শহীদুল্লাহ্ কায়সারকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘শহীদুল্লাহ কায়সার: সংশপ্তক’ এর প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনাতয়নে হয় এই অনুষ্ঠানটি।
তোফায়েল বলেন, “সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে হয়েও তিনি তার জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য। তিনি তো মানুষ নন, ছিলেন এক মহামানব।”
শহীদুল্লাহ্ কায়সারের স্মৃতিকথা ‘রাজবন্দীর রোজনামচা’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তিনি বারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন, জেল খেটেছেন। কী এক জীবন তার! বিলাসী জীবন ত্যাগ করে এসে তার লক্ষ্যই ছিল গরিব দুঃখী মানুষের জন্য কাজ করা।”
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহীদুল্লাহ্ কায়সারের ভূমিকাও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন তোফায়েল আহমেদ।
“সে সময় দুজন মানুষ আমাকে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছিলেন, সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন ও শহীদ ভাই। পাকিস্তানের পত্রিকা, টিভি আর রেডিওগুলো তো আমাদের খবর প্রচার করত না। কিন্তু সংবাদ ও ইত্তেফাক তখন বড় ভূমিকা পালন করেছিল। তার পেছনে দুজন মানুষের ছিল বড় অবদান।”
একই অনুষ্ঠানে শহীদুল্লাহ কায়সারের বন্দনায় মেতে উঠেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মনীরুজ্জামান, ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক শাহীন রেজা নূর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী।
শহীদুল্লাহ্ কায়সারের স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক পান্না কায়সারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মেয়ে শমী কায়সার।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, “আমি কখনও শহীদুল্লাহ্ কায়সারকে দেখিনি। তার সঙ্গে আমার একমাত্র পরিচয় ‘সংশপ্তক’ উপন্যাসের মাধ্যমে। এই উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে আমার টলস্টয়ের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ এর সেই বিশাল ক্যানভাসের কথাই মনে পড়ে।
“পড়তে পড়তে আমার মনে হল, আমরা তো সত্যি তার তেমন খোঁজখবর করিনি, তার স্মৃতিতর্পন ইত্যাদি করা হয়নি।”
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সারোয়ার আলী।
শহীদুল্লাহ্ কায়সার ১৯৫৮ সালে যখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে সংবাদে যোগ দেন তখন তোয়াব খান ছিলেন পত্রিকাটির বার্তা সম্পাদক। তার বক্তব্যে উঠে আসে শহীদুল্লাহ্ কায়সারের সাংবাদিক জীবনের নানা ইতিবৃত্ত।
খন্দকার মনীরুজ্জামান বলেন, “শহীদ ভাই ও সংবাদ এক অবিচ্ছিন্ন সত্তা। তিনি ছিলেন আমাদের বড় ভরসার জায়গা, যার অভাব এখনও অনুভব করি আমরা। সাংবাদিক, রাজনৈতিক পরিচয় ছাপিয়ে তিনি ছিলেন এক অসাধারণ সংগঠক। এক কথায় বলব, একজন ভার্সেটাইল জিনিয়াস ছিলেন তিনি।”
শমী কায়সার জানান, তার নির্মিত ৪৫ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রে প্রয়াত সাংবাদিক বজলুর রহমান, মুহম্মদ তকীয়ুল্লাহ্, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, শাহরিয়ার কবির, সাহিত্যিক রাজিয়া খান, শিল্পী হাশেম খান ও গণতন্ত্রী পার্টির সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলামের সাক্ষাৎকার রয়েছে।
শমী বলেন, “বাবাকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে মনে হল এ এক বিশাল জগত। ছোট্ট ফ্রেমে কোথা থেকে শুরু করব, তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বাবাকে আমি নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম।
“বাবাকে ঠিক যতটুকু উপস্থাপন করা দরকার, ঠিক ততটুকুই আমি প্রামাণ্যচিত্রে উপস্থাপন করেছি। তার রাজনৈতিক জীবন, জেলজীবন, সাহিত্য জীবনকে তরুণ প্রজন্মের উপযোগী করেই আমি উপস্থাপন করেছি।”
