‘বাবা তুমি ফিরে এসো। আবার আমাকে আশীর্বাদ করো। তুমিই তো আমার সব। আজকের জিমি তোমাকে দেখে, তোমার আদর্শ মেনেই। প্লিজ, বাবা তুমি ফিরে এসো’, হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা বাবার দিকে তাকিয়ে আকুলতায় ভরা কথাগুলো মনের মধ্যে বার বার উচ্চারিত হয় রাসেল মাহমুদ জিমির। হবেই তো, একসময়কার দেশসেরা হকি খেলোয়াড়, কোচ এবং ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ খ্যাত আবদুর রাজ্জাক সোনা মিয়া আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। সিএমএইচ হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন সোনা মিয়া।



আবদুর রাজ্জাক সোনা মিয়া ছিলেন বাংলাদেশ হকির প্রাণ। বাংলাদেশ হকিতে তার ছদ্মনাম ছিল ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’। তিনি দীর্ঘদিন দেশসেরা ক্লাব আবাহনীতে খেলেছেন। বাংলাদেশের হকির সূতিকাগার পুরান ঢাকা আরমানিটোলার ছাত্র ছিলেন আবদুর রাজ্জাক সোনা মিয়া। ১৯৪৯ সালের ২ নভেম্বর গোলাম মোস্তফা লেনে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। শৈশব থেকেই তিনি বেড়ে ওঠেন ক্রীড়াময় পরিবেশে। আকৃষ্ট হন হকি, ফুটবল, ক্রিকেট খেলায়। পিতা-মাতার একমাত্র ছেলে হওয়ায় বাধাহীন ছিল তার শৈশব। পারিবারিকভাবে তাকে কোনো গঞ্জনা সইতে না হওয়ায় খেলাধুলায় মেতেছেন মনের আনন্দে। আরমানিটোলা স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর খুলে যায় তার স্বপ্নের দুয়ার। ১৯৬৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি ভর্তি হন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে। তাতে অবশ্য ক্রীড়াচর্চা একটুও কমেনি। কলেজেও পেয়েছেন খেলাধুলার অবারিত দ্বার। অল্প বয়সেই প্রথম বিভাগ হকি লীগে খেলার আমন্ত্রণ পান। আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে শুরু করেন খেলা। একবছর আজাদে খেলে ১৯৬৩ সালে যোগ দেন কম্বাইন্ড স্পোর্টিং ক্লাবে। একটানা চার বছর খেলার পর ১৯৬৭ সালে চলে যান ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে। পরের বছর থেকে তার ঠিকানা হয় পিডব্ল–ডি ক্লাবে। পিডব্ল–ডিতে কর্মরত অবস্থায় বিশেষ অনুমতি নিয়ে ১৯৭২ সাল থেকে খেলেন নতুন ক্লাব আবাহনী ক্রীড়াচক্রে। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত খেলেন এ ক্লাবে।

আবাহনীর হয়ে খেলার সময়েও কোচের দায়িত্ব পালন করেন সোনা মিয়া। এরপর আবাহনী ও অ্যাজাক্সের পর মেরিনার্সের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ সালে প্রথম মহিলা হকি দলের কোচ ছিলেন। ১৯৮৪ সালে জাতীয় হকি দলের কোচের দায়িত্বও পালন করেন সোনা মিয়া। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় এশিয়ান কাপ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রতাপ শংকর হাজরার সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জুনিয়র ওয়ার্ল্ড কাপে অংশ নেয়া বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন সোনা মিয়া। সেবার বাংলাদেশ দল চতুর্থ হয় এবং ফেয়ার-প্লে ট্রুফি জেতে। এছাড়া প্রথম গ্রেডের একজন আম্পায়ার এবং হকি ফেডারেশনের সদস্যও ছিলেন আবদুর রাজ্জাক সোনা মিয়া।

বার্ধক্য আগেই ছুঁয়েছে সোনা মিয়াকে। লাঠিতে ভর করে মাঝেসাঝে আসতেন প্রিয় হকি স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ হকির ৪০ বছর পূর্তিতেও এসেছিলেন টার্ফে। এরপর খুব একটা দেখা যেত না তাকে। বয়সের ভারে (৭১ বছর) কিছুটা কাবু হয়ে পড়া সাবেক জাতীয় দলের এই তারকা খেলোয়াড় সাম্প্রতিক সময়ে বাসা থেকে খুব একটা বেরুতেন না। বাসায় বসেই ছেলে রাসেল মাহমুদ জিমির কাছ থেকে নিতেন হকির খোঁজখবর। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) হয়েছিল আগেও একবার। সোমবার হঠাৎ করেই দ্বিতীয়বারের মতো স্ট্রোক করেন সোনা মিয়া। মেঝেতে পড়ে গিয়ে ডান পায়ের উপরের অংশের হাড় ভেঙে যায়। এতেই জ্ঞান হারান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। সেখানেই চলছে তার চিকিৎসা। জিমির কথায়, ‘যখন বাবাকে হাপাতালে নিয়ে আসি, তখন ওনার জ্ঞান ছিল না। খুব খারাপ লাগছিল। তবে ধীরে ধীরে তিনি চোখ মেলেন। আগে এইচডিওতে থাকলেও এখন মুখে হালকা কথা বলতে পারছেন। তাই এখন ভালো লাগছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘আসলে বাবার কাছেই আমার হকির হাতেখড়ি। বাবার হকিস্টিক নাড়াচাড়া করতে করতেই আমি খেলা শিখেছি। তাই আমার সত্তাজুড়েই আমার বাবা। যাকে না দেখলে আমি এক দণ্ডও শান্তি পাই না। বিদেশে গেলেও আমি বাবার খোঁজ নিই আগে। সারাক্ষণ মনে হয়, আব্বু কী করছেন? ঠিকমতো খাচ্ছেন তো? আসলে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরেই তিনি অসুস্থ। প্রথম স্ট্রোক করে বাসার চার দেয়ালে বন্দি ছিলেন। মাঝে মাঝেই আমাকে নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের কথা বলেন। আমার কাছ থেকে হকির বর্তমান খবর জেনে নেন। সাত দিন ধরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা একসময়কার এই কৃতী খেলোয়াড়কে দেখতে আসেননি হকির কোনো কর্মকর্তা। জিমির কথায়, ‘সবাই জানেন, বাবার এই অবস্থার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউই একনজর দেখতে আসেননি। আসলে হকির বাস্তব অবস্থাই এটা। এতে আমার কোনো দুঃখ নেই।’আবদুর রাজ্জাক সোনা মিয়া ছিলেন বাংলাদেশ হকির প্রাণ। বাংলাদেশ হকিতে তার ছদ্মনাম ছিল ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’। তিনি দীর্ঘদিন দেশসেরা ক্লাব আবাহনীতে খেলেছেন। বাংলাদেশের হকির সূতিকাগার পুরান ঢাকা আরমানিটোলার ছাত্র ছিলেন আবদুর রাজ্জাক সোনা মিয়া। ১৯৪৯ সালের ২ নভেম্বর গোলাম মোস্তফা লেনে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। শৈশব থেকেই তিনি বেড়ে ওঠেন ক্রীড়াময় পরিবেশে। আকৃষ্ট হন হকি, ফুটবল, ক্রিকেট খেলায়। পিতা-মাতার একমাত্র ছেলে হওয়ায় বাধাহীন ছিল তার শৈশব। পারিবারিকভাবে তাকে কোনো গঞ্জনা সইতে না হওয়ায় খেলাধুলায় মেতেছেন মনের আনন্দে। আরমানিটোলা স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর খুলে যায় তার স্বপ্নের দুয়ার। ১৯৬৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি ভর্তি হন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে। তাতে অবশ্য ক্রীড়াচর্চা একটুও কমেনি। কলেজেও পেয়েছেন খেলাধুলার অবারিত দ্বার। অল্প বয়সেই প্রথম বিভাগ হকি লীগে খেলার আমন্ত্রণ পান। আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে শুরু করেন খেলা। একবছর আজাদে খেলে ১৯৬৩ সালে যোগ দেন কম্বাইন্ড স্পোর্টিং ক্লাবে। একটানা চার বছর খেলার পর ১৯৬৭ সালে চলে যান ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে। পরের বছর থেকে তার ঠিকানা হয় পিডব্ল–ডি ক্লাবে। পিডব্ল–ডিতে কর্মরত অবস্থায় বিশেষ অনুমতি নিয়ে ১৯৭২ সাল থেকে খেলেন নতুন ক্লাব আবাহনী ক্রীড়াচক্রে। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত খেলেন এ ক্লাবে।আবাহনীর হয়ে খেলার সময়েও কোচের দায়িত্ব পালন করেন সোনা মিয়া। এরপর আবাহনী ও অ্যাজাক্সের পর মেরিনার্সের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৮ সালে প্রথম মহিলা হকি দলের কোচ ছিলেন। ১৯৮৪ সালে জাতীয় হকি দলের কোচের দায়িত্বও পালন করেন সোনা মিয়া। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় এশিয়ান কাপ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রতাপ শংকর হাজরার সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জুনিয়র ওয়ার্ল্ড কাপে অংশ নেয়া বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন সোনা মিয়া। সেবার বাংলাদেশ দল চতুর্থ হয় এবং ফেয়ার-প্লে ট্রুফি জেতে। এছাড়া প্রথম গ্রেডের একজন আম্পায়ার এবং হকি ফেডারেশনের সদস্যও ছিলেন আবদুর রাজ্জাক সোনা মিয়া।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews