ঢাকা: তেল বিক্রির কমিশন ন্যূনতম সাত শতাংশ করা এবং সব ট্যাংকলরির জন্য আন্তঃজেলা রুট পারমিট ইস্যু করাসহ ১০ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদ। একই সঙ্গে আগামী ১২ দিনের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৫ মে থেকে প্রতীকী কর্মসূচি হিসেবে ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আট ঘণ্টা সারাদেশের সব পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের উত্তোলন, পরিবহন এবং বিপণন বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।



রোববার (১১ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি তুলে ধরেন বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাজমুল হক, যুগ্ম-আহ্বায়ক মিজানুর রহমান রতন, জুবায়ের আহাম্মেদ চৌধুরী প্রমুখ।







লিখিত বক্তব্যে ঐক্য পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল বলেন, দেশের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী এবং ট্যাংকলরি মালিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েক বছর ধরে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে দেন দরবার ও আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়ে আমাদের দাবি আদায়ে কয়েকবার ধর্মঘট কর্মসূচিও ঘোষণা করতে হয়েছিল। যতবারই আমরা আমাদের সমস্যা সমাধানে যৌক্তিক দাবি আদায়ের উদ্দেশে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছি, ততবারই সরকারের হস্তক্ষেপ এবং দাবি পূরণে লিখিত আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসূচি স্থগিত রেখে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সচল রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয় নাই।

পেট্রোল পাম্প মালিকদের সমস্যা সমাধানে কারো কোনো আগ্রহ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে পাম্প মালিকদের আন্দোলনে ঠেলে দেওয়ার একটি অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। বহু রক্তের বিনিময়ে একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায়ের পর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অন্যতম বাঙালি জাতির গর্ব বিশ্বনন্দিত নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সব বিষয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছি এবং আগামীতেও করতে প্রস্তুত। কিন্তু আমাদেরও বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের পক্ষে বিশাল বিনিয়োগ করে ব্যবসা পরিচালনা করা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব হচ্ছে না।

এভাবে পেট্রোল পাম্প মালিকদের ওপরে কিছুদিন পরপরই অযৌক্তিকভাবে নতুন নতুন নিয়ম প্রণয়ন পূর্বক গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর/অধিদপ্তর হতে বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স গ্রহণ এবং নির্ধারিত ফি এবং বর্ধিত ফি দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। অথচ আমাদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে এবং সরকার নির্ধারিত কমিশনে তেল বিক্রি করতে হয়। বেশি মূল্যে তেল বিক্রি করে মুনাফা বাড়ানোর কোনো সুযোগ আমাদের নেই। এর ফলে নির্ধারিত মুনাফার অতিরিক্ত খরচ বা বর্ধিত সরকারি ফি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিদ্যমান কমিশন বা মুনাফায় নতুনভাবে পরিবেশ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, বিএসটিআই রেজিস্ট্রেশন/লাইসেন্স, সওজ অধিদপ্তর কর্তৃক নতুন প্রবর্তন করা অযৌক্তিকভাবে বর্ধিত ফি দিয়ে আমাদের পক্ষে পেট্রোল পাম্প চালানো কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়।

ট্রাফিক সার্জেন্টরা অহরহ ট্যাংকলরিকে রাস্তায় থামিয়ে চালকদের হয়রানি করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে যে কোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ফলে গাড়িসহ গাড়িচালক এবং অসংখ্য পথচারী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে। সে কারণেই সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল যে, ট্যাংকলরিকে শুধু কাগজপত্র চেকিংয়ের জন্য রাস্তায় যত্রতত্র থামানো যাবে না। প্রতিটি তেলের ডিপো গেটে গাড়ির কাগজ পরীক্ষা করা হবে। আমরা এর বাস্তবায়ন চাই। তাছাড়া দেশের সব জেলায় ডিপো নেই। তাই অনেক ক্ষেত্রে এক জেলার ট্যাংকলরি তেল উত্তোলনের জন্য অন্য জেলায় যেতে হয় এবং এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে মাঝপথে অন্যান্য জেলা অতিক্রম করতে হয়। অথচ পথিমধ্যে সার্জেন্টরা গাড়ির আন্তঃজেলা রুট পারমিট না থাকলে জরিমানা, হয়রানিসহ গাড়ি এবং গাড়িচালককে থানায় নিয়ে যাওয়ার হুমকি-ধমকি দেন। কাজেই সব ট্যাংকলরিকে আন্তঃজেলা রুট পারমিট দিতে হবে।

তিনি বলেন, প্রতিটি পেট্রোল পাম্পের শুধুমাত্র ডিসপেপিং ইউনিটের জন্য প্রতি বছর এক বার পরিমাপ যাচাই পূর্বক নজেল প্রতি এক হাজার টাকা ফি নেওয়ার নিয়ম ছিল। সম্প্রতি তারা ওই এক হাজার টাকা ফি বর্ধিত করে তিন হাজার টাকা করেছেন। শুধু তাই নয় তারা এখন আন্ডারগ্রাউন্ড, ডিপ রড ইত্যাদির ওপর নতুনভাবে ফি ধার্য করেছে এবং বিএসটিআইতে নিবন্ধন বা লাইসেন্স নেওয়ার বাধ্যবাধকতা জারি করেছে।

যুগ্ম-আহ্বায়ক সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল বলেন, ২০২৫ সালেও কয়েকবার আমাদের সমস্যা সমাধান চেয়ে এবং আমাদের দাবিগুলো পূরণের আহ্বান জানিয়ে সরকার বরাবরে আবেদন করেছি। কয়েকবার আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছি। কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। কর্মসূচি ঘোষণার পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ বিপিসি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে সভা করেছি। ওই সভায় বিপিসির চেয়ারম্যান ২৭ এপ্রিলের মধ্যে আমাদের দারি পূরণ এবং সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ঘোষিত ১ মার্চ থেকে কর্মসূচি স্থগিতের অনুরোধ করলে আমরা তার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করেছি। কিন্তু আজ ১১ মে অর্থাৎ প্রায় আড়াই মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি।

এমতাবস্থায়, সম্পূর্ণ নিরুপায় হয়ে আমরা আমাদের জ্বালানি তেলের ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার মনস্থির করেছি। তবে, শেষ চেষ্টা হিসেবে ১০ মে সারাদেশের তেল ব্যবসায়ী এবং অ্যাসোসিয়েশন নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা সরকার বরাবরে আগামী ১২ দিন অর্থাৎ ২৪ মে এর মধ্যে আমাদের দাবি পূরণের জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। অন্যথায় ২৫ মে থেকে প্রতীকী কর্মসূচি হিসেবে ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারাদেশের সব পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের উত্তোলন, পরিবহন এবং বিপণন বন্ধ থাকবে। তবে হজ ফ্লাইট ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সচল রাখার জন্য বিমানের তেল পরিবহন চালু থাকবে। সে সঙ্গে জ্বালানি তেলের ভোক্তা সাধারণকে কর্মসূচি শুরুর আগেই চাহিদা মাফিক তেল সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদের ১০ দফা দাবি হলো: তেল বিক্রির কমিশন ন্যূনতম সাত শতাংশ করতে হবে। সওজ অধিদপ্তরের ভূমির ইজারা মাশুল পূর্বের ন্যায় বহাল রাখতে হবে। পাম্পের সংযোগ সড়কের ইজারাপ্রাপ্ত ভূমির নবায়নকালীন ইজারা নবায়নের আবেদনের সঙ্গে নির্ধারিত ইজারা মাশুলের পে-অর্ডার, সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী দপ্তরে জমা দিলে তাহা ইজারা নবায়ন বলিয়া বিবেচিত হওয়ার বিধান করতে হবে।

বিএসটিআই কর্তৃক পূর্বের ন্যায় শুধু ডিসপেন্সিং ইউনিট স্টেমপিং এবং পরিমাপ যাচাইয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং ফিগুলো পূর্বের ন্যায় করতে হবে। আন্ডার গ্রাউন্ট ট্যাংক কেলিবারেশন, ডিপ রড পরীক্ষণ ফি এবং নিবন্ধন প্রথা বাতিল করতে হবে।

যেহেতু পেট্রোল পাম্প কোনো শিল্প নয়, ইহা কমিশন এজেন্ট ভিত্তিক ব্যবসা তাই পেট্রোল পাম্পের ক্ষেত্রে পরিবেশ, বিআরসি কলকারখানা এবং ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স/নিবন্ধন বিধান বাতিল করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে অননুমোদিত এবং অবৈধভাবে ঘরের মধ্যে এবং খোলা স্থানে যত্রতত্র মেশিন স্থাপন পূর্বক অবৈধভাবে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ করতে হবে। বিপণন কোম্পানি থেকে ডিলারশিপ ছাড়া সরাসরি তেল বিক্রি বন্ধ করতে হবে।

এছাড়া ট্যাংকলরিচালক সংকট থেকে উত্তরণে ট্যাংকলরি চালকদের লাইসেন্স নবায়ন এবং নতুন লাইসেন্স ইস্যু সহজতর করতে হবে। গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার নামে রাস্তায় যত্রতত্র ট্যাংকলরি থামানো যাবে না। তেলের ডিপু গেটে ট্যাংকলরির কাগজপত্র পরীক্ষার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সব ট্যাংকলরির জন্য আন্তঃজেলা রুট পারমিট ইস্যু করতে হবে।

জিসিজি/আরআইএস



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews