বজ্রপাত ও ভূমিকম্প হলো মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ সতর্কবার্তা। মানুষ যখন এই পৃথিবীতে অশ্লীলতা ও পাপাচারে সীমা লঙ্ঘন করে তখন তাদের সাবধান করার জন্য ভূমিকম্প, সূর্যগ্রহণ, বন্যা, ঝড়-তুফান, দুর্ভিক্ষ, বজ্রপাত ও মহামারি ইত্যাদি বিপর্যয় দিয়ে থাকেন। যাতে করে তারা এ বিপর্যয় ও দুর্যোগ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, ফিরে আসে মহান আল্লাহর পথে।

তাঁকে যেন স্মরণ করে ও তাঁর প্রতি ক্ষমা প্রার্থনা করে। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। যাতে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করে, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা আর রুম-৪১)। অপর আয়াতে তিনি বলেন, ‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা আশ শুরা-৩০। কোরআন সুন্নাহর আলোকে ভূমিকম্প ও আল্লাহ প্রদত্ত বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো মানুষের অপকর্ম। এই অপকর্মের পথ ধরেই এক দিন ধ্বংস হবে পৃথিবী। হবে মহাপ্রলয়। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কেয়ামত হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, সময় সংকোচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং হত্যা, খুন, সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাবে।’ (সহিহ বুখারি ৯৭৯)। অপর হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মত যখন ১৫টি অপকর্মে লিপ্ত হবে তখন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসবে। যখন গণিমতের মাল (সরকারি মাল) ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে, আমানত লুটের মালে পরিণত হবে, জাকাত জরিমানা রূপে গণ্য হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং তার মায়ের অবাধ্য হবে, বন্ধুর সঙ্গে ভালো আচরণ করবে কিন্তু বাবার সঙ্গে অসৎ আচরণ করবে, মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে শব্দ করবে, সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট চরিত্রের লোক হবে সমাজের নেতা, কোনো লোককে তার অনিষ্টতার ভয়ে সম্মান করা হবে, মদ পান চলবে, নিষিদ্ধ বস্ত্র পরিধান করা হবে এবং এই উম্মতের শেষ জমানার লোকজন তাদের পূর্ববর্তীদের ভর্ৎসনা করবে, তখন তোমরা অগ্নিবায়ু অথবা ভূমিধস অথবা চেহারা বিকৃতির শাস্তির অপেক্ষা করবে।’ (তিরমিজি, হা.২২১০)। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, মহান আল্লাহতায়ালা মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে ওঠার অনুমতি দেন। ফলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। মানুষ

এতে ভীত হয়। তারা মহান আল্লাহর কাছে তওবা করে, পাপাচার বর্জন করে, আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয় এবং কৃত পাপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মোনাজাত করে। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ার ভয়ানক পরিস্থিতি আমাদের বড় একটি সতর্কবার্তা। সাধ্যমতো সবাইকে তাদের সহযোগিতায় আন্তরিক হওয়া একান্ত জরুরি। জরুরি সবাইকে মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি ফিরে আসা। সবার উচিত তাঁকে স্মরণ করা ও আপন কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। মানুষকে সতর্ক করার জন্য আল্লাহতায়ালা ভূমিকম্প বিষয়ে পবিত্র কোরআনে জিলজাল নামে স্বতন্ত্র একটি সুরা অবতীর্ণ করেছেন। ইতিহাসে আছে ভূমিকম্প হলে ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তার গভর্নরদের প্রতি সতর্ক হওয়া এবং দান সদকা করার জন্য চিঠি লিখতেন। অতএব কালক্ষেপণ না করে আমাদের অতি দ্রুত আত্মশুদ্ধির প্রতি এগিয়ে আসা সমীচীন। দয়াময় আল্লাহতায়ালা আমাদের সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করুন এবং নিরাপদ রাখুন। আমিন!

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews