ক্যান্সার :সবার আগে চাই সচেতনতা
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ইং
বাংলাদেশে মারণব্যাধি ক্যান্সারের বিস্তার ঘটিয়া চলিয়াছে আশঙ্কাজনক হারে। এই রোগ অতীতেও ছিল। কালেভদ্রে লোকের এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হইবার খবর পাওয়া যাইত। কিন্তু এখন ইহা ব্যাপকতা লাভ করিয়াছে। এক্ষণে দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। প্রতি বত্সর কমবেশি দুই লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় বলিয়া এক সমীক্ষা হইতে জানা যায়। আক্রান্তদের মধ্যে যেমন রহিয়াছেন পুরুষ, তেমনই আছেন নারী ও শিশু। ক্যান্সার বা কর্কট রোগের যেমন বিস্তৃতি ঘটিয়াছে, তেমনই চিকিত্সা ব্যবস্থারও বেশ উন্নতি হইয়াছে। দুই আড়াই দশক আগেও এই ব্যাধির চিকিত্সার নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা বাংলাদেশে ছিল না। সময়ের ব্যবধানে সেই অবস্থার পরিবর্তন হইয়াছে। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মিলাইয়া ১৯টি হাসপাতালে ক্যান্সার চিকিত্সার সুযোগ রহিয়াছে। তবে রোগী অনুপাতে আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের ঘাটতি রহিয়াছে। সারাদেশে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ আছেন মাত্র ১৫০ জন। শিশু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ আছেন ১৬ জন। সব মিলাইয়া ক্যানসার রোগীর জন্য বিছানা আছে ৫০০টি। প্রয়োজনের তুলনায় সংখ্যাটি যে নগণ্য, তাহা আর বলিবার অপেক্ষা রাখে না। তবে আশার কথা এই যে, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি অনেকগুলি এনজিও ক্যান্সার সচেতনতা বৃদ্ধি এবং চিকিত্সাসেবা প্রদান করিয়া যাইতেছে। ক্যান্সার চিকিত্সার্থে বিশেষায়িত হাসপাতালও হইয়াছে। এই রোগের চিকিত্সার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও এখন আমাদের হাসপাতালগুলিতে আছে। অবশ্য এমন অভিযোগও রহিয়াছে যে, সরকারি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি প্রায়শ কাজ করে না, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিকল পড়িয়া থাকে দিনের পর দিন। সমস্যার ইহা একটি অনুপেক্ষণীয় দিক।
কেবল ক্যান্সার বলিয়া কথা নহে, যে কোনো রোগ একবার হইয়া গেলে চিকিত্সা জরুরি। ইহার কোনো বিকল্প নাই। তবে রোগটা যদি আগেভাগে শনাক্ত হয় এবং সময়মতো সঠিক চিকিত্সা দেওয়া যায়, তাহা হইলে অনেক জটিল রোগও নিরাময় সম্ভব। ক্যান্সারও ইহার বাহিরে নহে। ক্যান্সার নিরাময় কিংবা উহাকে নিয়ন্ত্রণে রাখিয়া প্রায় স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা সম্ভবপর হইতেছে, এমন দৃষ্টান্ত আমাদের দেশেও আছে। সারাদেহে কর্কট রোগ ছড়াইয়া পড়িবার আগে অপারেশনের মাধ্যমে আক্রান্ত অঙ্গ বা অংশবিশেষ অপসারণ করা যায়। রেডিও থেরাপির মাধ্যমেও রোগ ছড়াইয়া পড়া রোধ করা সম্ভব। কাজেই মাঝেমধ্যেই স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা জরুরি। নিজের শরীরস্বাস্থ্য সম্পর্কে নিজেরই সচেতন হইতে হইবে সর্বাগ্রে। সচেতনতার মাধ্যমে রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করাও অসম্ভব নহে। কিছু কিছু রোগের প্রতিষেধক টিকা রহিয়াছে, সব রোগের নাই। ক্যান্সারের প্রতিষেধক আজ অবধি আবিষ্কৃত হয় নাই। তবে জীবন-যাপন ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্যান্সারের আক্রমণ রুখিয়া দেওয়া যাইতে পারে বৈ কি। ধূমপান, ভেজাল খাবার, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, প্রিজারভেটিভ দিয়া সংরক্ষিত খাবার ইত্যাদি ক্যান্সার ডাকিয়া আনে বলিয়া মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ। জীবন-যাপনে নিয়মানুবর্তিতা এমনিতেই মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এইসব ব্যাপারে সজাগ হইলে স্বাস্থ্য-সুন্দর জীবন লাভ করা সম্ভব যে কাহারও পক্ষে।