বক্সিংয়ে ইতিহাস গড়া জিনাত

নেলসন ম্যান্ডেলা কাপ আন্তর্জাতিক বক্সিং প্রতিযোগিতা

জিনাত ফেরদৌস। ২৩ এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বক্সিংয়ে ইতিহাস গড়লেন তিনি। ২৭ দেশের বক্সারদের অংশগ্রহণে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ম্যান্ডেলা কাপ আন্তর্জাতিক বক্সিং কম্পিটিশনের ফাইনালে ৫০ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্বর্ণ জয় করেন জিনাত। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন জসিম উদ্দিন আকাশ

২৩ এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আফ্রিকায় বক্সিংয়ে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের নারী বক্সার জিনাত ফিরদৌস। দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অনুষ্ঠিত ম্যান্ডেলা কাপ আন্তর্জাতিক বক্সিং কম্পিটিশন-২০২৪-এর ফাইনালে ইথিওপিয়ার সেরা বক্সার গাজিয়া বেথেলহামকে হারিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জয় করেন জিনাত। ২৭ দেশের বক্সারদের অংশগ্রহণে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই টুর্নামেন্টে ৫০ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্বর্ণ জয়ের পর জিনাত বলেন, ‘এই জয়ের অভিজ্ঞতা কাজে দেবে আসন্ন প্যারিস অলিম্পিকের বাছাই পর্বে।’ ইন্টারন্যাশনাল বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় দক্ষিণ আফ্রিকায় এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আফ্রিকান বক্সিং কাউন্সিল।

বাঁকবদলের গল্প
জিন্নাত ফিরদৌসের বক্সিংয়ে আবির্ভাব ২০২৩ সালে হঠাৎ করেই। ২০২৩ সালের মধ্য জুলাইয়ে জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের আমন্ত্রণে ২৯ বছর বয়সী জিনাত এসেছিলেন ঢাকায়। রিংয়ে উঠে বাংলাদেশি বক্সারদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। তাঁর পারফরম্যান্সে ছড়িয়েছে মুগ্ধতা। তাতে খুলে যায় স্বপ্নের দুয়ার। কিন্তু এশিয়ান গেমসে খেলতে হলে বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকতে হবে। এর সঙ্গে লাগবে নিউইয়র্কের যেখানে বক্সিং খেলেন, সেখানকার অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতি। তাঁর স্বপ্নপূরণের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদক জয়ের আশায় বিওএর কর্তারাও চালিয়ে যান সব চেষ্টা। প্রচেষ্টার ফল লাল-সবুজের হয়ে এশিয়াডে রিংয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জিনাত।

যদিও প্রথম বিশ্বমঞ্চে তেমন ভালো কিছু

করতে পারেননি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত কোচের কাছে ট্রেনিং চালিয়ে যান জিনাত। এবার তাঁর ঝুলিতে ধরা দিয়েছে সাফল্য।

বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম তুহিন বলেন,পারফরম্যান্স, অভিজ্ঞতা ও ফাইটিং দক্ষতা খুবই ভালো। আগামী মাসে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে

যাওয়া প্রতিযোগিতায়ও তাঁর কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করতে পারি।’

জন্ম ও বেড়ে ওঠা
জিনাতের জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাস্টোরিয়ায়। দুই ভাইবোন। জিনাত ফিরদৌস ও নজমুল ফিরদৌস নাজ। বাবা বেলায়েত ফিরদৌস। মা শাহনাজ ফিরদৌস তুলি। বাবার বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জে এবং মায়ের বাড়ি পাবনায়। ১৯৮৭ সালে এই দম্পতি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে জন্ম নিলেও নিছক ঘোরার জন্য পাঁচবার বাংলাদেশে এসেছিলেন জিনাত। জন্ম যে দেশেই হোক না কেন; জিনাত ফিরদৌসের পরিচয় এখন তিনি বাংলাদেশি। উন্নত সুযোগ-সুবিধা এবং প্রবাসী জীবনকে তুচ্ছ বানিয়ে নাড়ির টানই লাল-সবুজের দেশে নিয়ে এসেছে তাঁকে। মার্কিন প্রবাসী বক্সার জিনাত ফিরদৌস নিশ্চয়ই আগামীতে হয়ে উঠবেন দেশের বক্সিংয়ের পোস্টারগার্ল!

পারিবারিক শিক্ষা ও স্বপ্নের পথে ছুটে চলা
জন্ম থেকেই স্বাধীনচেতা মা-বাবা জিনাতের ওপর কোনো ইচ্ছাই চাপিয়ে দেননি। মেয়ের ইচ্ছার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই তো জিনাত নিজ গরজে এবং নিজ ইচ্ছাতেই জীবনের মূল্যবান সময়কে ধারণ করে নিজের স্বপ্নের ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। বাবা-মা একসঙ্গে মেয়ের খেলা দেখেছেন ম্যানহাটান, ম্যাডিসন স্কয়ারের গার্ডেন ও টোলসা ওকলাহামা সিটিতেও। ম্যানহাটানের সেই গ্যালারিতে যেখানে মুহুমুর্হু করতালিতে দুই রমণীকে মঞ্চে তোলা হলো। হলরুম পরিপূর্ণ। একজন জিনাত ফিরদৌস, অন্যজন মার্কিন জু হিক্স। বলতে গেলে দু’জনই মার্কিন। কারণ জিনাত জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। একজন করে ফাইটার রাউন্ডে নামতেই হল করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে। ম্যাডিসন স্কয়ারের গার্ডেন ওয়েস্টে জুয়ানা ডুলেকা ও জিনাত ফিরদৌসের সেই খেলাও চোখে পানি এনে দেয় বাবা-মায়ের; যখন জয়ের ঘোষণা এলো, তখন জিনাতের চোখের পাতাও বারবার ভিজে উঠছিল। জয়ের আনন্দের যে আনন্দাশ্রু এত মধুর হয় জিনাতের রক্তিম মুখই তার প্রমাণ। এর পর যেদিন ন্যাশনাল গোল্ডেন

ক্লোজে

দ্বিতীয় স্থান পায় সেদিনের কথা মনে করে তো আজও স্মৃতিকাতর হন বাবা বেলায়েত ফিরদৌস ও মা শাহনাজ ফিরদৌস তুলি!
জিনাত বলেন, ‘একসময় বাবা আমাকে রাগী মনে করলেও তিনি আমার বক্সিং দেখেন। একবার খেলা দেখে বাবা বলেন, মোহাম্মদ আলির মতো দেখাচ্ছে তোমাকে। আর পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগিয়ে নিজের প্রথম পুরস্কারের টাকা ডোনেট করেছি ক্যান্সার

আক্রান্তদের জন্য।’

আগামীর স্বপ্ন
জিনাত লাল-সবুজের হয়ে খেলতে চান স্বপ্নের অলিম্পিকে। তাই তাঁর ভাবনজুড়েই ২০২৪ সালে প্যারিস অলিম্পিক। আগামী মাসে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অলিম্পিক বক্সিং বাছাইয়ে তিনি বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন। থাইল্যান্ডে অংশ নেবেন হাংজু এশিয়াডে পদকের কাছাকাছি পৌঁছানো সেনাবাহিনীর বক্সার সেলিম হোসেনও। আরও দুই বক্সার থাইল্যান্ডে যাবেন। তারা হলেন– এশিয়াডে সেলিম ও জিনাতের সঙ্গে অংশ নেওয়া আবু তালহা ও হোসেন আলী। জিনাতদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ! u



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews