নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য সস্তা, দাম বাড়ানোর দাবি

২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবধরনের তামাকপণ্যের দাম কার্যকরভাবে বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা)। 

আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও মূল্যসংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে সংগঠন দুটি।

সংবাদ সম্মেলনে তামাক কর ও মূল্যবিষয়ক বাজেট প্রস্তাব সমর্থন করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য ক্রমান্বয়ে সস্তা হয়ে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তামাকের কারণে লাখ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু, অসুস্থতা, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি প্রভৃতি বিবেচনায় এনে আসন্ন বাজেটে সবধরনের তামাপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।’ 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘বর্তমানে পঁচাত্তর শতাংশ সিগারেট ব্যবহারকারী নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তা। অথচ এই স্তরে সম্পূরক শুল্কহার মাত্র ৫৮ শতাংশ, এটা বাড়িয়ে কমপক্ষে ৬৩ শতাংশ করা হলে সিগারেটের ব্যবহার কমবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে। এই বর্ধিত রাজস্ব চলমান আর্থিক সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’

সংবাদ সম্মেলনে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত সাতটি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরামূল্য বিশ্লেষণ করে দেখানো হয় যে, ২০২১ সালের (৪ জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালে (৪ জুলাই) খোলা চিনির দাম বেড়েছে ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙাস মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়া দুধ ৩০ শতাংশ, এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একইসময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।

সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যে কর ও মূল্যবৃদ্ধির যেসব দাবি তুলে ধরা হয় সেগুলো হচ্ছে- নিম্নস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। মধ্যম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরামূল্য ৬৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা, উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১১৩ টাকা থেকে ১৩০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরামূল্য ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা। এই তিনটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ বহাল রাখা।

ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরামূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এছাড়া সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্যপ্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় পাঁচ লাখ তরুণসহ ১১ লাখের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু থামানো সম্ভব।

বক্তারা জানান, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে তামাকখাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয় ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকার চেয়ে অনেক বেশি।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) প্রোগ্রামস ম্যানেজার (বাংলাদেশ) মো. আব্দুস সালাম, আত্মা’র কনভেনর মতুর্জা হায়দার লিটন এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতা বক্তব্য দেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews