দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের প্রায় ৭৫ শতাংশই বাণিজ্যের আড়ালে পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছে এক গবেষণা। আমদানি ও রফতানির সময় মিথ্যা ঘোষণা এবং ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে এই বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার হয়।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

বিআইবিএম মিলনায়তনে আয়োজিত এই আলোচনায় ‘ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিং’ বিষয়ক একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক আহসান হাবিব। গবেষণাটি বিআইবিএমের তিনজন শিক্ষক, দুই বেসরকারি ব্যাংকার এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক কর্মকর্তার সমন্বয়ে ৩৭টি ব্যাংকের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়।

গবেষণায় বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুসারে, দেশে অর্থ পাচারের ৭৫ শতাংশ ঘটে বাণিজ্যচ্যানেলের মাধ্যমে। ২০১৫ সালের অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন সংশোধনের পর শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর মোট ৯৫টি অর্থ পাচারের ঘটনা শনাক্ত করে, যার সবকটিই বাণিজ্যের মাধ্যমে সংঘটিত। এসব ঘটনার আর্থিক মূল্য ছিল প্রায় ৩ হাজার ২০১ কোটি টাকা।

আহসান হাবিব বলেন, “বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ পাচার তুলনামূলক সহজ এবং এই পথে বড় অঙ্কের অর্থ স্থানান্তর সম্ভব হয়, যার ফলে পাচারকারীরা এ মাধ্যমকেই বেশি ব্যবহার করে।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার বলেন, “অনেক সময় আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য কম দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়, যা বাণিজ্য অর্থায়নের আওতায় পড়ে। বাইরের চোখে লেনদেন স্বাভাবিক মনে হলেও ভেতরে অনেক সময় জটিল কারসাজি লুকিয়ে থাকে।”

গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতি বছর গড়ে ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে, যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এসব অর্থ পাচার প্রধানত বস্ত্র, ভোগ্যপণ্য ও জ্বালানি পণ্যের আমদানি খাতের সঙ্গে জড়িত।

গবেষণায় আরও উঠে আসে, দেশের ব্যাংকগুলো নিষিদ্ধ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা যাচাইয়ে সক্ষম হলেও আমদানি-রফতানি মূল্য যাচাইয়ে অনেক ব্যাংক পিছিয়ে রয়েছে। ৫০ শতাংশ ব্যাংকই এ সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডার ব্যবহারে সক্ষম বলে জানিয়েছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক আবদুল হাকিম, এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার অধ্যাপক ফারুক এম আহমেদ, শিক্ষক আলী হোসেইন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক এ কে এম রেজাউল করিম, বিএফআইইউ পরিচালক মোস্তাকুর রহমান প্রমুখ।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews