ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ

ইন্টারনেট সোসাইটি একটি অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংগঠন। ১৯৯২ সালে যাত্রা শুরু করা এই সংগঠনটি বিশ্বের ইন্টারনেট নীতিমালা, কারিগরি মানদণ্ড ও ভবিষ্যতের ইন্টারনেট প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে থাকে। ‘সবার জন্য ইন্টারনেট’ এটি হচ্ছে সংগঠনটির মূলমন্ত্র। বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবনী এবং নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করা সংগঠনটির অন্যতম লক্ষ্য। সদস্যদের অনুদান, অ্যাওয়ার্ড ও ফেলোশিপের ব্যবস্থা করে ইন্টারনেট সোসাইটি।

সংগঠনটির প্রধান দুই কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি ও সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। বিভিন্ন দেশে ১১০টিরও বেশি সক্রিয় লোকাল চ্যাপ্টার রয়েছে সংগঠটির।

২০১১ সালের ২০ জুলাই ইন্টারনেট সোসাইটি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কার্যক্রম শুরু হয়। ইতিমধ্যে ৩০০ জনের বেশি তথ্য-প্রযুক্তি পেশাজীবীকে আইপিভি৬ ও নেটওয়ার্ক নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে এপনিকের সহযোগিতায় আইপিভি৬ বিষয়ক শর্ট কোর্স চালু করা হয়েছে। আইক্যান অ্যাট-লার্জ কমিউনিটির সদস্যও নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

যেভাবে যোগ দেওয়া যাবে : যে কেউ ইন্টারনেট সোসাইটির গ্লোবাল ও চ্যাপ্টার সদস্য হতে পারে। এ জন্য ইন্টারনেট সোসাইটির ওয়েবসাইটে (www.internetsociety.org/become-a-member/) বা  (https://portal.isoc.org/join)  ঠিকানায় ঢুঁ মেরে একটি সদস্য ফরম পূরণ করে অনলাইনে সাবমিট করলেই হবে। গ্লোবাল সদস্য হওয়ার পর লোকাল চ্যাপ্টারের সদস্য হতে চ্যাপ্টার নির্বাচন করে সাবমিট করতে হবে।

লাভ কী : বিভিন্ন ধরনের অনুদান, পুরস্কার ও ফেলোশিপের জন্য আবেদনও করতে পারবেন সদস্যরা। সদস্য অংশ নিতে পারেন ইন্টারনেট সোসাইটির অধিকাংশ কার্যক্রমে। তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক নীতিনির্ধারণী বিষয়েও মত দেওয়ার সুযোগ আছে।

বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপ (বিডিনগ)

নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপ (নগ) হচ্ছে ইন্টারনেট প্রকৌশলীদের একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটি। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজেদের মধ্যে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও মতামত বিনিময় করাই সংগঠনটির মূল কাজ। অন্যান্য দেশ ও আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপ। যেমন—সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপ (সেনগ), নর্থ আমেরিকান নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপ (ন্যানগ), জাপান নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপ (জেনগ), অস্ট্রেলিয়া নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপ (অসনগ)-এর মতো স্থানীয় সংগঠনটি হচ্ছে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপ (বিডিনগ)।

বিডিনগ মূলত এ দেশের নেটওয়ার্ক অপারেটরস এবং প্রকৌশলীদের কমিউনিটি। কার্যক্রম শুরু করে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর। তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা, স্থানীয় প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দেশের মেধাবীদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য উন্নত ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়ে তুলতেও তারা কাজ করে। তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছে সংগঠনটি। প্রতিবছর দুটি সম্মেলন আয়োজন করে বিডিনগ, এর একটি হয় ঢাকায় আরেকটি অন্য জেলায়।

কারা হতে পারে বিডিনগ সদস্য : ইন্টারনেট কার্যক্রম, প্রকৌশল-প্রযুক্তি ও গবেষণায় আগ্রহীরা বিডিনগের সদস্য হতে পারেন। যদিও বিডিনগ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য সদস্যপদ গ্রহণের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

এতে যুক্ত হয়ে লাভ: বিডিনগ বোর্ড ও বিডিনগের অভ্যন্তরীণ কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন বিডিনগ সদস্যরা। বিডিনগ সম্মেলন/প্রশিক্ষণ/কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য বিশেষ মূল্য ছাড়ও পেয়ে থাকেন। বিডিনগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে www.bdnog.org ঠিকানায়।

জিডিজি বাংলা

গুগল প্ল্যাটফর্মে কাজ করছেন বা কাজের আগ্রহ রয়েছে এমন পেশাজীবীদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন—গুগল ডেভেলপারস গ্রুপ বা জিডিজি। গুগলের সবচেয়ে বড় এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উপস্থিতি আছে বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে। সাধারণত জিডিজিগুলোর নামকরণ করা হয় স্থানীয় বিভিন্ন শহরের নামে। যেমন—জিডিজি নিউ ইয়র্ক, জিডিজি লন্ডন ইত্যাদি। তবে ব্যতিক্রম হয়েছে বাংলাদেশে। কোনো ভাষার নামে জিডিজির নামকরণ বিশ্বে এটাই প্রথম। যাত্রা শুরুর বছরেই ‘গুগল ট্র্যান্সলেট’-এ বাংলা শব্দের অনুবাদ যুক্ত করার লক্ষ্যে বিশেষ কার্যক্রম শুরু করে জিডিজি বাংলা। দেশের ৯৩টি স্থানে ‘গুগল ট্রান্সলেশন এ-থন’ও আয়োজন করে তারা। তাদের এই কার্যক্রমে দেশ ও বিদেশ থেকে ইন্টারনেটে ২১ লাখের বেশি অনুবাদ যুক্ত হয়।

জিডিজি বাংলার কমিউনিটি ম্যানেজার জাবেদ সুলতান পিয়াস বলেন, ‘গুগলের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিগুলোর একটি গুগল ক্লাউড। বাংলাদেশেও ক্লাউড প্রযুক্তিনির্ভর অভিজ্ঞ ডেভেলপারের চাহিদা বাড়ছে। তাই চার মাস ধরে দেশের ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী গুগল ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম (জিসিপি) এসেনসিয়াল সার্টিফিকেশন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২২০ জন জিসিপি এসেনসিয়াল সনদও পেয়েছে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আমরা এ ধরনের আরেকটি কার্যক্রম ‘গুগল স্ট্যাডি জ্যাম’ শুরু করতে যাচ্ছি।

জিডিজি বাংলার সদস্য হতে : মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীরাই যুক্ত হন জিডিজি বাংলায়। সারা দেশে ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে সংগঠনটি। আগ্রহীরা এসব চ্যাপ্টারের মাধ্যমে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। এ ছাড়া নতুন কোনো চ্যাপ্টার খোলার ব্যাপারেও যোগাযোগ করতে পারেন।

জিডিজি বাংলার সঙ্গে যোগাযাগ করা যাবে সংগঠনের ওয়েবসাইট (www. gdgbangla.com)  ও ফেইসবুক পেইজের (www.facebook.com/gdgbangla)

 মাধ্যমে।

মজিলা কিউএ বাংলাদেশ

ওয়েবসাইট চালুর জনপ্রিয় ব্রাউজার ফায়ারফক্সের নির্মাতা মজিলা ফাউন্ডেশন। মুক্ত সফটওয়্যার আর উন্মুক্ত ওয়েব নিয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। ১৫২টিরও বেশি ভাষায় মজিলার প্রযুক্তিসেবা রয়েছে। আছে বাংলাও।

‘মজিলা কিউএ বাংলাদেশ কমিউনিটি’ নামে বাংলাদেশে একটি সংগঠন রয়েছে। ভলান্টিয়ারদের (স্বেচ্ছাসেবক) মাধ্যমে পরিচালিত সংগঠনটি মজিলার বিভিন্ন সেবার মান নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। সংগঠনের প্রধান হোসাইন আল ইকরাম জানান, মজিলার কিউএ (Quality Assurance) দলকে সরাসরি সহযোগিতা দেওয়াই সংগঠনের মূল কাজ। ফায়ারফক্সের নতুন সংস্করণ বাজারে আসার আগে বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্ব এই কমিউনিটিরই থাকে। ২০১৫ সালে চালু হওয়া এই কমিউনিটি ফায়ারফক্স ব্রাউজারের মান নিয়ন্ত্রণে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

যেভাবে যোগ দেওয়া যাবে : হোসাইন আল ইকরাম জানান, দক্ষতা অনুযায়ী লোকালাইজেশন, কিউএ, কোডিং ইত্যাদি কাজে অবদান রাখতে পারেন যে কেউ। whatcanidoformozilla.org-এ গেলে কাজগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।

এ ছাড়া অফলাইনেও কমিউনিটি নানা আয়োজন হয়। যেখানে হাতে-কলমে মজিলার সঙ্গে কাজ করার পদ্ধতি শেখানো হয়। আগ্রহীরা নিজেদের অবসর সময় কাজে লাগিয়েই কমিউনিটির কাজ করতে পারে। মজিলা কিউএ বাংলাদেশ কমিউনিটির ফেইসবুক গ্রুপের (www.facebook.com/groups/mozqabd/ সঙ্গে যোগাযোগ করে যুক্ত হওয়া যাবে।

যুক্ত হলে লাভ : হোসাইন আল ইকরাম বলেন, এই কমিউনিটিতে যুক্ত হয়ে মজিলার মতো একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গ্লোবাল কমিউনিটির বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা এতে যুক্ত থেকে নিজেদের প্রযুক্তি দক্ষতাও বৃদ্ধির সুযোগ পেয়ে থাকে। নিত্যনতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার সুযোগ থাকায় পেশাগত জীবনেও সহায়তা হয়।

ওপেন নলেজ বাংলাদেশ

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ওপেন নলেজ ইন্টারন্যাশনাল (ওকেআই)। ২০০৪ সালে অলাভজনক সংস্থা হিসেবে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটি মূলত স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করে থাকে। উন্মুক্ত তথ্য নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি ওপেন স্পেন্ডিং, স্কুল অব ডেটা, ওপেন জিএলএএম, ওপেন গভর্নমেন্ট ডেটা, ওপেন ট্রান্সপোর্ট, ওপেন সায়েন্স, ওপেন ইকোনমিকস, ওপেন বিবলিওগ্রাফি, ওপেন অ্যাকসেস, পাবলিক ডোমেইন নিয়েও কাজ করে। ওকেআই বর্তমানে ৪০টি দেশে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে ‘ওপেন নলেজ বাংলাদেশ’ নামে কাজ করছে তারা। সংগঠনটির অ্যাম্ব্বাসাডর নুরুন্নবী চৌধুরী জানান, বাংলাদেশে ওপেন ডেটা ডে, ওপেন এডুকেশন, ওপেন ডেটা ইনডেস্কের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে সংগঠনটির বাংলাদেশ শাখার সদস্যরা। ওকেআইয়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়ে থাকেন ওপেন নলেজ বাংলাদেশের সদস্যরা। উন্মুক্ত তথ্য বা ডাটা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, কর্মশালা, সেমিনারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে ওপেন নলেজ বাংলাদেশ।

সদস্য হওয়ার যোগ্যতা : উন্মুক্ত তথ্য, শিক্ষা এবং ওপেন অ্যাকসেস ইত্যাদি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহীরা চাইলেই ওপেন নলেজ বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। সংগঠনের অফিশিয়াল ফেইসবুক পেইজ www.facebook.com/OpenKnowledgeBD বা nh@nhasive.com-এ মেইল করে সদস্য হওয়া যাবে। বাংলাদেশের কার্যক্রম জানা যাবে https://bd.okfn.org  ঠিকানায়।

যুক্ত হয়ে লাভ : আন্তর্জাতিকভাবে নানা ধরনের ডাটা-বিষয়ক কার্যক্রমে নিজেকে যুক্ত করার সুযোগ পাওয়া যায়। গবেষণার সুযোগের পাশাপাশি চাইলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত হওয়া যায়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে নানা ধরনের সংস্থা এ ধরনের কার্যক্রমে বেশ সক্রিয়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews