নিজের দেশের আদিবাসী মাওরিদের ঐহিত্যবাহী পোষাকে ব্রিটেনের রাণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্দা আর্ডেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি লিখেছে, আর্ডেনকে এই পোষাকে দেখে অনেকেই মাথা চুলকালেও বেশিরভাগ নিউজিল্যান্ডবাসীর গর্বিত হয়েছেন। করোওয়াই নামের ঐহিত্যবাহী এই পোষাকের আস্তরণটি মাওরি আদিবাসীরা পাখির পালক দিয়ে বুনে থাকে।বিশেষ উপলক্ষে পরা এই পোষাকটি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর মর্যাদার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। অতিথিকে সম্মান জানাতে উপহার হিসেবেও দেওয়া হয় পোষাকটি। ১৯৫৪ সালে ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও তার স্বামী প্রিন্স ফিলিপের নিউজিল্যান্ড সফরের সময় তাদের দেওয়া হয়েছিল এই পোষাক। আর পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের রাজ উত্তরসুরীরাও দেশটি সফরের সময় সেই পোষাক সঙ্গে নিয়েছেন।
কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্দা আর্ডেন। বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী এই নারী প্রধানমন্ত্রীকে ঐতিহ্যবাহী পোষাকে বাকিংহাম প্যালেসে দেখা যাওয়ার পর তার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ‘আশ্চর্যজনক’, ‘অনিন্দ্য সুন্দর’সহ নানা অভিধায় তাকে প্রসংশিত করার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডবাসীরা সম্মান আর শ্রদ্ধায় তাকে অভিনন্দিত করেছেন।
মাওরি আদিবাসীদের পোষাকশিল্পী রানুই নাগারিমু বিবিসিকে বলেছেন, ‘এটা সত্যি আমাকে আবেত তাড়িত করেছে। এমন তাৎপর্যপূর্ন জায়গায় তার এধরণের পোষাক পরা আর সব এঙ্গেল থেকেই তার ছবি তোলা হবে জেনেও এই পোষাকে হাজির হওয়া নিউজিল্যান্ড আর মাওরিদের মধ্যকার সম্পর্কের স্বীকৃতি।’
ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মাওরি আদিবাসী ভিনি ওসলিন-রিদার বলেন, বিভিন্ন ধরণের পোষাকের আস্তরণ আছে তবে করোওয়াই অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আস্তরণ। ঐহিত্যগতভাবে মাওরি সমাজের উচু স্তরের মানুষদের এই পোষাকটি উপহার দেওয়া হয়। তবে নিজেদের গোত্রের বাইরে একই সমকক্ষ মনে করা অতিথিদেরও সম্মান জানাতে তা উপহার দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
এই ক্ষেত্রে আর্ডেনের পরিহিত করোওয়াইটি তাকে দিয়েছেন লন্ডনে বসবাসরত মাওরি সম্প্রদায়ের মানুষেরা। কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার পর তাকে এই উপহার দেওয়া হয়।
হ্যামিল্টনের ওয়াইকাটু বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওরি স্টাডিসের শিক্ষক আগ্রেস ডোনা ক্যাম্পবেল বলেন, এই পোষাকের তাৎপর্য হলো এর সঙ্গে মর্যাদা ও ক্ষমতা জড়িত। সেকারণে জেসিন্দার এই পোষাক পরা অনুষ্ঠানের ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে একেবারেই মিলে যায়। তিনি বলেন, মা হতে যাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী ও তার সন্তানের সুরক্ষায় করোওয়াইটি একেবারে যথোপযুক্ত।
ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওসলিন-রিদার বলেন, গত ২০ বছরে মাওরি সংস্কৃতির পুনরুত্থানের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে করোওয়াই পরা মাওরিদের সংখ্যা বেড়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের দিনে পরিবারের কাছ থেকে প্রজন্মের উত্তরাধিকারী হিসেবে পাওয়া করোওয়াই পরা ছাত্রদের কাছে অনেকটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘আমার সমাবর্তনেও আমি আমার পরিবারের করোওয়াই পরেছিলাম। আমি ছিলাম চতুর্থ প্রজন্ম যে একই পোষাকটি পরেছে।’
পাখির পালক দিয়ে এক একটি করোওয়াই বুনতে মাসের পর মাস লেগে যায়। কখনও কখনও তা বছরও পেরিয়ে যায়। আর একবার তৈরি হওয়ার পর পারিবারিকভাবে তা সংরক্ষণ করে রেখে দেওয়া হয়, আর প্রজন্মের পর প্রজন্মের বা ব্যবহার করতে থাকে।
