এবারের ঈদে অপেক্ষাকৃত কম বিড়ম্বনায় মানুষ ঘরে ফিরতে পেরেছিল বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবে ঈদের পর একের পর এক ভয়াবহ সব প্রাণঘাতী সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ দেশের মানুষের ঈদের আনন্দের রেশ বিষাদে পরিনত করেছে। গত মঙ্গলবার ফরিদপুরের কানাইপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বাস-পিকআপ মুখোমুখী সংর্ঘষে এক পরিবারের ৫জনসহ ১৪জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। পরের দিন বুধবার ঝালকাঠিতে একটি নিয়ন্ত্রণহীন ট্রাকের চাপায় ১৫জনের মৃত্যু ঘটে। গাবখান সেতুর টোলপ্লাজায় থেমে থাকা একটি প্রাইভেটকার এবং কয়েকটি অটোরিক্সাকে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক চাপা দিলে এক পরিবারের ৬জনসহ মোট ১৫জনের করুণ মৃত্যু ঘটে। গতকাল এবং বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আরো অন্তত ১০জনের প্রাণহানির তথ্য রয়েছে। গতকাল যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক রিপোর্টে শুধুমাত্র মার্চমাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৬৫জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে মার্চে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ১২২৮জন। সড়কে চলাচলকারী বাস ও ট্রাকের সাথে সংঘর্ষে অধিকাংশ মানুষ হতাহত হলেও এককভাবে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে।

দুর্ঘটনায় পরিবারের একজন মানুষ নিহত কিংবা পঙ্গু হয়ে গেলে ভুক্তভোগী পরিবারের সারাজীবনের কান্না। সেখানে একেকটি অস্বাভাবিক দুর্ঘটনায় পুরো পরিবারের প্রায় সব সদস্য একই সঙ্গে নিহত হওয়ার ঘটনারগুলো জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। বছরের পর বছর ধরে এমন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ। দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকারের বিষয়বস্তু সব সময়ই এক ও অভিন্ন। কেন,কি কারণে এমন সব ট্রাজিক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ দিচ্ছে মানুষ, তা কারো অজানা নয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদফতর ও গণপরিবহনের মালিক-চালক-হেল্পারদের গতানুগতিক দায়িত্বহীনতা এবং প্রয়োজনীয় বিধি-ব্যবস্থার গ্রহণ করতে না পারার ব্যর্থতা কখনোই আড়াল করা যায়নি। অথচ কেউই এসব দুর্ঘটনার দায় নিচ্ছে না। কাউকেই জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে না। কোনো সভ্য সমাজে এমনটা আশা করা যায় না। পশ্চিমা কোনো দেশে এমন ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে দেখা যায়। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিরা বিচার ও আইনগত জবাবদিহিতার বাইরে থাকায় সড়ক-মহাসড়ক, রেলপথ ও নৌপথে মৃত্যুর মিছিল থামানো কিংবা কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। সরকার ও মন্ত্রনালয় সড়কের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও মানুষের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিতে কোনো উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সড়কের অপরিকল্পিত উন্নয়ন, লেন বৃদ্ধি ও উচ্চ ব্যয়ে নির্মিত উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো মানুষের যাতায়াতে নিরাপত্তা দিতে পারছে না।

একেকটি অগ্নিকান্ড কিংবা পরিবহন দুর্ঘটনায় বহুল ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির পর জানা যায়, ভবনটি সঠিক নকশায় তৈরী হয়নি। পরিবহনটির কোনো লাইসেন্স কিংবা ফিটনেস ছিলনা। ঝালকাঠিতে প্রাইভেটকার চাপা দিয়ে একই পরিবারের ৬জনসহ মোট ১৫জনকে হত্যাকারী ট্রাকটির নাকি কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না! গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে জানা যায়, সড়কে ৬ লাখ অবৈধ যান চলাচল করছে। অধিকাংশ অবৈধ ও ফিটনেস বিহিন যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির হার বেড়ে চলেছে। গত ১১ বছরে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও সড়কপথকে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল করা যায়নি। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতা সীমাহীন। যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে জনগণের লক্ষকোটি টাকা খরচ করার পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির যোগসাজসের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। লাখ লাখ অবৈধ, ফিটনেসহীন যানবাহন, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ গাড়ী চালক বছরের পর বছর ধরে সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ানোর পেছনেও রয়েছে বছরে শত শত কোটি টাকার ঘুষ-দুর্নীতি-চাঁদাবাজির যোগসুত্র। যোগাযোগ মন্ত্রনালয়, বিআরটিএ, ট্রাফিক বিভাগ এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মালিক-শ্রমিক সমিতি এসব দুর্ঘটনা, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার দায় এড়াতে পারে না। প্রতিটি দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষতিপুরণ নিশ্চিত করা গেলে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। সড়কে দুর্ঘটনার পাশাপাশি পথে ও গণপরিবহনে ছিনতাই, রাহাজানি, প্রতারণা, অজ্ঞানপার্টি, মলম পার্টির খপ্পরে পড়ে প্রতিদিন অনেক মানুষ সর্বস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের একশ্রেণীর ব্যক্তি চাঁদাবাজিতেই বেশি ব্যস্ত। জননিরাপত্তা নিয়ে তাদের যেন কোনো দায়িত্ব, মাথাব্যথা ও জবাবদিহি নেই। পথের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিষয়ে গণপরিবহন যাত্রী, সব ধরণের গাড়ী চালক-হেল্পার ও পথচারীদের সচেতন থাকা জরুরি। ফরিদপুর ও ঝালকাঠিতে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের জন্য আমাদের সমবেদনা। এসব মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews