“রেয়াল মাদ্রিদ বিশ্ব সেরা ক্লাব হয়েই থাকবে”, ভালদেবেবাসে সংবাদ সম্মেলনে এটাই হয়ে থাকল কার্লো আনচেলত্তির শেষ কথা। এর মধ্য দিয়ে শেষের দুয়ারে চলে এলো একটি যুগ। সাফল্য-ব্যর্থতার অনেক স্মৃতি নিয়ে প্রিয় রেয়াল মাদ্রিদ ছাড়তে চলেছেন অভিজ্ঞ ইতালিয়ান কোচ। রেয়াল সোসিয়েদাদ ম্যাচে শেষবার প্রিয় ডাগআউটে দাঁড়াবেন তিনি। দুই দফা মিলিয়ে ছয় বছরে অসংখ্যবার দাঁড়িয়েছেন যেখানে, দেখেছেন অনেক উত্থান-পতন। এর মধ্যে কিছু ম্যাচ দাগ কেটেছে তার মনে।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে ৯০ মিনিট প্রতিপক্ষের জন্য ‘অনেক বেশি’ সময়, দুই লেগের কোনো লড়াইয়ে এই মাঠে ফিরতি পর্ব সফরকারী দলগুলোর জন্য যেন দুঃস্বপ্নের-এই কথাগুলোকে সত্যি করে, আনচেলত্তির কোচিংয়ে এখানে ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক অনেক মহাকাব্য লিখেছে রেয়াল মাদ্রিদ। ভক্তরাও হয়তো বিস্ময় নিয়ে ভেবেছেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়!
৬ বছরে ১৫টি শিরোপা জিতেছেন আনচেলত্তি, রেয়ালে অন্য যে কোনো কোচের চেয়ে বেশি। উপহার দিয়েছেন তিনি অনেক জাদুকরি রাত। এর মধ্যে কোনটা সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে গেছে আনচেলত্তিকে?
“ওয়াও, এমন রাত অনেক, অনেক। এখান থেকে কেবল একটিকে বেছে নেওয়া খুব কঠিন। তবে আমি এখানে বেছে নেব ঘুরে দাঁড়ানো ম্যাচগুলোকে। কারণ, সেগুলো এমন কিছু যা এখনও ব্যাখ্যাতীত। অন্যগুলোর চেয়ে আমি এগুলোকে বেছে নেব। পিএসজির বিপক্ষে ম্যাচটা, ম্যানচেস্টার সিটি এবং চেলসির বিপক্ষে ম্যাচ। এগুলো আজীবন হৃদয়ে থাকবে, এগুলো অবিস্মরণীয়।”
২০২১-২২ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে পিএসজির মাঠে ১-০ গোলে হেরেছিল রেয়াল। ফিরতি লেগে ঘরের মাঠেও শুরুতে গোল হজম করেছিল তারা, এরপর দ্বিতীয়ার্ধের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে কারিম বেনজেমার হ্যাটট্রিকে জিতেছিল ৩-১ গোলে।
ওই আসরেই ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে সেমি-ফাইনালের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে
প্রথম লেগে ৪-৩ গোলে হারে রেয়াল। ফিরতি লেগে ঘরের মাঠের দ্বিতীয়ার্ধে ফের গোল হজম করে চলে গিয়েছিল বিদায়ের দুয়ারে। সেখান থেকে ৯০ ও ৯১ মিনিটে রদ্রিগোর দুই গোলে লড়াইয়ে ফেরে তারা। আর অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে পরে ব্যবধান গড়ে দেন বেনজেমা। দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৫ গোলের অগ্রগামিতায় ফাইনালে উঠে পরে শিরোপাও জিতে নেয় আনচেলত্তির দল।
এর আগে কোয়ার্টার-ফাইনালে ঘরের মাঠে প্রথম লেগে ৩-১ গোলে জিতে এগিয়ে যায় রেয়াল। ফিরতি লেগে চেলসির মাঠে ৭৯তম মিনিট পর্যন্ত ৩-০ গোলে পিছিয়ে ছিল তারা। ৮০তম মিনিটে রদ্রিগোর গোলে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নেয় রেয়াল। সেখানে ব্যবধান গড়ে দেন বেনজেমা।
চলতি মৌসুম শেষে রেয়াল ছাড়বেন লুকা মদ্রিচও। আনচেলত্তি রওনা হবেন নতুন গন্তব্যে- বিশ্বকাপের সফলতম দল ব্রাজিলে। একটা যুগের সমাপ্তি দেখছেন রেয়াল কোচ।
“আপনারা হয়তো মনে করতে পারেন, মদ্রিচের (বিদায়ের) মধ্য দিয়ে একটা সোনালী প্রজন্মের ইতি ঘটছে। তবে অন্য সব কিছুর মতোই এই প্রজন্মের এক সময়ে থামতেই হতো। আরও অনেকেই চলে গেছে- কাসেমিরো, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো… কিন্তু রেয়াল মাদ্রিদ এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে যাবে বিশ্বের সেরা ক্লাব হয়ে।”
আনচেলত্তির বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর তার সংবাদ সম্মেলনে ম্যাচ, প্রতিপক্ষ এসব হয়ে উঠেছে গৌন্য। মূখ্য হয়ে উঠেছে তার ভবিষ্যত ভাবনা, রেয়াল নিয়ে ভাবনা, তার কোচিং। এবার জিজ্ঞেস করা হলো ছয় বছরের মধ্যে কোনো ভুল নিয়ে সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ করেছেন তিনি?
“না, না (হাসি)। আমি জানি, আমি অনেক ভুল করেছি, হাজারো ভুল। তাই এত ভুল যেখানে করেছি, সেখানে আমি বলতে পারব না কোনটা আমাকে সবচেয়ে বেশি পীড়া দিয়েছে। তবে কোনো ভুলই আমাকে রাত জাগায়নি।”
খুশি মন নিয়ে রেয়াল ছাড়ছেন আনচেলত্তি। সোসিয়েদাদ ম্যাচ শেষ করে মনোযোগ দিতে চান পরের চ্যালেঞ্জ নিয়ে। তবে হৃদয়ে সবসময়ই রাখতে চান রেয়াল মাদ্রিদকে।
“অনুভূতি খুব, খুব ভালো। অন্য কোনো ক্লাবের জন্য যে রেয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে হয়নি সেজন্য আমি খুব খুশি এবং ইতিহাসের সফলতম দল, পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের দলে যোগ দিতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত। এটা হবে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ, তবে ব্রাজিলের হয়ে একটা বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হতে আমার খুব ভালো লাগবে।”