দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে দেশপ্রেমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের বিদ্যালয়ে শপথবাক্য পড়ানো হয়- ‘মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখিব এবং দেশের প্রতি অনুগত থাকিব’। কিন্তু বড় হয়ে এর কতটুকু মানুষের মনে থাকে বা মান্য করা হয়? আমরা কি পারি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের হতাশ হতে হয়।

আমরা কেন পারছি না বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে? কারণ একটাই- মুখে আমরা যতই দেশপ্রেমের আওয়াজ তুলি না কেন, কাজকর্মে তার বড়ই অভাব। বিদ্যালয়ে শিশুদের কাছ থেকে যখন জানতে চাওয়া হয়, বড় হয়ে তোমরা কী হবে; বেশিরভাগই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ বা শিক্ষক হতে চায়। চোখেমুখে তাদের তৃপ্তির হাসি লেগে থাকে। আমরাও তৃপ্ত হই। স্বাধীনতা অর্জন করেছি বলেই আজ আমরা বড় বড় স্বপ্ন দেখছি। পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকলে বহু উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন সত্ত্বেও হয়তো কেরানির চাকরিই করতে হতো।

বড় হয়ে যখন আমাদের প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছতে পারি, তখন লোভ, উদাসীনতা, হিংসা, ক্রোধ বাড়তে থাকে। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও ভালোবাসা ধীরে ধীরে কমে যায়। আমরা আমাদের সুমহান আদর্শ আর ধরে রাখতে পারি না, যা আমাদের কৃতকর্মের মাধ্যমেই ফুটে ওঠে।

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের হাত দিয়েই সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ গড়ে উঠবে। শিশুদের শুধু শপথবাক্য পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এর তাৎপর্য ও আবেদন তাদের অন্তরে গেঁথে দিতে হবে। দেশের প্রতি দায়িত্ব ও ভালোবাসা যেন তাদের মন থেকে আসে। তাহলেই ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে খালি পায়ে প্রভাতফেরিতে যাওয়া শিশুটি বড় হয়ে জুতা পায়ে দিয়ে শহীদ মিনারে উঠবে না। ছোটখাটো ইস্যুতে রাস্তায় গাড়ি ভাঙবে না। মাদক বা ধর্ষণ নামক সামাজিক ব্যাধিতে নিজেকে কলুষিত করবে না।

প্রতিটি জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের মুগ্ধ করে। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকার প্রতি তাদের ভালোবাসায় স্পস্টতই দেশপ্রেম ফুটে ওঠে। এ আবেগ, এ অকৃত্রিম ভালোবাসা আজীবন ধরে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ দেশ, এ পতাকা কেউ আমাদের করুণা করে দেয়নি। বহু ত্যাগ আর প্রাণের বিনিময়ে আমরা এসব পেয়েছি। এ দেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলে ভাষা, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে জাতীয় অর্জনের সুফল ভোগ করতে হবে এবং সত্যিকার অর্থে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে।

পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ আর পরমতসহিষ্ণুতা দেশপ্রেমেরই অংশ। সহপাঠীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার, তাদের প্রতি আন্তরিকতা, অপরের দুঃখে পাশে দাঁড়ানো- শিশুদের এসব শেখাতে হবে এবং তাতে অভ্যস্ত করতে হবে। পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ, মা-বাবা ও শিক্ষকদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার, সর্বদা সত্য বলা, নৈতিকতার অভ্যাস প্রাথমিক পর্যায়েই আয়ত্ত করতে হবে।

আসুন, আমরা আমাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করি। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জানাতে সহযোগিতা করি। দেশের মঙ্গল হয় এমন কাজ করতে উৎসাহ দেই এবং মানুষের তথা দেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করতে তাদের নিরুৎসাহিত করি। আমরা শিশুদের সঠিক পথে পরিচালনা করতে যদি না পারি, তাহলে সত্যিকার অর্থে সোনার বাংলা গড়া হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে।

লাখো শহীদের রক্তে ভেজা এ দেশের কল্যাণে কাজ করব আমরা- এই হোক সবার অঙ্গীকার।

মুহাম্মদ মুহীউদ্দীন : সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews