বছর ঘুরে ফিরে এলো প্রতিপাদ্যভিত্তিক বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৮। পুরো বিশ্বকে পুষ্টিসম্মত ক্ষুধামুক্ত করে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করার লক্ষে জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতি সংঘের সদস্য দেশগুলো একসাথে বাৎসরিক এ দিবসটি আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সাথে পালন করে।

এবারের প্রতিপাদ্য কর্মে গড়ে ভবিষ্যৎ, কর্মেই গড়বে ২০৩০ এ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব। ইংরেজিতে Our actios are our Future. A Zero hunger World by 2030 is possible । আমাদের বিশ্বাস আামদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়বোই। গর্বের সাথে বলতে পারি তার অনেক আগেই বাংলাদেশ সার্বিকভাবে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত হবেই।

চলমান কার্যক্রম পরিকল্পনা প্রচেষ্টা আর অর্জন প্রমাণ করে আমরা করতে পারবো। ১৯৭১ সালে যেখানে আামাদের মোট দানাদার ফসল উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিকটন। ৪৫ বছর থেকে প্রতিবছর কৃষি আবাদি জমি কমে গেলেও আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি আামদের দানাদার খাদ্যের উৎপাদন এখন ৪ কোটি মেট্রিকটন ছাড়িয়ে গেছে। এটা সম্ভব হয়েছে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার যোগ্য গতিশীল কৃষিবান্ধব নেতৃত্বের কারণে। আর মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সুযোগ্য নির্দেশনা আর গাইডলাইন অনুসরণে। শুধু কি তাই বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়ন এখন পুরো বিশ্বে কৃষি উন্নয়নের রোল মডেল। আমরাও গর্বের সাথে বলি এদেশের গর্বিত নাগরিক আমরা।

বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপন শুরু হয় ১৯৮১ সনে প্রথম আনুষ্ঠানিকতা আর প্রতিপাদ্যভিত্তিক ইস্যু নিয়ে। ১৯৪৫ সনের ১৬ অক্টোবর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা FAO (Food and Agricultural Organisation) প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্যের জোগান, দরিদ্র ও পুষ্টিহীনতা দূর করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে FAO তাদের কার্যক্রম শুরু করে।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ পৃথিবীর প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে এখন প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যের অভাবে দরিদ্রের কষাঘাতে ধুঁকে মরছে। তাইতো FAO চেষ্টা চালাচ্ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে, খাদ্য মূল্য বৃদ্ধি , দারিদ্র্যতা, অসম খাদ্য বণ্টন এসবের কারণে এটি ২০৫০ সালের আগে অর্জিত হবে না বলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রধান জানান।

খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনসহ দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান, বেকারত্ব কমানো ও নাগরিকের জীবনমানের উন্নয়ন দারিদ্র্যবিমোচনের অন্যতম হাতিয়ার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রণীত রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে কৃষি উন্নয়নে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ও গ্রামীণ উন্নয়নের পাশাপাশি দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য প্রতিটি মানুষকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মূল্যায়নে বলা হয়, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এরই মধ্যে যথেষ্ট উন্নতি করলেও প্রায় ৪ কোটি মানুষ এখনও খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে আছে। পাশাপাশি গরিব ও বিত্তবানদের মধ্যে পুষ্টি বৈষম্য বেড়েই চলেছে। দারিদ্র্য নিরসনে গত ২ দশকের বেশি সময়ে নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতিতে অগ্রগতি হয়েছে। শিশু ও মাতৃপুষ্টি নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বয়স অনুযায়ী শিশুর উচ্চতা ও ওজনে এখনও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় একটি ঝুঁকি অপরিকল্পিত নগরায়ণ শিল্পায়ন এবং আধুনিকায়ন। এতে বেশকিছু কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। কর্মসংস্থানের অভাবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বিরাট একটি অংশ বিদেশে পাড়ি জমানোর পাশাপাশি গ্রাম ও মফস্বল ছেড়ে শহরমুখী হয়ে পড়ছে। অথচ গ্রামীণ উন্নয়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও গ্রামীণ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এ ধরনের অভিবাসন রোধ করাসহ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর শহরমুখী প্রবণতাকেও রোধ করা সম্ভব। সে লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কৃষি উন্নয়নে কর্মদক্ষতা বাড়ানোর বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করছে।

গ্রামীণ উন্নয়ন ও দারিদ্র্যবিমোচনে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার অত্যন্ত সফল। দারিদ্র্যবিমোচন সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০১৫ সালেই Millennium Development Goals এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে। যেখানে বিগত ১৯৯১ সালে দরিদ্র্যতার হার ৫৭ শতাংশ, সেখানে ২০১৬ সালে তা কমে ২৪.৮ শতাংশ। মাথাপিছু খাদ্য গ্রহণের হারও বেড়েছে।

গ্রামীণ পর্যায়ে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সঠিক বিক্রয়মূল্য নিশ্চিতকরণ ও কর্মসৃজনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার দেশব্যাপী বাজার অবকাঠামো নির্মাণ করছে। অপ্রচলিত ফসলগুলো চাষাবাদ বৃদ্ধিকরণ এবং কৃষিভিত্তিক ব্যবসা সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে ৭.৫ বিলিয়ন টাকা দেশব্যাপী বিতরণ করেছে যা গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে এবং এসব উদ্যোগ আমাদের নবীন কৃষককে কৃষির প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলছে। কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকের কাছে বীজ, সার, সেচ, কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য করতে নিয়মিত ভর্তুকি ও প্রণোদনা কর্মসূচি পরিচালনার পাশাপাশি নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে যৌক্তিক পুনর্বাসন সেবা প্রদান করে যাচ্ছে নিয়মিত।

যেহেতু কৃষি প্রধান বংলাদেশের শ্রমশক্তির প্রায় ৪৭ শতাংশ এখনও কৃষির ওপর নির্ভরশীল এবং এই শ্রমশক্তির সিংহভাগই প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে বিস্তৃত, দেশের অভিবাসন সমস্যা নিরসনে গ্রামীণ শ্রমশক্তির আর্থসামাজিক উন্নয়ন অত্যাবশ্যক। সে লক্ষ্যে গ্রামীণ উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এবং দেশের অভ্যন্তরে বহুমুখী কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে ডিএই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি কৃষকের মাঝে পৌঁছে দেয়া ও কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়াসে ডিএই এডিপির আওতায় ২৩টি এবং এডিপিবহির্ভূত একটিসহ ২৪টি প্রকল্প সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করেছে।

এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে বেশ কিছু প্রকল্প প্রত্যক্ষভাবে গ্রামীণ কর্মানুরাগী জনগোষ্ঠীর নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে যার ফলে গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি অংশের শহরমুখী প্রবণতা কমেছে। এ ধরনের প্রকল্পের সংখ্যা বাড়লে একদিকে গ্রামীণ উন্নয়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে, অন্যদিকে এর প্রভাবে অভিবাসন ও শহরমুখী প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে।

১৯৭১-৭২ অর্থবছরে বাংলাদেশের ধান, গম ও ভুট্টার উৎপাদন ছিল প্রায় ১১১ লাখ মেট্রিক টন, আর বর্তমানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খাদ্য উৎপাদন প্রায় ৩৯২ লাখ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে তা ৪ কোটি মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনের চতুর্থ, সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হার বিবেচনায় তৃতীয় ও ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হার বিবেচনায় সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয়াধীন ডিএইর ভূমিকা অগ্রগণ্য।

কেননা সংস্থাটি ২০০টিরও বেশি ফসলের উৎপাদন, দলভিত্তিক সম্প্রসারণ সেবা প্রদান, সেচ ব্যবস্থাপনা, বীজ ব্যবস্থাপনা, ফসল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, দুর্যোগে কৃষকের পাশে থেকে সহায়তা প্রদান, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ সহজলভ্যকরণ, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, আয় বৃদ্ধি, জীবনমান উন্নয়ন, উন্নত কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়তা, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের গ্রামীণ আর্থসামাজিক উন্নয়নে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশ সরকার কৃষি উৎপাদনে রাষ্ট্রীয় ব্যয়, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, উপকরণ ব্যবস্থাপনা ও সারের মূল্য নির্ধারণসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার কৃষি বাজেট, কৃষিঋণ, ভর্তুকি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য অবিরাম কাজ করছে। তবে নিরাপদ খাদ্য দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দেশের বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ, খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ও গুদামজাতকরণ বিপণন বিষয়ে আরও কর্মপরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে।

সরকার গ্রামীণ উন্নয়নের কৃষির বহুমুখী কার্যক্রম এবং আধুনিক চাষ পদ্ধতিসহ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। বাংলাদেশে কৃষি বিজ্ঞানীরা উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন, প্রযুক্তি, পদ্ধতি এবং তা দ্রুত কৃষকের মাঝে সম্প্রসারণ করছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দারিদ্র্য ও সুবিধাবঞ্চিত জনসাধারণের জন্য আর্থিক ও বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকতা নিশ্চিতকরণে কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, নদীভাঙ্গা পরিবারকে সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসন, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা বিস্তৃত করার কৌশল নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এবং এলাকাভিত্তিক ফসল উৎপাদনের উপযোগিতাকে বিবেচনায় নিয়ে Cropping Zone সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপন প্রয়োজন। তাহলে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের কারণে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর শহরমুখী প্রবণতা কমবে।

কর্মের আগে আসে সুষ্ঠু পরিকল্পনা। পরিকল্পনা যদি বাস্তব সময়োপযোগী যুগপোযোগী যথাযথ হয় তাহলে সফলতা আসবেই। তবে এর সাথে বিশেষভাবে দরকার তদারকি মূল্যায়ন এবং যোগ্য নেতৃত্বের। বাংলাদেশর কৃষিতে এর ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে বলেই কৃষিকে বাংলদেশ এখন সমৃদ্ধ। কৃষি উন্নয়নে সমৃদ্ধিতে বিশ্ব দরবারে রোল মডেল। আমাদের কৃষি তথ্য প্রযুক্তি কৌশল এখন বিশ্বের সাধারণ দেশ থেকে শুরু করে বাঘা বাঘা দেশগুলো আগ্রহ সহকারে গ্রহণ করছে।

এখন আর না কেউ না খেয়ে মরে না, পুষ্টিহীনতা দূর হয়েছে অনেকটুকু পুষ্টিজ্ঞান বাড়ার কারণে। দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে। বছরব্যাপী ফল শাকসবজি উৎপাদনের মাত্রা প্রকৃতি কৌশল গ্রহণ বদলে এখন নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

আমাদের গর্বের ঐতিহ্য ভাসমান কৃষি, সর্জান কৃষি, লাইন লগো পার্সিং আলোরফাঁদ পদ্ধতি, এডাব্লিওডি, ফিতা পাইপ, আইলে ফসল, বসতএলসিসি, ড্রামসীডার, মিশ্রফসল, বহুস্তরী ফসল বিন্যাস, বহুমুখী সমন্বিত কৃষি, মানসম্মত বীজ ফসল উৎপাদন, কৃষির আধুনিকায়ন, ফসলের নিবিড়তা বাড়ার শুভ প্রবণতা, ছাদে বাগান, বিশেষায়িত কৃষি, সারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, বন্যা খরা লবণাক্ততা, উপকূলীয় কৃষি, পাহাড়ি কৃষি, জলাবদ্ধতাসহ পরিবর্তিত জলবায়ুতে অভিযোজন কৌশল বাস্তবায়ন, হাওরের বিশেষ কৃষি কার্যক্রম, বিভিন্ন প্রণোদনা ভর্তুকি, নির্বিঘ্নে ফসল উৎপাদনের বিশেষ পরিকল্পনা, এসব আমাদের কৃষিকে আলোকিত এবং গর্বিত পথের সন্ধান দিয়েছে। তবে চলমান প্রাপ্তি সমৃদ্ধি নিয়ে আমাদের তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললে চলবে না। আমাদের আরো অনেক পথ পরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

কাঙ্খিত গর্বিত বিজয় রেখা স্পর্শ করতে হবে। সে জন্য আমাদের সম্মিলতিভাবে করা দরকার- সুপরিকল্পিতভাবে চাহিদাভিত্তিক খাদ্য উৎপাদন; পুষ্টিসম্মত খাবার উৎপাদন ব্যবহার; খাদ্যের শষ্যের অপচয় রোধ; পারিবারিক কৃষিকে আরো গুরুত্ব দিয়ে পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকরণ; পরিবেশবান্ধব জৈবকৃষির সফল বাস্তবায়ন; পরিবর্তিত পরিবেশে আরো উন্নতর তথ্য প্রযুক্তি অবলম্বনে প্রয়োজনীয় কৃষিভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। এর সাথে যোগ হবে সরকারি বেসরকারি যৌথ কার্যক্রম যা হবে সকলে মিলে সম্মিলিতভাবে সকলের তরে। কর্মের/শ্রমের যথাযথ মূল্য দিতে হবে।

নারী পুরুষের সার্বিক বৈষম্য বৈষম্য বিদূরিত করতে হবে। সময় উপযোগী লাগসই আধুনিক কৃষি তথ্য প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়ন। আমাদের সুষ্ঠু পরিকল্পনাভিত্তিক কার্যক্ষম কর্মই আমাদের শুভ সুন্দর কাঙ্খিত সফল ভবিষ্যত গড়বে এবং একই সাথে আমরা আমাদের প্রাণের বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত করে বিশ্বকে জানিয়ে দেবো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ সব সুন্দর, কল্যাণকর কর্ম সম্পাদন করতে পারে। তবেই আমরা আমাদের কর্মক্ষমতা যৌক্তিকভাবে বিনিয়োগ করে কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলে মাথা উঁচু করে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে পারবো, সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এই দেশে।

আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি’র (SDG) ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ২ (ক্ষুধামুক্তিঃ ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার) অর্জনে বাংলাদেশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লিড এজেন্সি হিসেবে কাজ করছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ক Action Plan-এ ১৭৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ডিএই’র ৫৮টি প্রকল্প সন্নিবেশিত হয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে আমরা অচিরেই ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হবো । এজন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়নসহ তা বাস্তবায়ন করছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কর্মপরিকল্পনাসমূহ হলো-

১. ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষিজ উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও পুষ্টি নিশ্চিত করণ;
২. প্রতিকূলতা সহিষ্ণু নতুন নতুন জাত ও কৃষিনীতি বাস্তবায়ন করে উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি;
৩. চরাঞ্চলে ও পাহাড়ে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ;
৪. সরিষা, বাদাম, তিল ও অন্যান্য তৈল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ;
৫. দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ও হাওড়াঞ্চলে ভাসমান সবজি চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ;
৬. রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার কমানো নিশ্চিতকরণ;
৭. মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ;
৮. কৃষি জমির সর্বোত্তম/সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং পতিত জমি শতভাগ চাষের আওতায় আনায়ন ,
৯. মোবাইলসহ ই-কৃষির মাধ্যমে কৃষকদের তথ্য প্রাপ্তির ব্যবস্থা জোরদারকরণ;
১০. সমন্বিত কৃষি যান্ত্রিকীকরণ;
১১. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে তা প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কৃষি পণ্যভিত্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে তোলা।

কৃষি সম্প্রসারণে আইসিটি ও নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া ব্যবহারেও সংস্থাটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই ডিএই’র সহায়তায় ”কৃষি বাতায়নে” প্রায় ৮০ লক্ষ কৃষকের তথ্যাদি সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এছাড়া, ফসলের সমস্যার সমাধানকল্পে সংস্থা কর্তৃক উদ্ভাবিত ”কৃষকের জানালা”, ”কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা”, ”ডিজিটাল বালাইনাশক নির্দেশিকা” প্রভৃতি উদ্যোগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমাদৃত ও পুরস্কৃত হয়েছে। কৃষিতে অর্জিত সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এবং লাগসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ কৃষকের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

লেখক : অতিরিক্ত পরিচালক, ক্রপস উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।

এইচআর/পিআর



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews