দাবা খেলাকে অনেকে শুধুই একটি খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ মনে করেন। কিন্তু এই বুদ্ধির খেলা শিশুর মানসিক বিকাশে যে কতটা গভীর প্রভাব ফেলে, তা এখন বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় প্রমাণিত।

ছোটবেলা থেকে দাবা খেলার অভ্যাস শিশুর মনন, চিন্তা-শক্তি, এবং সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতার ওপর বিপুল প্রভাব ফেলে। আজ (২০ জুলাই) আন্তর্জাতিক দাবা দিবসে জেনে নিন শৈশবে দাবা খেলার কী কী মনস্তাত্ত্বিক উপকারিতা রয়েছে-

১. স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়

দাবা খেলায় প্রতিটি চাল মনে রাখা, প্রতিপক্ষের আগের কৌশল বিশ্লেষণ করা এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়। ফলে নিয়মিত দাবা খেলার মাধ্যমে শিশুর কার্যকর স্মৃতি ও মনোযোগের স্থায়ীত্ব বেড়ে যায়।

১৯৯৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব মেমফিসের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত দাবা খেলে, তাদের স্মৃতিশক্তি অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি শক্তিশালী।

২. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ে

দাবা একটি কৌশলগত খেলা, যেখানে দ্রুত এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হয়। শিশুরা যখন নিয়মিত দাবা খেলে, তারা ধাপে ধাপে চিন্তা করার অভ্যাস গড়ে তোলে। এর ফলে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সমস্যা সমাধানে তারা বেশি আত্মবিশ্বাসী ও দক্ষ হয়ে ওঠে।

সন্তানকে দাবা খেলা শেখাবেন যে কারণে

৩. ধৈর্য ও মনোসংযোগ তৈরি হয়

একটি দাবার ম্যাচ অনেক সময় নিতে পারে। এই পুরো সময় প্রতিটি সিদ্ধান্ত খেলোয়াড়ের ভাবনার উপর নির্ভর করে। এই ধরণের খেলা শিশুদের ধৈর্য ধরতে শেখায়, তারা শিখে কিভাবে হুটহাট সিদ্ধান্ত না নিয়ে ধীরে চিন্তা করতে হয়। এই ধৈর্য তাদের পড়াশোনা ও সামাজিক জীবনে কাজে লাগে।

৪. সৃজনশীলতা বাড়ে

দাবা খেলতে গিয়ে অনেক সময় নতুন কৌশল তৈরি করতে হয়। ২০০০ সালে ড. রবার্ট ফার্গুসন তার একটি গবেষণায় প্রমাণ করেছেন যে, দাবা খেলা শিশুদের সৃজনশীলতা বাড়ায়। বিশেষ করে ডানমস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে, যা সঙ্গীত, ছবি আঁকা, এবং গল্প লেখার মতো সৃজনশীল কাজে সাহায্য করে।

সন্তানকে দাবা খেলা শেখাবেন যে কারণে

৫. আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেয়

দাবা খেলার শেষ চালটির আগে থেকেই বোঝা যায় কে জিততে চলেছে। এ পর্যায়ে সাধারণত খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন নিজের দলের রাজাকে বোর্ডে শুইয়ে দিয়ে হার মেনে নেন। শিশুরা যখন এভাবে হার মানে, তখন তারা ধীরে ধীরে শেখে যে, হার-জিত জীবনের অংশ। নিয়মিত দাবা খেলা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়।

সন্তানকে দাবা খেলা শেখাবেন যে কারণে

৬. প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য

২০০১ সালে দ্য আমেরিকান চেস ফাউন্ডেশন একটি গবেষণায় দেখায়, যারা স্কুলে দাবা শেখে, তাদের গণিত এবং পড়ার দক্ষতা অন্যদের তুলনায় দ্রুত উন্নত হয়। কারণ দাবা খেলায় যেমন যুক্তির ব্যবহার হয়, তেমনি প্যাটার্ন চিনে নেওয়ার ক্ষমতাও তৈরি হয়, যা একাডেমিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

৭. সামাজিক দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়

দাবা অনেক সময় একে অপরের সঙ্গে খেলে শেখা হয়। এতে শিশুদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, নিয়ম মানা, এবং আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। খেলায় জয়ী হওয়া শিশুরা নিজের ওপর আস্থা পায়, আবার হারলেও শেখার সুযোগ থাকে।

সন্তানকে দাবা খেলা শেখাবেন যে কারণে

শুধু পড়াশোনায় মেধাবীদের জন্য নয়, সব শিশুর জন্যই দাবা খেলা উপকারী। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে পড়ালেখা নিয়ে বাড়তি চাপ থাকে, সেখানে দাবা হতে পারে মানসিক বিকাশের পথ। তাই শিশুদের হাতে মোবাইল বা ট্যাবের বদলে একটি দাবার বোর্ড দিন। সেটা কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য এক শক্তিশালী মানসিক ভিত্তি।

সূত্র: আমেরিকান চেস ফাউন্ডেশন, ইউনিভার্সিটি অব মেমফিস স্টাডি, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ্ রিপোর্টস অন স্ট্র্যাটেজিক গেমস্

এএমপি/এএসএম



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews