ডিপফেইক: বিশ্বাসে চিড় ধরানো প্রযুক্তি

ওপরের ঘটনাটি আজ এই সময়ে আপনার কাছে কল্পকাহিনী মনে হতেই পারে। তবে, বর্তমান সময়টা বড়ই গোলমেলে। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির সামনেই সারা বিশ্বকে দাঁড় করিয়েছে ডিপফেইক ভিডিও টেকনোলজি। শব্দটার সাথে যেহেতু Deep আছে, তাই গভীরে গিয়ে আলোচনা করেই স্পষ্ট করতে চাই আপনার ধারণার জগতটাকে।

শুরুটা করি শিশুতোষ জ্ঞান দিয়েই। ফেক ভিডিও বলতে আসলে আমরা কী বুঝি? কোনো ঘটনার ভিডিও নেতিবাচক সম্পাদনার মাধ্যমে পরিবর্তন করাকেই ফেইক ভিডিও বলে। খটমটে হয়ে গেল? অধিকাংশ ফেইক ভিডিওর সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল একজনের ভিডিও আরেকজনের বলে প্রকাশ করার জন্য মুখমণ্ডল পরিবর্তন করা।

ছবির ক্ষেত্রে এ কাজটি ফটোশপ এত ভালভাবে দখল করে নিয়েছে যে কোনটা আসল ছবি আর কোনটা ফেইক বোঝাই দুষ্কর হয়ে পড়ে।

ভিডিওর জগতটা এতদিন একদমই এমন ছিল না। কোনটা ফেইক ভিডিও আর কোনটা সত্যিকারের , তা বুঝতে হলে বিশেষজ্ঞ হতে হতো না। খালি চোখেই ধরা পড়তো সম্পাদনার ছলা-কলা।

সময় বদলেছে। সম্পাদনার জগতে হানা দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্বা বা ইংরেজিতে artificial intelligence. এই প্রযুক্তিকে আমরা সহজ যে নামে চিনি, তা হলো রোবট।

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা এই ভিডিওর জগতে ঢুকে এলোমেলো করে দিয়েছে বিশ্বাসের কিংবা ভরসার জগতটাকে। মুখের স্থলে মুখ বসিয়েই ক্ষান্ত হয় নি ডেভেলপাররা। মুখমণ্ডলের প্রতিটি সুক্ষ্ম নড়াচড়া হতে শুরু করে
অঙ্গভঙ্গি, এমনকি বাচনভঙ্গি... সবকিছুই দখলে নিয়ে নেয় ডিপফেকের সিস্টেম। এরপর আপনার মুখভঙ্গি ও কথা দিয়ে তৈরি করতে পারেন পৃথিবীর যেকোনো ব্যক্তির ভিডিও। আবারও বলছি, যেকোনো ব্যক্তির।

কেন এই ডিপফেকের বিষয়টি তৈরি করছে উদ্বেগ? কারণটা জানতে ঢুকতে হবে নিষিদ্ধ জগতে। ডিপফেক ভিডিও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ইন্টারন্যাশনাল সেলিব্রিটিদের ফেক পর্ন ভিডিও তৈরি। কেটি পেরি থেকে শুরু করে নামকরা তারকারা আছেন এ তালিকায়। ভদ্রতা বজায় রেখেও নোংরাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারেন যে কেউ। যাচাই-বাছাই করতে করতে নাম খারাপ হয়ে যাবে শতগুণ।

নীল জগতের বাইরে উদ্বেগের আরেকটি জায়গা রাজনীতি। ইতোমধ্যেই ট্রাম্প,পুতিন,ওবামার ডিপফেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের মতো। যা ইচ্ছে তাই বলানো হচ্ছে এসব শীর্ষ আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের মুখ থেকে।

শুরুটা কথায়? আর নামটাই বা এলো কোত্থেকে? ২০১৭ সালে “ডিপফেক” ইউজার নেমের এক রেডইট সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী প্রথম বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের নিয়ে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করে এ ধরণের প্রথম ভিডিও। এরপর থেকে এ ধরণের নিখুঁত মিথ্যে ভিডিওর নামই হয়ে দাঁড়ায় ডিপফেইক ভিডিও। তৈরি হয় উইন্ডোজ ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, ছড়িয়ে যায় জগৎজুড়ে।

অনলাইন প্রযুক্তি সংবাদ মাধ্যম অ্যাটলান্টিক বলছে, “বাস্তবতার যুগের এটাই ইতি”। রাজনীতি, পর্নগ্রাফি ও রিভেঞ্জ পর্নের সংবেদনশীল ডেরায় এমন হানা ভাবিয়ে তুলছে প্রযুক্তি বিশ্বকে।

তবে, নিঁখুত ডিপফেইক ভিডিওতেও কিছু ফিচার এখনও চিনে ফেলার জন্য যথেষ্ট। অমসৃণ মুখমণ্ডল, ছোট ক্লিপিং, সাউন্ডের অসামঞ্জস্যতা, ভিডিওর উৎস কিংবা শরীর ও মুখমণ্ডলের মিল না থাকা। এসব তো প্রাথমিক জ্ঞান। দিন দিন এ প্রযুক্তি যত এগোচ্ছে, ততই নিখুঁত হচ্ছে এর মান। কঠিন হচ্ছে চিহ্নিত করা।

পশ্চিমা বিশ্বে মহামারীর আকার ধারণ করলেও বাংলাদেশে ডিপফেইকের আক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণযোগ্য পর্যায়েই আছে।

সতর্ক হবার এটাই সর্বোৎকৃষ্ট সময়। বহু আবিষ্কারের মতো ডিপফেইক ডিটেকশনের জন্য কার্যকরী অ্যাপ আবিষ্কার আামাদের দেশ থেকে হবে, এমন প্রত্যাশা করাটা কি খুব বেশি বাড়াবাড়ি হবে?
প্রযুক্তির গহীন অরণ্যে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে মাটির মানুষ।
ডিপফেইকের মতো ভয়াল প্রযুক্তি মাটিতে মেশাচ্ছে বিশ্বাসের দেয়াল।
মুক্তি পেতে হয়তো একদিন ফিরে যেতে হবে প্রকৃতির সবুজে!

লেখক: সিনিয়র সহকারী সচিব



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews