বাবাকে নিয়ে আমার ছোটবেলার কোনো স্মৃতি নেই। জন্মের মাত্র এক মাস পরেই তিনি বিদেশে চলে যান। যখন হাঁটতে শিখছি, কথা বলতে শিখছি, তখন ‘বাবা’ বলতে কিছুই বুঝতাম না। আমার শিশুমনে বাবা ছিলেন শুধুই গল্পের চরিত্র, যাঁকে সবাই শুধু নামেই চেনেন, কিন্তু আমি ছুঁয়ে দেখতে পারি না।
জীবনে বাবার প্রত্যাবর্তন ঘটে সাত বছর বয়সে। দেশে ফিরে তিনি ঢাকায় একটা চাকরি নেন। গ্রামে পড়ালেখা হবে না ভেবে আমাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সেই থেকে শুরু আমাদের একসঙ্গে পথচলা। এখন আমার বয়স ২৪। এতটা সময় পেরিয়ে এসেছি, কিন্তু জীবনের প্রতিটা বাঁকে, প্রতিটা কঠিন সময়ে বাবা পাশে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর এই প্রথম তাঁর কাছ থেকে দূরে থাকা। এই দূরত্বই যেন প্রতিটা মুহূর্তে আমাকে বুঝিয়ে দেয়, যাঁকে সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছি, যাঁর জন্য সবচেয়ে বেশি অগোচরে কেঁদেছি, তিনি আমার বাবা।
চেহারায়, গায়ের রঙে, আচরণে—আমাদের মধ্যে বাহ্যিক কোনো মিল নেই। কেউ দেখলে বলবে না আমরা বাবা-ছেলে। কিন্তু মনের গভীরে এক অদৃশ্য যোগসূত্র যে কত দৃঢ় হতে পারে, তা বোঝার জন্য কোনো রক্তের নমুনা লাগে না। বাবা সব সময় চেয়েছেন আমি যেন স্বাবলম্বী হই, বাস্তবতা বুঝে জীবন গড়তে শিখি। হাতে গুনে টাকা দিতেন, যেন বুঝেশুনে খরচ করি। কিন্তু পড়াশোনা বা প্রয়োজনীয় কিছুতে কখনোই কার্পণ্য করেননি, দরকার হলে ধার করে হলেও প্রয়োজন মিটিয়েছেন।