নারী খেলোয়াড় কম কেন?



আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ

জোবেরা রহমান লিনু গিনেস বুকে বারবার নাম তুলে ইতিহাসই তৈরি করেছেন। তিনি ১৬ বার জাতীয় টেবিল টেনিসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশকে ভালোভাবেই তুলে ধরছেন সালমা খাতুনেরা। নারী ক্রীড়াবিদদের হাত ধরে বাংলাদেশ কম সাফল্য পায়নি। দৌড়ে দ্রুততম মানবী নাজমুন্নাহার বিউটি। দক্ষিণ এশিয়ান ১২তম এসএ গেমসে সীমান্ত এবং শীলা স্বর্ণ জিতে ইতিহাস রচনা করেছেন। খেলার ঝুলিতে এরকম অসংখ্য সাফল্য রয়েছে এখন বাংলাদেশের নারীদের। তবে খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহণ আশানুরূপ বাড়েনি। আর যেটুকু অংশগ্রহণ হয়েছে তারও অধিকাংশ গ্রামীণ এবং দরিদ্র পরিবারের মাঝেই। শিক্ষিত এবং অবস্থাস¤পন্ন পরিবারের মেয়েদের এখনো সেভাবে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। তবে নারীরা ফুটবল, ক্রিকেট, ভারোত্তোলন, সাঁতার, টেবিল টেনিসসহ নানা ধরনের খেলাধুলায় সুনাম অর্জন করছেন।

পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, জাতীয় পর্যায়ে খেলাধুলায় অংশ নেওয়া নারীদের ৮০শতাংশের বেশি আসেন মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। তাঁদের স্বপ্ন থাকে, খেলায় দক্ষতা দিয়ে চাকরি পেয়ে পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা। কিন্তু চাকুরি পাওয়ার হার খুব কম। আর্থিক এই অনিশ্চয়তাই খেলাধুলায় নারীদের কম আসার প্রধান কারণ। এছাড়া মৌলিক চাহিদার জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা, লিঙ্গবৈষম্য, পরিবারের বিরোধিতা এবং অসহযোগিতা, নারীদের বিশেষায়িত ক্লাব না থাকা, নিয়মিত টুর্নামেন্ট না হওয়া এবং অনুশীলনের জায়গার অভাব। গবেষণায় দেখা যায় যে, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা নারী খেলোয়াড়দের বেশির ভাগেরই লক্ষ্য থাকে, আনসার ভিডিপি, পুলিশ, বিজেএমসি সার্ভিস টিমে খেলা, যাতে তাঁরা এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে পারেন এবং ভালো প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজেকে আরও দক্ষ করতে পারেন। তাঁদের জন্য সাধারণ পুষ্টিস¤পন্ন খাবার কেনাও কষ্টসাধ্য বিষয় হয়। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। বেশিরভাগ নারী খেলোয়াড়েরা খেলতে আসেন কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়া। এ জন্য তাঁরা প্রশিক্ষণের উপযুক্ত স্থানের সংকট, ঘরের কাজে সময় দেওয়া ও নিরাপত্তাহীনতাকে দায়ী করেন। দেখা যায় যে, ক্রীড়াক্ষেত্রে নারী খেলোয়াড়দের যে পরিমাণ ত্যাগ, তার বদলে যথেষ্ট সম্মান ও মর্যাদা তাঁরা পান না।

নারীরা খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত থাকলে বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে শিক্ষার হার, নেতৃত্বগুণ বাড়ানো ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটানো যাবে। ফলে নারীর ক্ষমতায়ন হতে পারে। খেলাধুলায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়লে অনেক অসামাজিক কার্যক্রম কমে যাবে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞগণ বলেন, খেলাধুলা নারীদের শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য অর্জনের পাশাপাশি মানসিক বিকাশেও যথেষ্ট সহায়ক। খেলাধুলা আত্মবিশাসী করে তোলে। সুস্থ এবং গঠনমূলক চিন্তা করতে খেলাধুলা ভূমিকা রাখতে পারে।

ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে সরকার যেমন সুযোগ-সুবিধা করে দিচ্ছে, অ্যাথলেটিকসেও তেমনটা দরকার। নারীদের জন্য ভলিবল, বাস্কেটবল, হকি, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদিতে বিশেষ সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অনেক মেয়েরই খেলাধুলায় আগ্রহ আছে। খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে ক্লাবগুলোর জন্য নারী দল রাখাটা বাধ্যতামূলক করা যায়। নারী খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়াতে বিদ্যালয়ের বড় ভূমিকা নিতে হবে।

দামুরহুদা, চুয়াডাঙ্গা থেকে





Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews