আশি ও নব্বইয়ের দশকে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এখনো রয়ে গেছে। সর্বশেষ যে সাত লাখ রোহিঙ্গা এসেছে তারাও দেড় বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন ১২ থেকে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এদের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে অচিরেই এরা বাংলাদেশের জন্য ‘গলার কাঁটা’ বা চরম সংকটের কারণ হয়ে উঠবে। অভিযোগ আছে, পশ্চিমা কিছু কূটনীতিক এদের নিয়ে গোপন খেলায় মেতে উঠেছে। দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এমন অভিযোগের সত্যতা নিরূপণ করা জরুরি। প্রয়োজনে নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে বলেই মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

মিয়ানমার পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছিল। গত নভেম্বরে এই প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। সে মোতাবেক প্রথম ধাপে আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বাসও তৈরি ছিল। আগে অনেকে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও শেষ মুহূর্তে কোনো রোহিঙ্গাই ফিরে যেতে রাজি হয়নি। জানা যায়, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কর্মরত এনজিও প্রতিনিধিরা তাদের ফিরে না যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছেন। জাতিসংঘও বলেছে, সেখানে এখনো ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। তাদের আগে নাগরিকত্ব দিতে হবে। ঘরবাড়ি, জমিজিরেত ফিরিয়ে দিতে হবে। কর্মসংস্থান, অবাধে চলাফেরা ও পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে। এমনি আরো কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। কিন্তু এই শর্তগুলো যাতে পূরণ করা হয় সে জন্য মিয়ানমারকে কার্যত কোনো চাপই দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ধাপে ধাপে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ আরো কিছু শর্ত পূরণে মিয়ানমার সম্মত হয়ে যে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছিল, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কারণে তাও বন্ধ হয়ে গেল। এখন তারা বলছে, বাংলাদেশেই রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থান বা জীবিকা উপার্জনের সুযোগ করে দিতে হবে। অবাধে চলাফেরার সুযোগ দিতে হবে। এমনি আরো কিছু অধিকার তাদের দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, কক্সবাজারের ওপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি হওয়ায় সরকার লাখখানেক রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরিত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতেও তারা নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করছে। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, স্থানান্তরে সম্মত হলেও তারা বেশ কিছু শর্ত নিয়ে সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করছে। এমনকি সেখানকার শিবিরের ‘গভার্নেন্স’-এর দায়িত্বও তারা পেতে চায়। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সম্মতি ছাড়া তাদের ভাসানচরে নেওয়া যাবে না এমন নিশ্চয়তাও চায়।

পাশ্চাত্যের কূটনীতিকরা রোহিঙ্গা সংকটকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাতে চান, সে বিষয়ে স্পষ্ট হতে হবে এবং জনগণকে জানাতে হবে। দুর্বল অর্থনীতি ও অস্বাভাবিক জনঘনত্বের এই দেশে ১৩ লাখ রোহিঙ্গার আত্তীকরণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অতি দ্রুত তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews