সরকারের চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের গত জানুয়ারি মাসের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রচার সংখ্যা ৫ লাখ ২১ হাজার ২১১ কপি। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রথম আলোর প্রচার সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ৮৪১ কপি।

পরবর্তীতে ২ লাখ ৯০ হাজার ২৫০ কপি প্রচার সংখ্যার কাতারে আছে আমার দেশ, নয়াদিগন্ত, যুগান্তর, কালবেলা, দিনকাল, আমাদের সময়, ইত্তেফাক ও জনকণ্ঠ। অথচ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের পরামর্শে সেই জানুয়ারি মাসেই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জরিপ করে দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, দেশের ৫৭ ভাগ পাঠকই প্রথম আলো পড়ে। সেখানে বাংলাদেশ প্রতিদিন পড়ে মাত্র ৩২.৮১ ভাগ পাঠক। প্রচার সংখ্যায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা পত্রিকাগুলোর পাঠক ৬ থেকে সর্বোচ্চ ২১ শতাংশ।

প্রতিবেদনটির বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংবাদপত্র হকার সমিতির নেতৃবৃন্দ ও এজেন্টরা। তারা বলেন, প্রচার সংখ্যায় শীর্ষে থাকা পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠক কীভাবে প্রচার সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রথম আলোর চেয়ে কম হয়, তা তারা বুঝতে পারছেন না। প্রতিবেদনে পাঠক আছে বলে এমন কিছু পত্রিকার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোর নামই তারা শোনেননি বলে জানান। উল্লেখ্য, প্রথম আলোয় প্রকাশিত জরিপ কাজটি সম্পন্ন করতে সরকারের ৪ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদনটিকে আজগুবি ও সরকারি টাকায় প্রথম আলোর প্রচারণা হিসেবে দেখছেন গণমাধ্যমসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান এক সময় প্রথম আলোর সঙ্গে ছিলেন। সেই কমিশনের পরামর্শে এ জরিপ করেছে বিবিএস। এখানে বিবিএসকে দিয়ে ভুয়া জরিপ করিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রথম আলোর পক্ষে প্রচারণা চালানো হয়েছে। তারা বলছেন, সরকারি টাকায় দেশের কত ভাগ মানুষ পত্রিকা পড়ে সেটা জানার জন্য জরিপ হতে পারে, কিন্তু কোন পত্রিকার পাঠক বেশি তা জানার চেষ্টা করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আর এ হিসাব দিতে পারবে সংবাদপত্র এজেন্টরা। সংবাদপত্র হকার ও এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো তথ্য না নিয়ে মনগড়া পক্ষপাতদুষ্ট জরিপের পেছনে সরকারের ৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পরিচালিত জরিপটির পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। শুধু জরিপ চালাতে প্রায় ২ কোটি ২৬ লাখ ও সম্মানী বাবদ প্রায় ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ছাড়া মূদ্রণ, প্রচারণাসহ অন্যান্য ব্যয় রয়েছে।

এদিকে, বিবিএসের ওই প্রতিবেদনটিকে গোঁজামিল ও ঘরে বসে করা জরিপ বলেও মনে করছেন অনেকে। সরকারি হিসাবে সারা দেশে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ১ হাজার ৩৬৯টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর থেকেই প্রকাশ হয় ৫৬১টি। জরিপে মাত্র ৬৮টি পত্রিকার (কিছু পত্রিকার নাম জানা নেই ও কিছু স্থানীয় পত্রিকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে) কথা বলা হয়েছে। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী প্রচার সংখ্যায় নবম স্থানে থাকা দেশ রূপান্তর পত্রিকার পাঠক সংখ্যা দেখানো হয়েছে শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ। প্রচার সংখ্যায় ২২তম স্থানে থাকা ভোরের কাগজের পাঠক সংখ্যা দেখানো হয়েছে শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ। জরিপে আরও কিছু উদ্ভট তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো হলো- ইংরেজি পত্রিকার পাঠক শহরের চেয়ে পল্লী এলাকায় বেশি। শুধু তাই নয়, পুরুষদের চেয়ে নারীরা ইংরেজি পত্রিকা বেশি পড়েন। বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকাটির একজন পাঠকও খুঁজে পাননি জরিপকারীরা। একইভাবে রংপুর ও সিলেট বিভাগে বণিক বার্তার এবং বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে নিউ এজ পত্রিকার একজন পাঠকও পাননি জরিপকারীরা।

এদিকে, বিবিএসের ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চার মাস পর গতকাল ‘দেশে পত্রিকার পাঠকদের ৫৭% প্রথম আলো পড়েন’ শিরোনামে প্রথম আলোর প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছেন খোদ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য জিমি আমির। গতকাল তিনি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, জানুয়ারিতে পরিচালিত জরিপের তথ্য নিয়ে প্রথম আলো চার মাস পর এসে আবার কেন রিপোর্ট প্রকাশ করল তা অবাক হওয়ার মতোই ঘটনা বৈকি! আদতে চার মাস আগের রিপোর্ট নতুন খবর হতে পারে কি না সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। জরিপের একটি অংশ ব্যবহার করে চার মাস পর নিজেদের আধিপত্যই কি নতুন করে প্রকাশ করল তারা?

বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার এজেন্ট ও হকার সমিতির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, কোনো জরিপকারী সংস্থা পত্রিকার সংখ্যা জানতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। খুলনা জেলার এজেন্ট আবু তৈয়ব বলেন, জেলায় বাংলাদেশ প্রতিদিন বিক্রি হয় ৪ হাজার ৮০০ কপি ও প্রথম আলো বিক্রি হয় ১ হাজার ৭০০ কপি। বিবিএসের প্রতিবেদনে পাঠক সংখ্যায় অনেক পত্রিকাকে পেছনে ফেলা জনবাণী, বর্তমান, বাংলাদেশ বুলেটিন পত্রিকা তিনি কখনো দেখেননি। যশোরের এজেন্ট ইজাহার আলী জানান, তিনি প্রতিদিন প্রথম আলো ৭৬০ কপি, বাংলাদেশ প্রতিদিন ১ হাজার ৫৯৫ কপি বিক্রি করেন। রাজশাহীর এজেন্ট মো. শহিদুল্লাহ বলেন, বিবিএসের জরিপে মুক্তখবর, ঢাকা প্রতিদিন, গণকণ্ঠ, বাংলাদেশ সমাচার, ভোরের দর্পণ এমন অনেক পত্রিকার ভালো পাঠক থাকার কথা বলা হয়েছে। তবে তিনি এ পত্রিকাগুলো কখনো দেখেননি, কয়েকটির নামও শোনেননি। এই এজেন্ট জানান, প্রতিদিন তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিন ৩ হাজার ৭০০ কপি, প্রথম আলো ৩ হাজার ১০০ কপি বিক্রি করেন। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রচার সংখ্যায় শীর্ষে অবস্থান করছে এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে প্রথম আলো।

বিডি প্রতিদিন/নাজিম



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews