গঙ্গা-পদ্মায় প্লাবন

আপদকালীন ব্যবস্থা নিন সর্বাগ্রে

আকস্মিকভাবে কয়েকদিন ধরে গঙ্গা-পদ্মায় প্রবাহ বাড়তে বাড়তে বিপদসীমার কাছাকাছি পেঁৗছেছে এবং রাজশাহী থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে যেভাবে সুরক্ষা বাঁধে ঝুঁকিসহ ভাঙন ও প্লাবন দেখা দিয়েছে, তাতে করে আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। অভিন্ন এই নদীর উজানে অবস্থিত বহুল আলোচিত ফারাক্কা ব্যারাজের সব জলকপাট কয়েকদিন আগে খুলে দেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ অংশে প্রবাহ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শনিবার সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনে যথার্থ শিরোনামই দেওয়া হয়েছে যে, 'পানি বাড়ছে বিপজ্জনক গতিতে'। অস্বীকারের অবকাশ নেই যে, বর্ষাকালে পানি ছেড়ে দেওয়াই রেওয়াজ। ব্যারাজ নির্মাণ করা হয় সাধারণত শুকনো মৌসুমে পানি প্রত্যাহারের লক্ষ্য নিয়ে। শুকনো মৌসুমে গঙ্গার পানি কতখানি প্রত্যাহার করা হবে এবং কতখানি ভাটির জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে- এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৩০ বছরমেয়াদি একটি চুক্তিও রয়েছে। গঙ্গা অববাহিকার উজানের অংশ ভারতীয় রাজ্য বিহার ও উত্তর প্রদেশে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে কেবল বিহারেই আড়াই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আমরা সংবাদমাধ্যম সূত্রে জেনেছি। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে আকস্মিক জলকপাট খুলে দেওয়া কি উচিত হয়েছে? খুলে দেওয়ার আগে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে জানানো হয়েছিল কি-না, তা নিয়েও রয়েছে পরস্পরবিরোধী তথ্য। আমরা মনে করি, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে জলকপাটগুলো খোলা। এটা বিস্ময়কর যে, ভরা বর্ষাতেও গঙ্গা অববাহিকার কয়েকটি রাজ্যে বন্যার আগাম পূর্বাভাস দিতে পারেনি। তাহলে আরও আগে থেকেই ফারাক্কা ব্যারাজ খুলে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হতো। একবারে বিপুল প্রবাহ নেমে আসার বদলে গঙ্গা-পদ্মায় স্বাভাবিক স্রোত নেমে এলে হয়তো বাংলাদেশকে ভাঙন ও প্লাবনের ঝুঁকিতে পড়তে হতো না। আমাদের পানিসম্পদমন্ত্রী এমন পরিস্থিতিতে 'অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা' নিয়ে জোর দিয়েছেন। আমরাও মনে করি, ক্রমবর্ধমান পানি সংকটের মুখে বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন নদীগুলোর অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা জরুরি। কিন্তু এখন গঙ্গা-পদ্মায় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে করে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাপনার বদলে অবিলম্বে আপদকালীন কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কতখানি উদ্যোগী, সেটাই আমরা দেখতে চাই সর্বাগ্রে। বিশেষত ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর ত্রাণ ও পুনর্বাসন জরুরি। এ ক্ষেত্রে ভারতেরও নৈতিক দায়িত্ব হবে ভাটিগঙ্গায় প্লাবনজনিত দুর্যোগের শিকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমরা চাই, গঙ্গাসহ অভিন্ন সব নদীর অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়িত হোক। এখনকার জন্য জরুরি কাজ হচ্ছে, প্লাবনের শিকার বসতি ও অবকাঠামোর সুরক্ষা। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে এভাবে পানি ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন এবং বাংলাদেশকে প্রস্তুতির সময় দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করতেই হবে। ভারতীয় ফারাক্কা ব্যারাজের কারণে শুকনোয় পানিস্বল্পতা ও বর্ষায় প্লাবনের দুর্ভোগ বছরের পর বছর চলতে পারে না।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews