শুক্রবার (১৮ জুলাই) ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন। এই ভাষণ শুধুমাত্র প্রতিরোধের কৌশলগত অবস্থানকে স্পষ্ট করেননি। বরং এক চতুর্থাংশ বৈশ্বিক জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্বকারী একটি বৃহৎ জাতিকে কাঁপিয়ে দিয়েছে এবং গাজার ট্র্যাজেডির গভীরতা উন্মোচন করেছে।

দখলদারিত্ব ও ভঙ্গ প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে বার্তা

আবু ওবাইদার বক্তব্যে প্রথম ও প্রধান বার্তা ছিল ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান। তিনি ইসরাইলকে চুক্তিভঙ্গকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেন এবং আলোচনা ও বন্দী বিনিময় ব্যর্থতার সম্পূর্ণ দায় তাদের ওপর চাপান। ভাষণে নেতানিয়াহুর সরকারের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট, সৈন্যদের হতাহতের পরিসংখ্যান এবং প্রতিরোধের সামরিক সাফল্য তুলে ধরার মাধ্যমে তিনি দখলদার বাহিনীর মনোবল দুর্বল করার কৌশল অবলম্বন করেন।

গাজার নিপীড়ন ও জাতির নিরবতা

ভাষণে আবু ওবাইদা আরব ও ইসলামী বিশ্বের নেতৃবৃন্দ, পণ্ডিত ও অভিজাতদের নিরবতা এবং নিষ্ক্রিয়তার তীব্র সমালোচনা করেন। গাজার জনগণকে রক্তাক্ত ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় রেখে এই নীরবতা যে একটি জাতিগত ও রাজনৈতিক ব্যর্থতা, তিনি তা স্পষ্ট করে বলেন। ৫৬১ দিনের যুদ্ধ ও অবরোধের মধ্যেও এই জাতির কাঠামোগত অক্ষমতা একটি গভীর হতাশার প্রতিচ্ছবি।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষপাত ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র

আবু ওবাইদার তৃতীয় বার্তা ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়ে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব ইসরাইলকে অস্ত্র, সুরক্ষা এবং রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত করছে। ট্রাম্প প্রশাসনের জোরপূর্বক অভিবাসনের ধারণাকে বৈধতা দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি এটিকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

জনগণের ভূমিকা ও আন্দোলনের আহ্বান

আবু ওবাইদা তার ভাষণে সাধারণ জনগণকে তাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানান। বিশেষ করে অবরোধ ভাঙা, সাহায্য পাঠানো এবং আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে বলেন। পশ্চিমা বিশ্বে গাজার পক্ষে বিক্ষোভ এবং সংহতির তুলনায় আরব ও ইসলামী বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তা একটি হতাশাজনক চিত্র বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সহযোগীদের প্রতি শেষবারের মতো সতর্কবার্তা

ভাষণের শেষাংশে আবু ওবাইদা ফিলিস্তিনে ইসরাইলের সহযোগীদের উদ্দেশে বলেন, এখনো সময় আছে অনুতপ্ত হয়ে স্বদেশে ফিরে আসার। তিনি তাদের জন্য নিন্দার ভাষা না ব্যবহার করে অনুতাপের দরজা খোলা রেখেছেন, যাতে তারা দখলদারিত্বের পথ থেকে ফিরে জনগণের সাথে মর্যাদার লড়াইয়ে শরিক হতে পারে।

আবু ওবাইদার ভাষণ ছিল একটি কৌশলগত ও নৈতিক বার্তা, যা দখলদার বাহিনী, আরব ও ইসলামী বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যেক স্তরে প্রতিক্রিয়া দাবি করে। এ ভাষণ একটি সাধারণ ঘোষণা নয়; বরং এটি ছিল একটি আত্মিক আহ্বান, যা জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছে এবং গাজার প্রতিরোধের অদম্য চেতনাকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছে। এখন দেখার বিষয়, এই আহ্বানে আরব-ইসলামী নেতৃত্ব ও বিশ্ব মানবতা কীভাবে সাড়া দেয়।

সূত্র : আল জাজিরা



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews