ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ মামলা করার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১০ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যমটিকে এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের ভাষণ বিকৃতভাবে সম্পাদনা ও প্রচারের অভিযোগে বিবিসির শীর্ষ দুই কর্মকর্তার পদত্যাগের পরই এই হুমকি দেওয়া হলো। বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ট্রাম্পের আইনজীবীদের দেওয়া ওই চিঠিতে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত বিবিসিকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সংবাদমাধ্যমটিকে ট্রাম্পের বক্তব্য থাকা তথ্যচিত্রটি প্রত্যাহার করতে, ক্ষমা চাইতে এবং ‘যথাযথভাবে ক্ষতিপূরণ’ দিতে বলা হয়েছে। তা না হলে ফ্লোরিডার আদালতে কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ ও মানহানির মামলা করবেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পকে নিয়ে বিবিসির ওই তথ্যচিত্রের নাম প্যানোরামা। এতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের দুটি অংশ এমনভাবে জোড়া লাগানো হয়েছিল যে মনে হয়, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে হামলায় সমর্থককে বেপরোয়াভাবে উৎসাহিত করেছিলেন তিনি। এই তথ্যচিত্র নিয়ে নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
বিবিসির সাবেক পরামর্শক মাইকেল প্রেসকট তাদেরই একটি অভ্যন্তরীণ নথি সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের কাছে ফাঁস করলে, তথ্যচিত্রের বিষয়টি সামনে আসে। ওই নথিতে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলা, ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু ও ট্রাম্পের একটি বক্তব্য নিয়ে বিবিসির পক্ষপাতের বিষয়গুলো উল্লেখ ছিল। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে টেলিগ্রাফ। এপর থেকেই শুরু হয় সমালোচনা।
বিবিসির অভ্যন্তরীণ এক ফাঁস হওয়া নথিতে স্বীকার করা হয়, সম্পাদনার কারণে দর্শকদের কাছে ভুল বার্তা গেছে। এরপরই সংস্থার দুই শীর্ষ কর্মকর্তা—নিউজ সিইও ডেবোরা টারনেস এবং মহাপরিচালক টিম ডেভি—রবিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এমনকি সোমবার ট্রাম্পের ওই বক্তব্য সম্পাদনা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহ। তিনি বলেন, এই সম্পাদনা বিভ্রান্তিকর ধারণা সৃষ্টি করেছে। এটি ‘বিবেচনাগত ভুল’ ছিল। তিনি আরও বলেন, বিবিসির প্রতি মানুষের যে আস্থা রয়েছে, তা ফিরিয়ে আনতে এবং সাংবাদিকতার সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে সংবাদমাধ্যমটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে শাহ ব্রিটিশ সংসদের সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও ক্রীড়া কমিটিতে পাঠানো চিঠিতে দাবি করেন, ‘এটা সত্য নয় যে বিবিসি কোনও বিষয় গোপন রাখতে চেয়েছিল। আমরা মেমোতে উত্থাপিত উদ্বেগগুলো মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিবিসি নিউজ বিভাগের উদ্দেশ্য ছিল ট্রাম্পের বক্তব্যের বার্তা তুলে ধরা, যাতে দর্শকরা বুঝতে পারেন, “তার সমর্থকরা ভাষণটি কীভাবে গ্রহণ করেছিল এবং ঘটনাস্থলে তখন কী ঘটছিল।’
তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘পেছন ফিরে তাকালে বলা যায়, এ ঘটনায় আরও আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।’
ট্রাম্পের পাঠানো আইনি নোটিশে বিবিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, তারা তার সম্পর্কে ‘মিথ্যা, মানহানিকর, বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক বক্তব্য’ প্রচার করেছে। ট্রাম্পের আইনজীবী আলেহান্দ্রো ব্রিটো আরও অভিযোগ করেছেন, বিবিসি ফ্লোরিডা রাজ্যের মানহানি সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করেছে।