২০২১ সাল। শিগগিরই দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্সির জন্য শপথ নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট গত চার বছরে ভালোই বুড়ো হয়েছেন। আগের মতো জনসভায় যান না, গেলেও মেয়ে ইভাংকার বাহুতে ভালোভাবেই ভর রাখতে হয়। তবু সৌভাগ্য ট্রাম্পের, এবার তাঁকে ভোটে জেতার জন্য বেশি প্রচার-প্রচারণা চালাতে হচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি জনপ্রিয়তাই পেয়েছেন। করের বোঝা অনেক হালকা করেছেন, মানুষ এখন আরো বেশি ভোগ করতে পারছে, সরকারের ঘাটতি বাজেটের জাদুটাই এমন। ট্রাম্পের আমলে মজুরি বেড়েছে, বিশেষ করে কলেজ ডিগ্রিহীন তরুণদের। মুল্যস্ফীতি যদিও হচ্ছে, তা ধর্তব্য নয়। প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা গলা উঁচিয়েই বলছেন, সব কৃতিত্বই ট্রাম্পের রক্ষণশীল অভিবাসননীতি ও ট্রাম্পওয়ার্কস অবকাঠামো কর্মসূচির।

প্রেসিডেন্টের নিন্দুকেরা এখনো আছেন, তাঁদের কথা কানে তোলে কে! ২০১৬ সালের নির্বাচন ছিল রুশদের হ্যাকিংয়ের ফসল—এই অভিযোগের তদন্ত সিনেট যদিও করেছে, পক্ষপাতদুষ্টতার দরুন উপসংহার আর আসেনি। ট্রাম্পের ব্যাপারস্যাপার নিয়ে ওয়াশিংটনে অনেক কানাঘুষা চললেও আমেরিকার সাধারণ মানুষের এত কিছু শোনার সময় কই! এখনো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিয়মিত টুইটার স্ট্যাটাস দেন, কোথায় কী নতুন কারখানা খুলছে। ধুরন্ধর ব্যবসায়ীরা তার সুবিধাও নেন। বেশির ভাগ মার্কিনের কানে যায়, চার বছরে প্রেসিডেন্ট ও তাঁর আত্মীয়স্বজন আরো অনেক অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ তো অভিযোগই; কারণ প্রেসিডেন্ট হয়েও ট্রাম্প কখনোই তাঁর আয়কর রিটার্ন জমা দেননি।

ব্যবসায়ী সমাজও ট্রাম্পের এ কথা সমঝে চলেন। গুজব আছে, ট্রাম্প বড় এক ঠিকাদারকে ডেকে বলেছেন, ‘আপনারা আমার জন্য কাজ করবেন, আর কোনো কথা নয়, ব্যস!’

গণমাধ্যমও এখন অনেক ট্রাম্পফ্রেন্ডলি। এটিঅ্যান্ডটি ও টাইম ওয়ার্নার কম্পানি একীভূত করার প্রস্তাবটি এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই এক বছরে সিএনএন যথেষ্ট চেষ্টা করেছে, ট্রাম্পের চোখে বস্তুনিষ্ঠতা কী তা বুঝতে। ওয়াশিংটন পোস্ট  মূলধারার সাংবাদিকতা কমিয়ে অনলাইনে তারা মিউনিসিপালের রাজনীতি ও লাইফস্টাইলের ওপর জোর দিয়েছে।

ট্রাম্পবিরোধী গণমাধ্যমগুলোর পাঠক-শ্রোতা এখনো অভিজাত সমাজে সীমিত। তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এখনো পুলিত্জার জেতে, সাংবাদিকরা এখন অংশ নেন দুর্নীতি, ডিজিটাল সাংবাদিকতার মান, ন্যাটোর মৃত্যু ও জনপ্রিয় কর্তৃত্বপরায়ণতার উত্থানবিষয়ক সেমিনারে। পত্রিকা বা টিভির দরকার ট্রাম্পেরও পড়ে না; সাধারণ মানুষ টুইটারের মাধ্যমেই প্রেসিডেন্টের যাবতীয় বার্তা পেয়ে যায়।

প্রথম মেয়াদের চার বছরে ট্রাম্পের অনেক ইচ্ছাও পূরণ অবশ্য হয়নি। যেমন অভিবাসী খেদাও পরিকল্পনা! বাইরে থেকে এসেছ, বাইরের থাকো; আমাদের রাজনীতিতে মাথা গলাবে না, নাক-মুখ গুঁজে শুধু কাজ করে যাবে—এই শর্তে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

আমাদের এই আটলান্টিক সাময়িকীর প্রতিষ্ঠাতা জেমস রাসেল লয়েল ১৮৮৮ সালে এক ভাষণে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলেন, সংবিধান নিজের মতো করেই সচল থাকে, যে ধারণা রয়েছে, তা ঠিক না। লয়েল সত্যিই বলে গেছেন, ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ এখন প্রতীকী বিষয় হয়ে গেছে, এই কর্মপদ্ধতি এই যুগে অচল।

হ্যাঁ, পাঠক ওপরে যেসব দৃশ্য কল্পনা করা হলো, এমনকি লেখায় আরো যা বলব, সবই সম্ভব যদি ট্রাম্প ছাড়া আর সব মানুষ এগুলো মেনে নেয়। সাধারণ মানুষ থেকে সরকারি কর্মকর্তারা চাইলেই সময়ের এই ঘড়ি থামানো সম্ভব, নতুবা নয়। চার্লস ডিকেনসের লেখা গোস্ট অব ক্রিস্টমাস ইয়েট টু কামে বলা গল্পটি ছিল এমন কিছু নিয়ে, যা ঘটবে না, আবার ঘটা অসম্ভবও নয়। অনেক পথই খোলা রয়েছে। আমেরিকানদেরই ঠিক করতে হবে তাদের দেশ কোন পথে যাবে।

কোনো সমাজ, এমনকি এই ধনী, অভিজাত আমেরিকাও, নিশ্চিত করে বলতে পারে না ভবিষ্যৎ কী নিয়ে তাদের অপেক্ষা করছে। স্ট্যানফোর্ডির সমাজবিজ্ঞানী ল্যারি ডায়মন্ড বলেছেন, গত দশকটিই ছিল গণতান্ত্রিক পতনকাল। বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংখ্যা কমেছে। গণতন্ত্র এখনো বিদ্যমান—এমন দেশগুলোতেও শাসনব্যবস্থার অধঃপতন ঘটেছে। যেমন হাঙ্গেরি! ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে, ইসির মানবাধিকার সনদে অনুস্বাক্ষর করেও দেশটি স্বাধীন দেশের মর্যাদা থেকে সরে যাচ্ছে। হাঙ্গেরির ভিক্টর ওরবান, ভেনিজুয়েলার প্রয়াত হুগো শাভেজ, দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাকব জুমা—তাঁরা সবাই উদার গণতন্ত্র থেকে চৌর্যতন্ত্রের (ক্লেপটোক্রেসি) পথে হেঁটেছেন।

এই সরে যাওয়ার কাজটি হচ্ছে অহিংসভাবে; অনেক ক্ষেত্রে বিনা নাটকীয়তায়। বিরোধীপক্ষকে খুন কিংবা জেলে পোরা হয়নি, বড়জোর হয়রানি করা হয়েছে। আদালতগুলোও সরকার সমর্থকে ভরা। সরকারের কাছের মহলগুলো অর্থে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে।

আসলে গণতন্ত্রের পতনের এই যুগে মুসলিম বিশ্বের বাইরের দেশগুলোতে কোনো তন্ত্রই প্রবলভাবে নেই। উত্তর কোরিয়া ও কিউবা কর্তৃত্বপরায়ণই রয়ে গেছে। ডেমোক্রেসির বদলে এখন জনপ্রিয় হচ্ছে ক্লেপটোক্রেসি—যেখানে শাসক আদর্শ বিশেষ নয়, লোভে তাড়িত হচ্ছেন। সন্ত্রাস নয়, বরং তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়ে ও অভিজাত শ্রেণিকে পাশে রেখে শাসকরা ক্ষমতায় টিকে থাকছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে এখনো গণতন্ত্র শক্তিশালীভাবেই রয়েছে। কিন্তু এখানেও প্রশাসনের অন্দরমহলে নানা ত্রুটি। ব্রিটেনের একজন প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন খুইয়ে ফেললে কয়েক মিনিটে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের ইচ্ছার শক্তি অনেক বেশি। দুর্বলতা আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো কোনো ব্যক্তি প্রেসিডেন্টের কুরসিতে আসীন হয়ে যান।

লেখক : দ্য আটলান্টিক সাময়িকীর সিনিয়র সম্পাদক, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ

বুশের বক্তৃতা লেখক

ভাষান্তর : গাউস রহমান পিয়াস



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews