাকার আশ্রয় খুঁজতে বেছে নিচ্ছে একটি নদীকে যেখানে নদীর ওপরেই ঘর তৈরী করে বসবাস করছে। কালক্রমে সেই নদীগ্রামটির প্রতি সরকারের বিশেষ নজর পড়তে থাকে। সরকার নদী গ্রামে থাকা লোকজনের জীবনযাপনের মান উন্নয়ন করার জন্য বিশেষ করে নদী স্কুল, ক্লিনিক, ডাক আফিস, দোকান,দমকল বিভাগ নির্মাণ করেছে। এ ছাড়া সেখানে একটি মসজিদ আছে, যে মসজিদটির একটি অংশ নদীতে, আর বাকি অর্ধাংশ স্থলে নির্মিত। বলা যায়, দারিদ্রই তাদের মহান করেছে।
ব্রুনাইয়ের অধিকাংশ মানুষের বাড়ি সাধারণত দু’তলার আর এ সব বাড়িঘর খুব স্বল্প ব্যায়ে নির্মিত এবং সাধারণের সাধ্যের নাগালের মধ্যেই তৈরী করা হয়। এগুলোকে কোনোভাবেই বিলাসবহুল ভিলার সাথে তুলনা করা যাবে না। পৃথিবীর আর দশটা দেশের মতোই ব্রুনাইতেও মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক মানুষ অট্টালিকা সদৃশ ভিলাতে বসবাস করে থাকে। অন্যদিকে ব্রুনাই-এর পাবলিক যানবাহন ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত, পাবলিক যানবাহনে চলাচল রীতিমত একটি ঝামেলা আর দূর্ভগের কারণ হয়ে ওঠে। তাই লোকজন বাধ্য হয়ে গাড়ি কিনে নিজেই চালায়। সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ব্রুনাই পরিবারের গড়ে ৩টি গাড়ি আছে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে তাদের গাড়ির দাম বেশি নয়, সাধারণত ১ লাখ থেকে ৫ লাখ ইউয়ানেরও বেশি মূল্যের গাড়ি নেই বললেই চলে।
ধনী, গরীব, উচু, নিচু এই সব বিভেদ বিভাজনকে সাথে নিয়েই ব্রুনাই তার নামের মতোই সত্যিই একটি শান্ত আর শান্তিপ্রিয় দেশ। এটিই হচ্ছে মূলত দেশটির প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আর্কষণের মূলকারণ। সে কারনেই হয়তো বিশ্বের অনেক লোক ব্রুনাইয়ের নাগরিক হতে চান এবং সেখান থাকতে চান, কারণ দেশটির সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ব্রুনাই ভিন্ন ভাষা সংস্কৃতির মানুষদের স্থায়ীকরণে নিরুৎসাহিত করে। কেননা এ দেশের নাগরিক হওয়া বেশ কঠিন। এখানের নাগরিক হওয়ার প্রথম শর্ত হল ব্রুনাই-এ একটানা ২০ বছর থাকতে হবে এবং বেশ জটিল ও কঠিন ব্যবস্থাপনায় মালয়েশিয়া ভাষার পরীক্ষায় পাস করতে হবে ।
বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, ২৬ মে, ২০১৮
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএনবি