দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা এখন রমরমাভাবেই চলছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রাজধানীর ভিআইপি এলাকা, বিভাগীয় ও বড় জেলা শহর ছাড়াও রেডিওলিংকের মাধ্যমে অবৈধ এ ব্যবসা দেশের সীমান্ত এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানীতে হাই ফ্রিকোয়েন্সি  রেডিওলিংক ব্যবহার করে অনেকেই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করছে। বলা হয়েছে, রাজধানীর নিকেতন, গুলশান, বারিধারা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, নিউ ডিওএইচএস, মিরপুর ডিওএইচএস, ধানমন্ডি ও উত্তরায় অবাধে এ ব্যবসা চলছে। বিটিআরসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজধানীর ভিআইপি এলাকায় বেশ কিছু বাড়ি চিহ্নিত হয়েছে যেগুলোতে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। গুলশান-২ এলাকায় একটি বাড়িকে চিহ্নিত করা হয়েছে যেখান থেকে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার অনেকাংশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বলা হয়েছে, ভিআইপির আস্তানা ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও তদন্ত কমিটি এ সব ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টে অভিযানে সাহস দেখাতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে অভিযান করলেই সংশ্লিষ্টদের পড়তে হচ্ছে নানা ঝামেলায়। অভিযানের সাথে সাথে বেশকিছু জায়গা থেকে ফোন চলে আসে এবং জড়িতদের ছেড়ে দেয়াসহ পরবর্তীতে ঐসব স্থানে অভিযান পরিচালনাতেও থাকছে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। সংসদে অভিযোগ করা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের রাঘব-বোয়ালরাই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সাথে জড়িত। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ সম্পর্কে অবহিত থাকলেও কার্যকর কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় ভিআইপিদের যুক্ত থাকার কারণে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসেই সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ৩শ’ ১৬ কোটি টাকা।
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা নতুন কিছু নয়। এটি বন্ধে দীর্ঘদিন থেকেই লেখালেখি ও কথাবার্তা হচ্ছে। মাঝেমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নানামুখী তৎপরতার খবরও মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। বাস্তবে কেন এবং কি কারণে এটি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না উঠে এসেছে আলোচ্য রিপোর্টে। এ কথাতেও নতুনত্ব কিছু নেই যে প্রভাবশালীরা ক্ষমতার প্রশ্রয়ে থাকার কারণেই কোন না কোনভাবে এ ব্যবসার সাথে জড়িত। অনুমান অসঙ্গত নয় যে, বখারা ভাগাভাগির ব্যাপারটিও হয়ত এর সঙ্গে যুক্ত। যারা জড়িত তাদের হাত কতোটা লম্বা তা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অবৈধ কল টার্মিনেশন বন্ধের তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে অভিযুক্তদের ‘ডিসটার্ভ’ না করার অলিখিত নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বোঝা যায়, অন্যান্য ক্ষেত্রের মত এ ক্ষেত্রেও দ্বৈতনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এদিকে দেখা যাচ্ছে, গ্রেপ্তারসহ নানা ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি থাকলেও সুনির্দিষ্ট অপরাধী ধরতে তারা অক্ষম বা সাহস পাচ্ছে না। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ও অবৈধ ব্যবসায়ীদের ধরতে অক্ষম। অথচ সংবিধান ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ব্যক্তিগত কথোপকথন টেপ করতে দেখা যাচ্ছে। ফোনালাপ হ্যাকিং করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ১শ’ ৬৮ বছরের ব্রিটিশ ট্যাবলয়েট নিউজ অব দি ওয়াল্ড বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন পত্রিকাটির মালিক রুপার্ট মারডকের ছেলে জেমস মারডক। বন্ধের দিন সম্পাদকীয়তে বিভিন্ন ব্যক্তির ফোনে আঁড়িপাতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছিল। আলোচ্য ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসা নিয়ে যে ধরনের লুকোচুরি চলছে তা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। এর ফলে দেশ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়ন লালিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে যাই বলা হোক না কেন, এটাই সত্যি যে, লোক দেখানো দু’একটি অভিযান পরিচালিত হলেও কার্যত এ অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
যে কোন মূল্যে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধ করা জরুরি। এটা অত্যন্ত পরিষ্কার যে, যারা এধরনের  অপতৎপরতার সাথে জড়িত তাদের কথা সংশ্লিষ্টদের অজানা নয়। খোদ শর্ষের মধ্যেই হয়তো ভূত রয়েছে। ভিআইপিরাই যদি অবৈধ ব্যসার সাথে জড়িত থাকে তাহলে সাধারণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সুফল আশা করা যায় না। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, কারো থাকা উচিৎ নয়। আইনের সঠিক ও সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধে কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। অনেকদিন ধরেই এব্যাপারে অনেক ধরনের কথা বলা হচ্ছে। বিটিআরসির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সরকারের একটি নির্দিষ্ট মহলের জোরাজুরিতে কল টার্মিনেশন রেট কমানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, কলরেট কম হলে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধ হবে। বাস্তবে হয়েছে তার উল্টোটি। সামগ্রিক বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, সরকার একদিকে বৈধ খাত থেকে রাজস্ব কম পাচ্ছে অন্যদিকে ভিআইপিদের অবৈধ ব্যবসার কারণে বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে। পরিস্থিতি উত্তরণে জরুরি ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই।





Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews