ফেনী: ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা থাকেন গ্রামের একাকি একটি বাড়িতে। বিসিএস ক্যাডার উচ্চশিক্ষিত ও বিত্তবান ছেলেরা থাকেন বউকে নিয়ে যার যার নিজস্ব বাসায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে মেয়েরা থাকেন স্বামীর বাড়ি। কিন্ত মায়ের স্থান হয়নি কারো কাছেই। গ্রামের বাড়িতে ছোট একটি ঘরে অনাহারে অর্ধাহারে অযত্ন আর অবহেলায় মৃত্যুমুখী মা। দেখারও কেউ নেই।
মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে ফেনী পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ড মধুপুর থেকে মৃদুলা রানী নামে এক বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। পরে ওই মায়ের দেখাশুনার দায়িত্ব নিয়েছে ফেনীর সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সহায়’।
চিকিৎসা সেবার দায়িত্বভার নিয়েছেন ফেনী জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার।
স্থানীরা জানান, দীর্ঘ চার বছর ধরে মধুপুরের ওই বাড়িতে একা থাকেন বৃদ্ধা মা। তার বড় ছেলে বাপ্পি ও বিপুল সাহা ফেনী শহরের চালের আড়তের মালিক। তার বাবা হরিপদ সাহার রেখে যাওয়ার চালের আড়তে ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকায় মায়ের খোঁজ নেননি তারা।
স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে অন্য বাসায় থাকেন তারা। অপর ছেলে সুশান্ত সাহা বিসিএস ক্যাডার। থাকেন কক্সবাজার। (অতিরিক্ত উপ পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, কক্সবাজার)। মেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শর্বরী সাহা ও গৃহিনী সুমি সাহা থাকে শ্বশুরালয়ে।
পুলিশ জানায়, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ পোদ্দার বাড়ির ওই বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে। এমন ঘটনায় স্থানীয়রা ঘৃণা জানান উচ্চশিক্ষিত ওই পরিবারকে।
ফেনীর সিভিল সার্জন হাসান শাহরিয়ার করিব জানান, বৃদ্ধা মা ভবিষ্যতে স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে ভুগতে পারে। তাকে অবজারবেশনে রাখা হয়েছে।
এসপি এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বাংলানিউজকে জানান, ওই বৃদ্ধা মাকে সন্তাররা মেরে ফেলার চক্রান্ত করছিল কি-না তা দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়ের প্রধান সমন্বয়ক মঞ্জিলা আক্তার মিমি বাংলানিউজকে বলেন, অসহায় মায়ের পাশে আছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সহায়ের সদস্যরা। সার্বিক দেখাশুনা মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে মায়ের প্রতি সন্তানদের এমন অমানবিক আচরণে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন।
অপরদিকে একাদিক উপায়ে চেষ্টা করেও এ ব্যাপারে সন্তানদের কোনো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসী বলছে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্তানদের আটক করেছে পুলিশ। অবশ্য পুলিশ আটকের ব্যাপারে কিছু জানায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৫১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৯
এসএইচডি/এএটি