হেফাজতে ইসলামকে 'ফ্রেমিংয়ের রাজনীতি' থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন নারীকে গালি দেওয়ার কারণে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো ৬ নারী। আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা এই আহ্বান জানান।
জনসমাবেশে নারীদের সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে সোমবার হেফাজত ইসলামকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান ৬ নারী। এরপর বিবৃতি দিয়ে এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করে হেফাজত। এ সম্পর্কে পরে আবার বিবৃতি দেন ওই ৬ নারী। বিবৃতিদাতারা হলেন- এনসিপি নেত্রী সৈয়দা নীলিমা দোলা, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী ও নীলা আফরোজ এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের—উম্মে রায়হানা, উম্মে ফারহানা ও ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়া।
‘হেফাজত ইসলামের ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে ৬ নারীর বিবৃতি’ শিরোনামে দেওয়া বিবৃতিতে তারা বলেন, ''আমরা বিগত ৫ মে, ২০২৫ হেফাজত ইসলামের সমাবেশে নারীকে বেশ্যা, হিজড়া বলে গালি দেবার কারণে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই। সেটির প্রেক্ষিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ দু:খপ্রকাশ করে একটি প্রেস রিলিজ প্রকাশ করেছে। নারীকে পাবলিক স্পেসে গালি দেবার পর, লিগ্যাল নোটিশের উত্তরে তাদের ক্ষমা চাওয়াকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং গ্রহণ করি। তবে আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি তারা প্রেস রিলিজে বলেছেন, 'নারীকে পণ্য' বানানোর পশ্চিমা এজেন্ডা তারা মেনে নেবেন না এবং ধর্মীয় ইস্যুতে বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেবেন না। এছাড়াও তারা বলেন, উগ্র নারীবাদীদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ফ্রেমিং-এর রাজনীতি থেকে তাদের আমরা বেরিয়ে আসার আহ্বান জানাই। কারো মতের সাথে না মিললেই তাকে কোনো না কোন ট্যাগ দেওয়া যাবেনা।''
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ''ক্ষমা প্রার্থনাকে মেনে নিয়েই তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে- ভবিষ্যতে টেবিল টক কিংবা পাবলিক ডিবেটের মাধ্যমে নারীদের সাথে আলাপে অংশ নিতে। নারীর সমঅধিকার কোনোভাবেই পশ্চিমা এজেন্ডা নয়। সমাজে সকলেই বিরাজ করবেন নিজ নিজ ক্ষমতায় আর সেটিই সমাজের নিয়ম। আমরা আশা করবো তারা নিজেদের চিন্তা চেতনাকে আরো শানিত করবেন। হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের প্রতি সম্মান রেখেই আমাদের ৬ নারীর আহ্বান থাকবে, নারীর সাম্য ও সামাজিক মর্যাদার বিষয় নারীই বুঝবে এবং তারা যেন সেক্ষেত্রে এগিয়ে আসে। সকল জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন করাই আমাদের সকলের লক্ষ্য। কাজেই নারীদের ব্যাপারে বারবার প্রশ্ন উত্থাপন করে একটি সামাজিক চাপ সৃষ্টি করা অনুচিত।''
২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানই নারীদের শক্তি তথা ক্ষমতা বোঝার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, 'স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পেছনে নারীদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাই যেকোনো দ্বিমতে এক টেবিলে বসে কথা বলার পরিস্থিতি বজায় রাখবেন এবং ভবিষ্যতে একটি সামাজিক চুক্তিতে আসবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।'' বিবৃতিতে ওই ৬ নারী বলেন, 'আমরা আশা করি নতুন বাংলাদেশ সবার হবে। আর এই দু:খ প্রকাশের প্রক্রিয়াকে আমরা সাধুবাদ জানাই।'