স্বনামধন্য অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান তার ভাই সৈয়দ আলী আশরাফ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক। এ রকম দৃষ্টান্ত শুধু আর একটিই সম্ভবত রয়েছে। কবীর চৌধুরী ও মুনীর চৌধুরী দুই ভাই কিছু সময়ের ব্যবধানে ইংরেজি ও বাংলার শিক্ষক হয়েছিলেন

স্বনামধন্য অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান। বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকে তিনি ও তার ভাই সৈয়দ আলী আশরাফ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক। এরকম দৃষ্টান্ত শুধু আর একটিই সম্ভবত রয়েছে। কবীর চৌধুরী ও মুনীর চৌধুরী দুই ভাই কিছু সময়ের ব্যবধানে ইংরেজি ও বাংলার শিক্ষক হয়েছিলেন।
আজকাল দেশী-বিদেশী নানা সাহিত্যকর্মের ইন্টারনেট প্রদত্ত তথ্য নিয়ে আমাদের সংস্কৃতিসেবীরা এত ব্যতিব্যস্ত থাকছেন যে, এই দুই জোড়া অতি বিখ্যাত সাহিত্যসাধকের মূল্যায়ন ও তাদের অর্জন থেকে শিক্ষাগ্রহণ খুব প্রয়োজনীয় বলে যেন আমলই দিচ্ছেন না। যা হোক, আপাতত এই নগণ্য রচনার প্রধান উদ্দেশ্য হলো দু’টি। প্রথমত, দুই সৈয়দ-ভ্রাতা সম্পর্কে কিছু প্রামাণ্য ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরবরাহ করা এবং ভবিষ্যৎ গবেষকদের জন্য তাদের গুরুত্ব বিষয়ে সচেতন করা। সম্প্রতি আমার স্ত্রী নাসরীনের তৎপরতায় তার ফুফাতো ভাই সুজা ওরফে সৈয়দ ইজ্জত আলী রুমী সাহেবের কাছে রক্ষিত সৈয়দ-ভ্রাতাদের পিতা সৈয়দ আবু হামেদ সাহেবের স্বহস্তলিখিত তার সন্তান-সন্ততির জন্মবৃত্তান্ত পাওয়া গেছে। ইংরেজিতে লেখা এই তথ্যকুঞ্জে লেখা রয়েছে :
২৬ শে মার্চ ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে
১৩ চৈত্র ১৩২৬ বঙ্গাব্দে



৪ঠা রজব ১৩৩৮ হিজরি সালে যশোর (বর্তমানে মাগুরা) জেলার আলোকদিয়া গ্রামে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় তার প্রথম পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। নাম ঠিক করা হয় আবু হামেদ আলী আহসান। উল্লেখ্য, এর আগে তার দুই কন্যার জন্ম হয়। প্রথম কন্যা সুলতানা বানুর প্রথম সন্তান ফজলে রাব্বি এবং দ্বিতীয় কন্যার অন্যতম ছেলে আমাদের সুজা ভাই। এরপর ১৯২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আলী আহসান সাহেবদের এক ভাই, যার নাম সম্ভবত আলী আকবর, তার জন্ম হয় কিন্তু জন্মের সাত মাস পর তার মৃত্যু ঘটে। এরপর ১৯২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি, ১৬ মাঘ ১৩৩০ বঙ্গাব্দ, ২২ জমাদিউস সানি, বুধবার রাত ১০টায় আগলায় জন্ম হয় আলী আশরাফ সাহেবের। তখন তার নাম দেয়া হয় আবু নসর আলী আশরাফ (পরে তিনি প্রফেসর ড. সৈয়দ আলী আশরাফ নামে সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য, ক্যামব্রিজ, হার্ভার্ড প্রভৃতি এলাকায়/বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত ও বিখ্যাত হন। বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তিনি অন্যতম প্রবক্তা এবং দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় তার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। সমগ্র বিশ্বে ইসলামি শিক্ষাপদ্ধতির অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো উপলব্ধি করানোর কাজটি ছিল তার জীবনসাধনা। অথচ তিনি ছিলেন আধুনিক ইংরেজি কবিতার অন্যতম রসগ্রাহী সমালোচক ও সাহিত্যের সমাজতত্ত্ব বিষয়ে একজন প্রাথমিক গবেষক।


অন্যত্র সৈয়দ আলী আহসান, যিনি বড় ভাই তার প্রথম ও প্রধান ক্ষেত্র ছিল কাব্যভুবন। সে ক্ষেত্রে তিনি ইসলামি ধারায় ফররুখ আহমদের সহযোগে নতুন নির্মাণের প্রয়াস পেয়েছিলেন। পরে আধুনিক পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে বাংলা কবিতা এবং স্বাজাত্যবোধের ক্ষেত্রে নতুন অবদান রেখেছেন বলা যেতে পারে। তা ছাড়া অনবদ্য গদ্য রচনা এবং বাগ্মিতায় তিনি স্বতন্ত্র স্রষ্টারূপেও খ্যাতি পেয়েছেন। সংস্কৃতির সংজ্ঞা নির্মাণে কিংবা বিবিধ সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গকে রূপদানের ক্ষেত্রে তিনি বিশ্ব মনীষীদের মধ্যে যে উচ্চতর আসন পাবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইসলামি চিন্তাধারায় তার কিছু স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত চিন্তাধারা ছিল। কানাডীয় প্রাচ্য বিদ্যাবিষয়ক পণ্ডিত ড. জোসেফ টি ও কনেল এ সম্পর্কে কিছু গবেষণা করছিলেন জানতাম। দুর্ভাগ্যবশত, অকালমৃত্যু তার এই গবেষণা আমাদের কাছে উপস্থাপিত হয়নি। দুই ভাইয়ের মধ্যে আধুনিক বিশ্বে ইসলামের মাহাত্ম্য নিয়ে মাঝে মধ্যে কিছু তর্কবিতর্কে আমরা কয়েকজন তাদের কম বয়সী অনুরাগী দর্শকের ভূমিকা পালন করেছি। সৈয়দ আলী আহসানের চিন্তায় রাসূলুল্লাহ সা: ছিলেন পূর্ণাঙ্গ আদর্শ মানব এবং সে সুবাদে তিনি সঙ্গীত শিল্পকলায়ও বিশেষ অনুরাগী। কিন্তু ড. আলী আশরাফ এ নিয়ে হাসিচ্ছলে বলতেন, ‘ভাইজান আপনি এগুলো কোথায় পেলেন?’ বড় ভাইজান তখন কাবা অধিকারের কালে হজরত সা: স্বয়ং মাতা মরিয়মের (আ:) একটি চিত্ররক্ষার যে প্রয়াস নিয়েছিলেন সে গল্প প্রায়ই বলতেন। মদিনায় বালকদের দফ বাজিয়ে সঙ্গীত পরিবেশনের সময় অন্যতম শ্রোতা মহানবীর কথা গোলাম মোস্তফা তার বিশ্বনবীতে লিখে গেছেন। যা হোক, এসব সত্ত্বেও ছোট ভাই যিনি আমাদের অনেকের মেঝ চাচা বা মেঝ মামা, বিশ্বাস করতেন তার বড় ভাই একজন অনুরাগী ইসলাম বিশেষজ্ঞ তবে হয়তো একটু কম আধুনিক বা ধর্মনিরপেক্ষ হলে ভালো হতো।
মোদ্দাকথা, দুই সৈয়দ-ভ্রাতার জীবনসাধনা এখন আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিষয়বস্তু। উপযুক্ত ব্যক্তিদের হাতে আমরা তার বিচার বিশ্লেষণ কামনা করি, যাতে আমাদের সামগ্রিক জীবোন্নয়নে তার প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে অনুভূত হয়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews