মুখ ফিরিয়ে নেয়া চার সৈন্য, তিনজনের জেল, একের শাস্তি এখনও স্থগিত। গাজার যুদ্ধে অংশ নিতে দ্বিতীয়বার অস্বীকার করায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী নাহাল ব্রিগেড-এর চার সৈন্যকে লাইনচ্যুত করেছে। এদের মধ্যে তিনজনকে সাত থেকে বারো দিনের সামরিক কারাদণ্ডে দেওয়া হয়েছে। চতুর্থজনের সাজা এখনো ঘোষণা হয়নি। টাইমস অব ইসরায়েল প্রতিবেদকদ্বয় ইমানুয়েল ফাবিয়ান এবং অনুসন্ধানী দলে ঘাটাঘাটিতে উঠে এল এক দুঃসহ বাস্তবতা প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা কান। পরে তা নিশ্চিত করে আইডিএফ বা ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী নিজেই।

টাইমস অব ইসরায়েল ডট কমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নাহাল ব্রিগেডের ৯৩১তম ব্যাটালিয়নের এই চার সদস্য যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরার নির্দেশ পেয়ে নিজেদের "গভীর মানসিক বিপর্যয়ের" কথা জানিয়ে গাজায় ফিরে যেতে অস্বীকার করেন তারা।

“ওরা চিকিৎসা পায়নি, জেলে পাঠানো হয়েছে” — এক মায়ের অভিযোগ

সৈন্যদের পরিবারের পক্ষ থেকেও ওঠেছে তীব্র অভিযোগ। এক সৈন্যের মা কান-কে জানান, “তারা অনেক সাথীকে হারিয়েছে। চোখের সামনে যেসব দৃশ্য দেখেছে, যেসব অভিজ্ঞতা সয়েছে — তা তাদের আত্মায় গেঁথে গেছে।” এই মা আরও অভিযোগ করেন, তাদের ছেলেরা যখন নিজেদের মানসিক বিপর্যয়ের কথা জানান, তখন চিকিৎসার বদলে তাদের সরাসরি সামরিক কারাগারে পাঠানো হলো।

আইডিএফের দাবি, ‘উপযুক্ত ছিল, তবু অস্বীকার করায় কারদণ্ড’

আইডিএফ বিবৃতিতে বলেছে, সেনারা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং তিনি জানান যে তারা মানসিকভাবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। এরপর শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সামরিক আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে।

আইডিএফ-এর গা জুয়াড়ি দাবি, “এই ঘটনা যথাযথ সংবেদনশীলতা এবং নিয়ম মেনেই সামলানো হয়েছে। তবে আমরা যুদ্ধ চলাকালীন অবাধ্যতাকে খুবই গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখি এবং আমাদের শৃঙ্খলা ও আদেশ মানার মূল্যবোধ বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”

“এটা শৃঙ্খলার প্রশ্ন নয়, এটা এক বিপন্ন ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি” — আইডিএফ সেনাদের মায়েদের সংগঠন

আইডিএফ সেনাদের মায়েদের সংগঠন ইমা এরা হিব্রুতে অর্থ “সজাগ মা” হারেৎজ পত্রিকায় এক বিবৃতিতে বলেছে, “যখন একজন সৈন্য বারবার জানাচ্ছে যে সে আর পারছে না, তখন এটা শুধু শৃঙ্খলার বিষয় নয়। এটা এক ভয়ানক ব্যর্থতা, যেখানে পুরো ব্যবস্থাই তাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে তাদেরকে প্রান্তের দিকে ঠেলে দিয়েছে।”

এক নতুন সংকটের ছায়া: আত্মহত্যা বাড়ছে, চাপে সেনাবাহিনী

গাজার ইসরাইলি আগ্রাসী ও নৃশংস যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই মানসিক স্বাস্থ্যের প্রশ্নে সংকটে পড়েছে আইডিএফ। শুধু গত কয়েক সপ্তাহেই ছুটিতে থাকা রিজার্ভ একজন রিজার্ভ সেনাওসহ চার সৈন্য আত্মহত্যা করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১৯ জন সৈন্যের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনা এক ভয়াবহ প্রবণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই রিজার্ভ সৈন্য। যুদ্ধের ডাক পড়লেও হলেও সাড়া দিচ্ছেন না। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত এই চারজন ছিলেন পূর্ণকালীন সৈন্য, যাদের মধ্যে এমন অবাধ্যতা সাধারণত দেখা যায় না।

ফিরে দেখা: গাজা অভিযানে ইসরাইলের হতাহতের চিত্র

গাজার ভেতরে হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান এবং সীমান্তে চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি সেনা মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫৯ জনে। প্রতিদিনই সেনারা মুখোমুখি হচ্ছে ঘন ঘন গোলাবর্ষণ, বিস্ফোরক ফাঁদ, হামাসের সুড়ঙ্গ থেকে চোরাগোপ্তা হামলার মতো নতুন নতুন বিপদের।

এই বিদ্রোহের তাৎপর্য কী?

চার সৈন্যের এই অস্বীকৃতি শুধুই ব্যক্তিগত সাহসিকতা নয়, বরং এক বৃহত্তর মানসিক সঙ্কটের আলামত। গাজার যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ততই পরিষ্কার হচ্ছে যে সামরিক বাহিনীও এই যুদ্ধে ক্লান্ত, ভগ্নপ্রায়। “শৃঙ্খলা” আর “আদেশ পালন” নামের কাঠামোর আড়ালে যে মানুষের মন, তার দহন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই বিদ্রোহ হয়তো এখনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা, তবে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, কতজন সৈন্য এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, যাদের মুখে এখনও শব্দ নেই, কিন্তু ভেতরে আগুন জ্বলছে? আইডিএফ যদি এসব সঙ্কেতকে শুধু শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে দেখেই এড়িয়ে যায়, তাহলে হয়তো সামনের দিনগুলোতে শুধু বিদ্রোহ নয়, আরও অনেক অন্ধকার ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে।

সাংবাদিক ইমানুয়েল ফাবিয়ান এবং টাইমস অব ইসরায়েল-এর প্রতিবেদক দল এই ঘটনার গভীরে গিয়ে যে মানবিক সংকটের কথা তুলে ধরেছেন, তা শুধু অধিকৃত ফিলিস্তিনের দখলদার সামরিক বাহিনীর নয় — বরং যেকোনো দখলদার অভিযানের অন্তর্নিহিত সংকটের প্রতিচ্ছবি। যেখানে আদেশ মানা আর হৃদয় মানা—এই দুইয়ের মধ্যে লড়াইয়ে প্রতিবার হারছে মানুষ।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews