৯২. আবার সে (রাজ্য জয়ের জন্য) পথচলা শুরু করল।

৯৩. চলতে চলতে যখন সে দুই প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছল তখন সেখানে এমন এক জাতির সাক্ষাৎ পেল, যারা কোনো কথা বোঝার মতো ছিল না। (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৯২-৯৩)

তাফসির : আগের কয়েকটি আয়াতে বাদশাহ জুলকারনাইনের কয়েকটি সফরের কথা বলা হয়েছিল। সেসব ভ্রমণ ছিল রাজ্য জয়ের উদ্দেশ্যে। আলোচ্য আয়াতে তাঁর তৃতীয় ভ্রমণ নিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, বাদশাহ জুলকারনাইন এমন একটি এলাকায় পৌঁছেছেন, যার অধিবাসীরা সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক থেকে অত্যন্ত অনুন্নত ও পশ্চাৎপদ ছিল। তাদের কোনো কথা বোঝার মতো ছিল না। তাদের এক গোত্রের সঙ্গে আরেক গোত্রের কোনো যোগাযোগ কিংবা সম্পর্কও ছিল না।

আলোচ্য দ্বিতীয় আয়াতে দুই প্রাচীরের কথা বলা হয়েছে। এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে তাফসিরবিদ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এই দুটি প্রাচীর হলো দুটি পাহাড়। জুলকারনাইন ইয়াজুজ-মাজুজের অত্যাচার থেকে রক্ষার জন্য এই দুই পর্বত-প্রাচীর নির্মাণ করেছেন। (বাহরুল উলুম : ২/৩১২; সাফওয়াতুত তাফাসির : ২/১৮৯)

তবে এই দুটি পাহাড় কোথায় অবস্থিত, তা নিয়ে তাফসিরবিদদের মতপার্থক্য দেখা যায়।

‘তাফহিমুল কোরআন’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু সামনের দিকে বলা হচ্ছে যে এ দুই পাহাড়ের পার্শ্বে ইয়াজুজ-মাজুজের এলাকা ছিল। তাই ধরে নিতে হয়, এ পাহাড় বলতে কাস্পিয়ান সাগর ও কৃষ্ণ সাগরের মধ্যবর্তী সুবিস্তীর্ণ ককেসীয় পবর্তমালাকে বোঝানো হয়েছে।’

ড. ওহাবা জুহাইলি (রহ.) লিখেছেন, ‘‘এরা ছিল খুবই পশ্চাৎপদ জাতি। কৃষ্ণ সাগরের পূর্ব প্রান্তে এদের বসবাস ছিল। বর্তমানে এই দুটি পাহাড় ‘বাবুল আবওয়াব’ বা ‘দারবাত’ শহরের নিকটবর্তী। এটি কোহেকাফ তথা ককেসীয় পাহাড়সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত।’’ (আততাফসিরুল মুনির : ১৬/৩৫৭)

তাফসিরবিদ আবু হাইয়্যান মনে করেন, পাহাড় দুটি আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান সংলগ্ন তুর্কি ভূখণ্ডে অবস্থিত। (আল-বাহরুল মুহিত : ৭/২২৪)

আধুনিক তাফসিরবিদ ইবনে আশুর মনে করেন, এটি চীনের বিখ্যাত প্রাচীর, যা মঙ্গলীয়দের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। ইবনে আশুর আরো লিখেছেন, ‘এ আয়াতে বলা হয়েছে, ওই এলাকার মানুষ ভাষা বোঝার মতো ছিল না। এর কারণ হলো, তাদের ভাষা অন্য সবার ভাষার চেয়ে আলাদা ছিল, এমনকি তাদের ভাষা বোঝার জন্য অনুবাদকও পাওয়া দুষ্কর ছিল। আর এটাও অস্বাভাবিক নয় যে তারা নিজেরাও নিজেদের ভাব বিনিময়ে পরিপক্ব ছিল না।’ (আততাহরির ওয়াত তানভির : ১৬/৩১)

চিন্তা ও রঙের বৈচিত্র্যের মতো ভাষাও বৈচিত্র্যময়। এটি মহান আল্লাহর অসীম কুদরতের নিদর্শন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ২২)

গ্রন্থনা : মুফতি কাসেম শরীফ



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews