মরক্কোর মুসলমানরা এ বছর ঈদুল আজহা কোরবানির পশু জবেহ ছাড়াই উদযাপন করবেন। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলেও চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট, কৃষি দুর্দশা এবং রাজকীয় নির্দেশনার কারণে এ বছর উত্তর আফ্রিকার এই দেশটিতে ভিন্ন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

রাজকীয় নির্দেশ ও খরা পরিস্থিতি

দ্য গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মরক্কোর রাজা মোহাম্মদ ষষ্ঠ নাগরিকদের কোরবানি থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন। রাজা তার বার্তায় বলেন, ছয় বছরের দীর্ঘ খরার কারণে মরক্কোর পশুপাল সঙ্কটের মুখে পড়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি ইসলামবিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ তৌফিক রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল আল আওলা-তে রাজকীয় বার্তাটি পড়ে শোনান। এতে বলা হয়, জলবায়ু সঙ্কট ও অর্থনৈতিক দুর্দশা মিলিয়ে ভেড়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে এবং পশু সংখ্যাও কমেছে।

রাজা, যিনি মরক্কোর সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ, চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘এই কঠিন পরিস্থিতিতে কোরবানি করা দেশের অনেক মানুষ, বিশেষ করে সীমিত আয়ের জনগণের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হবে।’ কোরবানির ধর্মীয় তাৎপর্য বজায় রেখে তিনি ঘোষণা দেন যে তিনি পুরো দেশের পক্ষ থেকে ঈদুল আজহার দিনে কোরবানি করবেন।

বাজার বন্ধ ও সরকারি ব্যবস্থা

ঈদের আগে মরক্কোর কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে পশুর বাজার বন্ধের নির্দেশনা জারি করে। সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, এর ফলে পশু বিক্রি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ৭ জুন শনিবার দেশটিতে ঈদ উদযাপিত হবে। যা সৌদি আরব ও ভারতের মতো অন্যান্য দেশের তুলনায় একদিন পর।

মরক্কো একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যেখানে ৯৯ শতাংশ জনগণ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। দেশটির সংবিধান ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

অর্থনৈতিক চাপে কোরবানি অসম্ভব

গত সাত বছরের খরা ও স্থায়ী মুদ্রাস্ফীতির কারণে মরক্কোর ভেড়ার পাল ৩৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে পশুর দাম বেড়ে যায়। গত বছর একেকটি ভেড়ার দাম প্রায় ৬০০ মার্কিন ডলার ছুঁয়েছিল, যা মরক্কোর মাসিক ন্যূনতম মজুরি ৩২৪ ডলারের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। অলাভজনক সংস্থা মরোক্কান সেন্টার ফর সিটিজেনশিপ পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ৫৫ শতাংশ পরিবার ভেড়া কেনার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।

২০২৫ সালের বাজেটে মরক্কো সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে গবাদি পশু ও ভেড়ার ওপর আমদানি শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর স্থগিত করেছে।

আগেও ছিল এমন নজির

এই প্রথম নয় যে রাজকীয় নির্দেশে কোরবানি বন্ধ হলো। মরক্কোর মরহুম রাজা হাসান দ্বিতীয় তার শাসনকালে তিনবার ঈদুল আজহায় পশু বলি স্থগিত করেছিলেন যুদ্ধ, খরা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আরোপিত কঠোর শর্তের সময়।

এই নিষেধাজ্ঞা মরক্কোর মুসলিম সমাজের কাছে এক বিরল। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে ব্যাখ্যাযোগ্য সিদ্ধান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কঠিন অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পশু কোরবানি এ বছর বাদ দিলেও, ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান জানাতে রাজা নিজেই পুরো জাতির পক্ষ থেকে কোরবানি দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

সূত্র : মিন্ট



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews