সিয়াম সাধনার মাস রমজান বিদায় নিয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। রমজানজুড়ে মুমিনরা রোজা পালন করেছে। রমজানের রোজার যে চর্চা মুমিন করেছে তা সারা বছর ধরে রাখতে মাঝেমধ্যে নফল রোজার ব্যবস্থা রেখেছে ইসলাম। নফল রোজাগুলো বাধ্যতামূলক নয়, তবে এগুলো আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের অনন্য উপায়। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার জন্য একটি রোজা রাখবে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডল দোজখের আগুন থেকে ৭০ বছরের রাস্তা দূরে রাখবেন।’ বুখারি ও মুসলিম। তাই আমাদের উচিত রমজান ছাড়া অন্য ১১ মাসে মাঝেমধ্যে অন্তত নফল রোজা রেখে রমজানের চর্চা সারা বছরই ধরে রাখা। বিভিন্ন প্রকার নফল রোজার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা : এ দুই দিন রোজা রাখা সুন্নত। নবী (সা.) এ দুই দিন রোজা রাখতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার (আল্লাহর কাছে) আমল উপস্থাপন করা হয়। তাই আমার আমল উপস্থাপন করার সময় রোজারত থাকাকে পছন্দ করছি। তিরমিজি।

আইয়ামে বিজের রোজা : প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজাই আইয়ামে বিজের রোজা। নবী (সা.) এ রোজাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে রাখতেন। যেহেতু প্রত্যেক ভালো কাজের সওয়াব ১০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাই যে ব্যক্তি প্রতি মাসে এ তিনটি রোজা রাখবে সে সারা মাস রোজার সওয়াব পাবে। আর এভাবে যে ব্যক্তি প্রতি মাসেই তিন দিন রোজা রাখবে সে সারা বছরই রোজা রাখার সওয়াব পাবে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘...তোমার জন্য প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখাই যথেষ্ট হবে। এভাবে জীবনভর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। কারণ প্রতিটি ভালো কাজের বিপরীতে এর ১০ গুণ সওয়াব দেওয়া হয়।’ নাসায়ি। আশুরার রোজা : আশুরা অর্থ দশমী। ইসলামের পরিভাষায় হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মহররমের দশম দিনটিই আশুরা। নবী (সা.) এ দিনে নিজে রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে (রা.) রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। আশুরার রোজার পুরস্কার হিসেবে আগের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আশা করি, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা করবেন।’ মুসলিম। ইহুদিদের ব্যতিক্রম করতে আশুরার সঙ্গে এর আগে অথবা পরে এক দিনের রোজা যুক্ত করা সুন্নত।

শাবানের রোজা : শাবান মাসে (রমজানের আগের মাস) নবী (সা.) বেশি বেশি রোজা রাখতেন। এ মাসের রোজাও বিশেষ ফজিলতের। এ মাসের শেষের কয়েকদিন ছাড়া প্রায় পুরো মাসই তিনি রোজা রাখতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) রমজান ছাড়া কোনো মাস পূর্ণ রোজা পালন করেননি এবং শাবান অপেক্ষা বেশি নফল রোজা অন্য কোনো মাসে রাখেননি।’ মুসলিম।

শাওয়ালের ছয় রোজা : এ রোজাগুলো রাখলে সারা বছরের রোজার সওয়াব লাভ করা যায়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল। মুসলিম।

জিলহজের প্রথম দশকের রোজা : ইসলামের দৃষ্টিতে জিলহজ মাসের প্রথম দশক রাত ও দিনগুলো খুবই মর্যাদাপূর্ণ। দশম দিন ঈদুল আজহা হওয়ায় তাতে রোজা রাখা হারাম। তা ছাড়া বাকি নয় দিনের রোজা সুন্নত। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জিলহজের প্রথম ১০ দিনের ইবাদত আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। এর প্রতি দিনের রোজা এক বছরের রোজার সমান এবং প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমান।’ তিরমিজি।

আরাফার দিনের রেজা : ৯ জিলহজ আরাফার দিন। এ দিনের রোজার রয়েছে বিশেষ ফজিলত। এ দিনের রোজায় উৎসাহিত করতে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আশা করি আরাফার দিনের রোজা বিগত বছর ও আগামী বছরের (গুনাহসমূহের) কাফফারা হবে।’ মুসলিম।

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব

বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews