নির্ভরযোগ্য গুজবে প্রকাশ

চারদিকে নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস। শান্তির দেশ বাংলাদেশ আজ অশান্ত। বাংলার আকাশে আজ বারুদের গন্ধ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কথামালা আর কৌতুকমালার রাজনীতি। মুখভর্তি কথা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তথাকথিত ফেরিওয়ালা বুদ্ধিজীবীরা।

অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলাদের সরব উপস্থিতি। গুজবের বাম্পার বিস্তার ঘটছে প্রতিনিয়ত। ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অভিযোগ। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতি জনসাধারণ আগের মতো আস্থা রাখতে পারছে না। সেলফ সেন্সরশিপের চাদর গায়ে দিয়ে নিউজ প্রকাশ করছে তারা এমন অভিযোগ উঠেছে গণমানুষের মধ্যে।

বাধ্য হয়েই অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ার দারস্থ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সেখানেও বিভ্রান্তি। চারদিকে গুজব। সবার মাঝে চাপা উত্তেজনা। একজন-আরেকজনকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বেলুন ফোটার শব্দ হলেও মানুষ দৌড়ে পালাচ্ছে। মানুষ ভাবছে অদ্ভুত উটের পিঠে চলছে স্বদেশ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নিয়মিত (একই দিন একাধিক টকশোতে উপস্থিত থাকেন) টকশো আলোচক ও সম্পাদক মন্তব্য করেছেন, গুম-খুন হামলা অরাজকতাসহ ধ্বংসাত্মক কাজগুলো তৃতীয় কোনো পক্ষকে পাশ কাটিয়ে চতুর্থ বা পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ কোনো পক্ষ ঘটাচ্ছে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে প্রকাশ্য দিবালোকে। এটা আমাদের বুঝতে হবে।

এর আড়ালে একটি পক্ষ আছে।

স্বাধীনতার স্বপক্ষের দাবিদার একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বিশ্লেষক বলেন, এ হামলা করেছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। এ হামলায় জড়িত ছিল প্রাপ্তবয়ষ্ক যুবকরা। তবে যুবতীরা তাদের কাজে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে। এরা ছিল স্বল্প প্রশিক্ষিত। ওই স্থলে বেশ কয়েকজন যুবতীকে রহস্যজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেথা গেছে হামলার আগে। তারা বোরকা পরা ছিল না। তাদের মাথায় বা বুকে ওড়না ছিল না। ওড়না গলায় ঝুলছিল। এ থেকে বোঝা যায়, তারা খুব মডার্ন বা উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তান। জাতির বিবেক জানতে চায় এরা করা?

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এ অবস্থায় পুলিশ মন্ত্রী, মহিলাদের রেড অ্যালার্ট ও পুরুষদের ইয়োলো অ্যালার্ট এবং আণ্ডা-বাচ্চাদের গ্রিন অ্যালার্ট থাকতে বলেছেন।

আরও বলেছেন, নিজের সুরক্ষা নিজেকেই করতে হবে। অর্থাৎ নিজের নিরাপত্তার চাদরের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। তারা কোনো দায়দায়িত্ব নেবেন না। এ মন্তব্যের পর নিরাপত্তার চাদরের দারস্থ হতে অনেককে দেখা গেছে। অনেকে বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছেন এবং ব্যক্তিগত দেহরক্ষী নিয়োগ করছেন।

অব দ্য রেকর্ড, হামলার সময় জনগণের বন্ধু পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ছিল। সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে নিরাপদে পালিয়ে যায়। এরা কারা? তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহল কথা বলতে রাজি হয়নি। উপর মহলের নির্দেশ ছাড়া তারা কথা বলতে পারবে না এমনটি জানিয়েছেন।

আন্দোলন সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, এ ধরনের হামলার সঙ্গে তারা যুক্ত নয়। তাদের ভাবমূর্তি জনগণের সামনে ক্ষুণ্ন করার জন্য এগুলো সরকার বা অন্য কোনো পক্ষ ঘটাচ্ছে। সেখানে হেলমেট পরা কিছু তরুণ ছিল, এরা কারা?

অভিজ্ঞ মহল মনে করে, এ ধরনের হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ও ভূ-রাজনীতির সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে। আবার নাও থাকতে পারে। তবে, সম্পর্ক থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

সংবেদনশীল সমাজ এ অবস্থাকে ভালো চোখে দেখছে না। দেশপ্রেমিক জনতা এ ধরনের ঘটনাকে অবশ্যই প্রতিরোধ করবে। বলেছেন, চেতনাকে জাগ্রত করতে হবে। চেতনাকে শাণিত করতে হবে। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এমন একটি সূত্র বলছে, এদের বিচার করা হবে বাংলার মাটিতে আজ হোক কাল হোক। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা বলেন, নো কমেন্ট। এ ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না।

সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তর থেকে বারবার বলা হচ্ছে, কেউ গুজবে কান দেবেন না। যে বা যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব রটিয়ে সহিংসতার আহ্বান জানানোর অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট’ (বাংলা নিউজটোয়েন্টিফোর.কম ৬-৮-২০১৮)।

সরকার শনাক্ত করেছে কিছু অনলাইন পোর্টাল ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সামাজিক যোগায়োগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে। জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসানের ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে মাসখানেক আগে। এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ তখন প্রকাশ পেয়েছিল। এখন হ্যাকড হয়ে যাওয়া আইডি থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই অভিনেতা। সেই গুজবে কান না দিতে সবাইকে অনুরোধ করেছেন। সরকার সব প্রাইভেট টিভি চ্যানেলকে বাধ্য করেছে সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের বেলা ২টার সংবাদ আবারও রাত ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে প্রচার করতে।

গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশনে বাধা দিয়ে গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা। তারা বলেছেন, দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, তা অনভিপ্রেত। কিন্তু এই ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা চাপা দেওয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে।

তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গুজবে কান না দেওয়ার যে পরামর্শ দিয়েছেন, আমরা তাতে একাত্মতা পোষণ করছি। কিন্তু গুজবের সৃষ্টি হয় তখনই, যখন তথ্য সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়। তথ্য গোপন করার কারণে গুজবের উর্বর ভূমি তৈরি হয়। সরকার ও সরকারের বাহিনী কী কারণে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে বাধা দিয়েছে, কী কারণে ক্যামেরা ভেঙেছে, কী কারণে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু সেটারই ফল হচ্ছে গুজব (প্রথম আলো অনলাইন ৫-৮-২০১৮)।’

জাতির বিবেক খ্যাত শিক্ষকরা বলছেন, তথ্য গোপন করতে চাইলে গুজব ছড়াবেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল ধারার মিডিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণের কারণেই এত বেশি গুজব ছড়াচ্ছে। গুজবকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন বিভিন্ন পক্ষ। তারপরও গুজব থেমে নেই। গুজব তার নিজস্ব নিয়মে এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। এত কিছুর পরও সাধারণ মানুষ নির্ভরযোগ্য গুজবকেই বিশ্বাস করছেন।

মাসুদ কামাল হিন্দোল : সাংবাদিক ও রম্যলেখক।
hindol_khan@yahoo.com



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews