নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের মসলেন্দপুর গ্রামে চুরির দায়ে দুই যুবককে এক ইউপি সদস্য ও তার এক সহযোগী মিলে পাইপ দিয়ে পিটিয়ে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার বিকালে বারদী মসলেন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ওই দুই যুবককে নির্যাতন করা হয়। চুরির প্রমাণ পেয়েও থানা পুলিশের হাতে ওই দুই যুবককে সোপর্দ না করে নিজেরাই পিটিয়ে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। চুরির দায়ে নির্যাতনের শিকার আল আমিন বারদী ইউনিয়নের মসলন্দপুর গ্রামের নবী হোসেনের ছেলে। নির্যাতনের শিকার পারভেজ একই গ্রামের জামান মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের মছলন্দপুর এলাকার এভারগ্রিণ কিন্ডারগার্টেন নামের একটি স্কুল থেকে গত সোমবার রাতে ৯টি ফ্যান ও একটি বৈদ্যুতিক মোটর চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। চোরাইকৃত ওই ফ্যান ও বৈদ্যুতিক মোটর আড়াইহাজার উপজেলার জাঙ্গালিয়া এলাকায় গত শনিবার দুপুরে বিক্রি করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে আল আমিন ও পারভেজ নামের দুই যুবক। এসময় তাদের আটক করে গণধোলাই দেয় এলাকাবাসী। এঘটনার পর শনিবার বিকেলে সোনারগাঁও উপজেলার মসলন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আটককৃতদের বিরুদ্ধে একটি বিচার সালিসের আয়োজন করা হয়। ওই বিচার শালিসে বারদী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ওমর ফারুকসহ শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন। এসময় বিচার শালিসে চুরির দায়ে দুই যুবককে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়। বিচার শালিসে ইউপি সদস্য ওমর ফারুক ও মসলন্দপুর গ্রামের নুর মোহাম্মদ ওরফে নুরা পাগলা নিজেই প্লাস্টিকের পানির পাইপ দিয়ে উপস্থিত লোকজনের সামনে তাদের প্রায় অর্ধ শতাধিক আঘাত করে ও নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য ওমর ফারুক ওই দুই যুবককে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে হত্যার চেষ্টা চালায়।
বিচার সালিসে অংশগ্রহণকারী একাধিক ব্যক্তির দাবি, স্থানীয় মছলন্দপুর গ্রামের আল আমিন, শান্ত ও পারভেজের অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডের কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। স্থানীয় অনেক স্কুল, মাদ্রাসা ও বাড়িঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্র তারা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধের কারণে তাদের নামে এলাকায় একাধিক বার বিচার শালিস করা হলেও তারা তাদের অপকর্ম বন্ধ করেনি। তাই উত্তেজিত হয়ে ইউপি সদস্য ওমর ফারুক নিজেই লাঠি দিয়ে তাদের আঘাত করেছেন।
এ ব্যাপারে বারদী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ওমর ফারুক বলেন, নানান অপরাধে তাদের বিচার করতে করতে আমি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। তারা আমার নিকট আত্মীয় হওয়ার কারণে আমি বিচার সালিসে এমনভাবে শাসন করেছি। বিচার শালিসে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। পুলিশে দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দিতে রাজী হননি।
সু-শাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সোনারগাঁ শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান মামুন বলেন, ভিডিওতে যা দেখলাম কুকুরকেও মানুষ এভাবে মারতে পারে না। পেছনে হাত বেধে দুই ব্যক্তি যেভাবে একের পর এক আঘাত করছেন তা অমানবিক। তারা যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে পারত।
সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, চুরির দায়ে দুই যুবককে হাত বেধে নির্যাতনের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।