ভোরের নরম ঘাসে খালি পায়ে হাঁটার অভিজ্ঞতা যেন এক অন্যরকম প্রশান্তির অনুভূতি। অনেকেই বলেন, এটি শৈশবের দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে শুধু নস্টালজিয়া নয়, সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, খালি পায়ে হাঁটা বা ‘গ্রাউন্ডিং’ শরীর ও মনে উপকার বয়ে আনে।
যদিও কেউ কেউ একে ‘প্রাকৃতিক থেরাপি’ বলে মনে করেন, আবার কেউ বলেন, এটি শুধুই কল্পনা—তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। চলুন জেনে নেওয়া যাক, ভোরের ঘাসে খালি পায়ে হাঁটার ৭টি বৈজ্ঞানিক উপকারিতা:
১. প্রদাহ কমায়
ঘাসের শিশিরে সরাসরি পা রাখার ফলে ত্বকে ঠান্ডা অনুভূতি হয়, যা শরীরের রক্তসঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাটির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ শরীরের ফ্রি র্যাডিকেল নিরপেক্ষ করে এবং প্রদাহের মাত্রা কমায়।
২. দেহঘড়ি ঠিক রাখে
মাটির সংস্পর্শ শরীরের ‘সার্কাডিয়ান রিদম’ বা প্রাকৃতিক জৈবিক ঘড়িকে সঠিক রাখে। এটি কর্টিসল হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে, যার ফলে ঘুম ভালো হয় ও মেজাজ থাকে স্থির।
৩. পায়ের আকুপয়েন্ট সক্রিয় করে
খালি পায়ে হাঁটার সময় পায়ের তলায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুগুলো উদ্দীপিত হয়। বিশেষ করে হৃদযন্ত্র, কিডনি ও যকৃৎ সংক্রান্ত পয়েন্টগুলোর হালকা স্টিমুলেশন অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়ক।
৪. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়
প্রাকৃতিক পরিবেশে খালি পায়ে হাঁটলে মানসিক প্রশান্তি আসে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এই অভ্যাস উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা কমাতে সাহায্য করে। ঘাসের সবুজ রঙ চোখে আরাম দেয় এবং মনকে প্রশান্ত করে।
৫. পায়ের পেশি শক্তিশালী করে
জুতা পরে হাঁটার ফলে পায়ের ছোট ছোট পেশিগুলোর কার্যকারিতা কমে যায়। খালি পায়ে হাঁটলে সেই পেশিগুলো সক্রিয় হয়, যা পায়ের গঠন ও ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং ইনজুরির ঝুঁকি কমায়।
৬. হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী
মাটির সংস্পর্শ হৃদস্পন্দনের ওঠানামা (HRV) নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এটি রক্তপ্রবাহ ও ঘনত্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, ফলে হৃদস্পন্দন আরও নিয়মিত ও স্থির হয়।
৭. সচেতনতা ও মনোযোগ বাড়ায়
প্রতিদিনের ব্যস্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে একটুখানি সময় প্রকৃতির মাঝে কাটানো মানেই মানসিক প্রশান্তি। ঘাসের স্পর্শ, পাখির ডাক ও বাতাসের ছোঁয়া আমাদের মনকে সচেতন করে তোলে—যা মনোযোগ বাড়ায় ও ডিপ্রেশন কমাতে সহায়ক।
খালি পায়ে ভোরবেলা ঘাসে হাঁটা কেবল শখ নয়, বরং এটি হতে পারে দৈনন্দিন জীবনের একটি সহজ অথচ কার্যকর স্বাস্থ্য অভ্যাস। কোন ব্যয় নেই, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই—শুধু প্রকৃতির ছোঁয়ায় কিছু মুহূর্ত কাটালেই শরীর ও মনের মিলন ঘটে প্রশান্তিতে।
পরামর্শ: যাদের পায়ে ইনফেকশন, কাটা বা চর্মরোগজনিত সমস্যা আছে, তারা এই অভ্যাস শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।