৯৪. তারা বলল, হে জুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ তো পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। আমরা কি আপনাকে খরচ দেব যে আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে এক প্রাচীর গড়ে দেবেন? [সুরা : কাহফ, আয়াত : ৯৪ (প্রথম পর্ব)]

তাফসির : আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, বাদশাহ জুলকারনাইন তাঁর রাজ্য জয়ের সফরে বের হয়ে এমন এক জাতির মুখোমুখি হয়েছেন, যাদের ভাষা বোঝা দুষ্কর ছিল। আলোচ্য আয়াতে তাদের সঙ্গে বাদশাহ জুলকারনাইনের কথোপকথন সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

জুলকারনাইন ও তাঁর দলবল দেখে ওই জাতি অনুমান করে নেয় যে সম্ভবত তিনি অনেক প্রভাবশালী কেউ হবেন। তাই তারা তাঁর কাছে বিশেষ একটি আবদার পেশ করে। হয়তো আকার-ইঙ্গিতে কিংবা কোনো অনুবাদকের মাধ্যমে তারা ইয়াজুজ-মাজুজের অত্যাচার থেকে মুক্তির দাবি জানায়। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ইয়াজুজ-মাজুজ বাহিনী যেন আর বের হতে না পারে, সে জন্য তারা প্রাচীর নির্মাণের আবেদন করে।

ইয়াজুজ-মাজুজের ঘটনা পৃথিবীর অন্যতম বিস্ময়কর ঘটনা। তাই তাদের সম্পর্কে নানা মিথ ও কল্পকাহিনি প্রচলিত আছে। রয়েছে ইসরাইলি বর্ণনা ও ঐতিহাসিক কিসসা-কাহিনি। কোনো কোনো তাফসিরবিদও সেগুলো ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্ধৃত করেছেন, কিন্তু তাঁদের কাছেও এগুলো নির্ভরযোগ্য নয়!

ইসরাইলি বা আদি ধর্মীয় পুস্তকের বর্ণনা মতে, এশিয়ার উত্তর-পূর্ব এলাকায় একসময় এমন জাতি ছিল, যারা সুসভ্য দেশগুলোর ওপর ধ্বংসাত্মক হামলা চালাতে অভ্যস্ত ছিল। মাঝেমধ্যে তারা এশিয়া ও ইউরোপ উভয় দিকে ধ্বংসের থাবা বিস্তার করত। বাইবেলের আদি পুস্তকে (দশম অধ্যায়) তাদের নূহ (আ.)-এর পুত্র ইয়াফেসের বংশধর বলা হয়েছে। মুসলিম ঐতিহাসিকরাও এ কথা মেনে নিয়েছেন। অর্থাৎ ইয়াজুজ-মাজুজও মানব বংশোদ্ভূত। হিজকিল (আ.)-এর পুস্তিকায় (জিহিস্কেল ৩৮ ও ৩৯ অধ্যায়) তাদের এলাকা বলা হয়েছে রুশ, তোবলস্ক ও মস্কো। ইসরাইলি ঐতিহাসিক ইউসিফুস তাদের সিথিন জাতি মনে করেন। তাঁর ধারণা, ইয়াজুজ-মাজুজের এলাকা কৃষ্ণ সাগরের উত্তর ও পূর্ব দিকে অবস্থিত ছিল। কিন্তু জিরোমের বর্ণনা মতে, ইয়াজুজ-মাজুজ জাতির বসতি ছিল ককেশিয়ার উত্তরে কাস্পিয়ান সাগরের সন্নিকটে। যদিও ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বর্ণনা পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলোর আলোকে তাদের অবস্থানস্থল নির্ণয় করা কঠিন। পবিত্র কোরআনে তাদের সংক্ষিপ্ত অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। মহানবী (সা.)ও তাদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য উম্মতকে অবহিত করেছেন। কিন্তু ঈমান ও বিশ্বাস স্থাপনের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, কোরআন ও হাদিসে ততটুকুই বর্ণিত হয়েছে। তাফসিরবিদ ও ইতিহাসবিদরা এর বাইরে যেসব তথ্য ও ভৌগোলিক অবস্থা বর্ণনা করেছেন, সেগুলো বিশুদ্ধও হতে পারে এবং অশুদ্ধও হতে পারে। কেননা তাঁদের বিভিন্নমুখী উক্তিগুলো নিছক ইঙ্গিত ও অনুমানের ওপর নির্ভরশীল। এগুলো শুদ্ধ কিংবা অশুদ্ধ হলেও তার কোনো প্রভাব কোরআনের বক্তব্যের ওপর পড়ে না।

গ্রন্থনা : মুফতি কাসেম শরীফ



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews