ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আগামী ২৪ জুনের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনালে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে বলে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার এ এস এম রুহুল ইমরান স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি গতকাল মঙ্গলবার একটি ইংরেজি ও একটি বাংলা দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চিফ প্রসিকিউটরের দাখিল করা ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) বিবেচনায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অপরাধগুলো আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের এই বিষয় বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে, অভিযুক্ত দু’জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি সত্ত্বেও তারা পলাতক রয়েছেন বা গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আত্মগোপন করেছেন। সে কারণে তাদের ২৪ জুন এই ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়া হলো। অন্যথায় তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ সম্পন্ন হবে।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, এই প্রযুক্তির যুগে কোনো ব্যক্তি জানেন না, তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে, এটি সাধারণত বিশ্বাসযোগ্য নয়। তারপরও আইনের প্রতিটি বিধান অনুসরণ করার উদ্দেশ্যে ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল সোমবার এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন।

চার্জশিটে যেসব অভিযোগ : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন দল শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করেছে। অভিযোগগুলো হলো :

গণহত্যা : গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র ও জনতার আন্দোলন দমন করতে ঢাকা ও অন্যান্য শহরে পরিকল্পিতভাবে নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়। এতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ সহস্রাধিক মানুষ নিহত হন।

গুম ও নিরুদ্দেশ : আন্দোলনের সময় বিপুলসংখ্যক আন্দোলনকারী, সংগঠক ও সাধারণ নাগরিককে গুম করা হয়, যাদের অনেকের সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি।

অনৈতিক আটক ও নির্যাতন : আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর মাধ্যমে হাজারো নাগরিককে বিনা পরোয়ানায় আটক করে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।

সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী দ্বারা সমন্বিত হামলা : আওয়ামী লীগপন্থী সশস্ত্র ক্যাডার ও পুলিশের যৌথ অভিযানে রাতের অঁাঁধারে বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।

নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতা : আন্দোলন দমনে নারীদের ধর্ষণ, শারীরিক নিপীড়ন ও শিশুদের হত্যার অভিযোগও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রাসঙ্গিক আইন : আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩

এই মামলার বিচার হচ্ছে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের আওতায়। আইনটির ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে।

আইনের ৩১ নম্বর বিধি অনুযায়ী, যদি কোনো আসামি পলাতক থাকে, তাহলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার অনুপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়।

ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের পটভূমি : ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র ও জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারায়। এরপরই পুনর্গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

পুনর্গঠনের পর প্রথম মামলাটি হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। পরে তার বিরুদ্ধে আরো দু’টি মামলা হয়। ২০০৯ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দায়ে, ২০১৩ সালে হেফাজতের শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে।

পরবর্তী শুনানি ২৪ জুন : আসামিদের আত্মসমর্পণের জন্য চূড়ান্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ জুন ২০২৫। ওই দিন মামলার পরবর্তী আদেশ দেয়া হবে। আত্মসমর্পণ না করলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews