বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক ছিলেন গোলপোস্টের নিচে অতন্দ্র প্রহরী। ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন ২০১০ সালে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাত ধরে ২০১৪ সালে দলে যোগ দেন। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক তিনি। মহানগর উত্তরের আগের দু’ কমিটিতে সদস্য সচিব ছিলেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে জেল খেটেছেন চারবার। দেশের চলমান রাজনীতি ও খেলাধুলায় বিএনপির ভবিষ্যত ভাবনা নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেছেন আমিনুল হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নয়া দিগন্তের অনলাইন প্রতিবেদক অসীম আল ইমরান

নয়া দিগন্ত : খেলাধুলা নিয়ে বিএনপির ভবিষ্যৎ ভাবনা কী?

আমিনুল হক : সৃজনশীলতার নামে আমাদের সন্তানদের ওপর আওয়ামী সরকার একটা জুলুম চাপিয়ে দিয়েছিল। মনে হতো, বইয়ের ব্যাগের চাপে পৃষ্ট হচ্ছে ছোট ছোট বাচ্চারা। আমরা নতুন শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করতে চাই। প্রতিটি স্কুলে খেলাধুলা বাধ্যতামূলক করব। অলিম্পিক ও সাউথইস্ট গেমসে যে ইভেন্টগুলো রয়েছে, বিশেষ করে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ব্যাটমিন্টনসহ আট থেকে ১০টি খেলা স্কুলে বাধ্যতামূলক করা হবে। বাংলা, ইংরেজি, অঙ্কের জন্য যেমন মার্কস পেতে হয়, তেমনি প্রত্যেকটা ইভেন্টের জন্য আলাদা করে মার্কস পেতে হবে। প্রত্যেকটা খেলার জন্য আলাদা আলাদা একজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। এই শিক্ষকরা হবেন স্ব স্ব খেলার জন্য এক্সপার্ট এবং জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়। আমরা এমন কাউকে নিয়োগ দেবো না, যে ওই খেলা কখনো খেলে নাই। আগামী দিনে বিএনপির একটা স্পোর্টস ইউনিভার্সিটি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে স্কুল, মাদরাসার খেলাধুলা বিষয়ক শিক্ষক বা প্রশিক্ষকের কোয়ালিটি মেইনটেইন করা হবে। মাদরাসা ও স্কুলগুলোতে খেলাধুলা বাধ্যতামূলক করলে একদিকে যেমন সুস্থ জাতি গড়ে তোলা যাবে, তেমনি ভবিষ্যতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বদ্ধপরিকর। এখানে নতুন করে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। খেলোয়াড়দের অবসরে যাওয়ার পর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। স্পোর্টস ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে এখানে আমরা এই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই। ক্রীড়াঙ্গন এমন একটি জায়গা, যেখানে দল মত নির্বিশেষে জাতিকে একটি জায়গায় নিয়ে আসতে পারে। এটা শুধু ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে আমাদের ভাবনা। ৩১ দফা রুপরেখায় আমরা আংশিক পরিকল্পনা তুলে ধরেছি।

নয়া দিগন্ত : আপনি খেলা থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতিতে এসেছেন। অনেকে খেলা চলাকালে রাজনীতিতে আসছেন-এ বিষয়টা কিভাবে দেখছেন?

আমিনুল হক : ফুটবল খেলা থেকে অবসর নিয়েই আমি রাজনীতিতে এসেছি। দলে একজন কর্মী হিসেবে আমার রাজনীতি শুরু। কিন্তু মাশরাফি ও সাকিব রাজনীতি করে নয়, একেবারে ‘রেডিমেড’ হিসেবে এসেছেন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা তাদের ইমেজ বা ব্রান্ডভ্যালু ব্যবহার করেছে। জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো যখন নির্বাচন বর্জন করল, তখন মাশরাফি-সাকিব বা চলচ্চিত্রের অনেককে এনে হাসিনা বলেছে, দেখো আমার সাথে এরা আছে। তারা এসেছে অবৈধ সংসদের ৩০০ জনের একজন হয়ে। মাশরাফি-সাকিব শুধু আওয়ামী-বিএনপির না, তারা সারা বাংলাদেশের। চলচ্চিত্র জগতের সবাই কিন্তু সারা বাংলাদেশের। তাদের মাথায় রাখা উচিত ছিল-স্বৈরাচার সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তারা যেখানে যাচ্ছে সেখানে জনগণের ভোটের কোনো অংশগ্রহণ নাই। ফলে তারা নিজেরাই নিজেদের অনেক ছোট করে ফেলেছে। ২০০৯ সালে এমপি হওয়ার সুযোগ আমার কাছেও এসেছিল। আরিফ খান জয় আমার সাথে খেলেছে, সে সুযোগটা লুফে নিয়েছিল। কিন্তু আমি খেলোয়াড় থাকায় তখন প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছিলাম।

নয়া দিগন্ত : ৫ আগস্টের পর মাশরাফি-সাকিবের নামে হত্যা মামলা হয়েছে বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

আমিনুল হক : ৫ আগস্টের পর যে হত্যা মামলা হয়েছে, সেটা অবশ্যই যৌক্তিক। গত ১৬ বছর বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা, লুটপাট করেছে আওয়ামী লীগ। জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার দায় তো মাশরাফি-সাকিবের ওপর অবশ্যই পড়ে। এখন অনেকে তাদের খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করার চেষ্টা করছে। আমিও চাই না কোনো ক্রীড়াবিদের ওপর নির্যাতন হোক, যেটা আমার ওপর হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তারা অবৈধ সংসদের তিন শ’ জনের একজন ছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে রাষ্ট্র ও জনগণ নেবে। জুলাই আন্দোলনসহ সব হত্যার বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবে।

নয়া দিগন্ত : ঢাকা শহরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ‘কিশোর গ্যাং’ বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন কথা শোনা যাচ্ছে-এ বিষয়ে আপনি কী ভাবছেন?

আমিনুল হক : কিশোর গ্যাংয়ের ইস্যু জুলাই আন্দোলনে সামনে এসেছে। গত ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারের কমিশনাররা এই কিশোর গ্যাং লালনপালন করেছে এবং তাদের হাত ধরেই গ্যাংয়ের উৎপত্তি। ৫ আগস্টের পর এই কিশোর গ্যাং অনেক অপরাধে জড়িয়ে পরেছে। কিন্তু বিএনপি শতভাগ জিরো টলারেন্স দেখিয়ে এটাকে দমনের চেষ্টা করছে। আমরা হাসিনা মুক্ত হতে পেরেছি কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান এখনো স্বৈরাচারের দোসর থেকে মুক্ত হয়নি। তারা বিভিন্ন জায়গায় বসে আছে। দোসরদের কারণে কিশোর গ্যাং বলেন বা অন্য অপরাধ বলেন সেগুলো মোকাবেলা করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। সেনাবাহিনী ও পুলিশ ইতোমধ্যে কিশোর গ্যাংয়ের অনেক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। জনগণের ভোটে আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ঢাকাসহ সারা দেশে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

নয়া দিগন্ত : আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শেল্টার দিচ্ছে বিএনপি এমন অভিযোগ উঠছে?

আমিনুল হক : এটা সত্য নয়। আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স। আওয়ামী লীগকে সেন্টার বা পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নাই।

নয়া দিগন্ত : বিএনপির অনেক নেতাকর্মী চাঁদাবাজি-দখলের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে, এমন অপর্কম এড়ানো যাচ্ছে না কেন?

আমিনুল হক : চাঁদাবাজি ও দখলের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জিরো টলারেন্স। আমি আমার জায়গা থেকে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছি। আমার এখানে যত অভিযোগ আসে, সেসব অভিযোগের ১০ শতাংশও সত্যতা পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি, বহিষ্কার করে দিচ্ছি। শুধু বহিষ্কার নয়, আইনিব্যবস্থাও নিচ্ছি। তবে বিএনপির নাম ব্যবহার করেও অনেক অপকর্ম করছে, আবার কোথাও বিএনপির কমিটি নাই কিন্তু কমিটির নামে চাঁদাবাজি করছে-এমন ঘটনাও অনেক আছে।

নয়া দিগন্ত : উত্তর বিএনপি তিনবার আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে, পূর্ণাঙ্গ করতে বাধা কোথায়?

আমিনুল হক : বিগত সময়ে বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আমরা ওয়ার্ড কাউন্সিল করেছি। কাউন্সিল করতে গিয়ে মামলা-হামলার শিকার হয়েছে। কিন্তু নেতাকর্মীদের বাঁচাতে সবার আগে থেকেছি। থানা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে বাকি রয়েছে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার পর বৃহত্তর পরিসরে কাউন্সিল করার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন ও কাউন্সিল সামনে রেখে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

নয়া দিগন্ত : ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি শক্তিশালী করতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আমিনুল হক : তৃণমূলকে সুসংগঠিত করতে ৭১টি ওয়ার্ডে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি নারীদের নিয়ে আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে কমিটির আকার হবে ৫০ জন। এক্ষেত্রে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, মসজিদের ইমামদের নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি করা হবে। তাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ কি চায়, তরুণ কি চায় বা স্থানীয় সমস্যাগুলো জানতে পারব এবং আগামীতে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধান করতে সহজ হবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews