আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮ - ০৭:৩২ | প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৬ অক্টোবর ২০১৮ | প্রিন্ট সংস্করণ

খান মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী : একজন শিষ্য দীক্ষা গ্রহণের জন্য গুরুর নিকট গেল। গুরু তাকে শিক্ষা-দীক্ষার প্রথম পাঠ দিল একটি পানি ভর্তি বোতল। আর বলে দিল তুমি এ বোতলে পানি ভরতে থাকো। ছাত্র বোতলে পানি ভরে আর সব পানি বাইরে পড়ে যায়। এভাবে তিন দিন পানি ভরার পর ছাত্র রাগ করে বললো, এ কেমন কথা আজ তিন দিন যাবত আমি ভরা বোতলে পানি ভরছি আর সব পানি বাইরে পড়ে যাচ্ছে, এটা আবার কেমন শিক্ষা? তখন ওস্তাদ উত্তর দিলো, শোন ভরা বোতলে পানি ভরলে যেমন বাইরে পড়ে যায়, যারা বেশি বুঝে তাদেরকে শিক্ষা দিলে তাও কোন কাজে আসবে না। বোতলে পানি ভরতে হলে যেমন বোতলটা খালি থাকতে হবে তেমনি তুমি কিছু শিখতে চাইলে তোমাকে খালি হয়ে আসতে হবে। ঠিক একই রকম কথা বলেছিলেন শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্যার, যিনি বি.এড শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের সময় বলেছিলেন, ‘প্রথমে আপনাদেরকে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। আপনি কে কত বড় শিক্ষিত সেটা ভাবলে চলবে না। প্রথমেই ভাবতে হবে, আমি কিছুই জানিনা। আমার সামনে যে স্যার আছেন উনিই সব জানেন। পাঠকগণের অবগতির জন্য বলতে চাই, বর্তমানে কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা যেভাবে বক্তব্য রাখেন তাতে মনে হয় এরা কেবল বুদ্ধিজীবীই নন বরং সব জান্তা। বিএনপির মহাসচিব কে হলে ভালো হয় সে মতামত ব্যক্ত করেন জনাব ওবায়দুল কাদের। বিএনপিকে আর জনগণ চায় না, তা বলেন ড. হাসান মাহমুদ। খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা করেছে ছাত্রলীগ যাদেরকে টাকা দিয়ে করিয়েছে বিএনপি, বললেন এমপি ইসরাফিল আলম। খালেদা জিয়াকে পাকিস্তান চলে যাওয়ার উপদেশ দিলেন আরেকজন মন্ত্রী। বিএনপির আন্দোলন করার মুরোদ নেই, বললেন মন্ত্রী কামরুল ইসলাম। আরো কত কথা যে বলেন বর্তমান রাজনীতিবিদগণ। এক টকশোতে বাবু অসীম কুমার উকিলকে যেই না বলা হলো, ‘ব্যারিস্টার মওদূদ আহমদ এই বলেছেন, অমনি বাবু অসীম কুমার ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ‘আপনি এমন একজন লোকের কথা তুলে ধরেছেন, যার সম্পর্কে আমি কোন কথাই বলতে চাই না।’ ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেবের মত লোক নিয়ে কথা বলার রুচিই নেই সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বাবু অসীম কুমারের। অসীম কুমার বাবুকে ১৯ মার্চ রাতে আরটিভি টকশোতে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল বর্তমান ছাত্র রাজনীতি কেমন হওয়া উচিত। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এটাই তার গৌরব, অতএব ছাত্র রাজনীতি থাকা উচিত।’ এখানেই শেষ নয়, ছাত্রলীগ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি আর ভর্তি বাণিজ্যসহ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত তা তিনি মানতে তো রাজিই নন বরং উপস্থাপক সেলিম ওমরাও খানকে ধমকের সুরে কথা বলেন। অসহায় সাংবাদিক সেলিম ওমরাও খান আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক হলে কি হবে। আওয়ামী লীগ বিরোধী কোন প্রশ্ন করলে রক্ষা নেই। আরেকজন বুদ্ধিজীবী বাবু সুভাস সিংহ তার কথার মধ্যেও ধমকের সুর পাওয়া যায়। এসব বুদ্ধিজীবীদের অবস্থা দেখলে মনে হয় তারা সব জান্তা। বিপরীত দিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বক্তব্য তুলে ধরতে চাই, তারা কি রাজনীতি বুঝতেন না? নাকি সব জান্তা ছিলেন না। প্রয়াতঃ মহামান্য রাষ্ট্রপতি বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ জনাব জিল্লুর রহমানকে বিবিসি থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘আপনারা যে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেফতার করলেন, তার জন্য তো হাজার হাজার মানুষ আন্দোলন করছে।’ তিনি উত্তর দিয়েছিলেন ‘করতেই পারে, সেও তো কারো না কারো নেতা।’ এখানে জনাব ওবায়দুল কাদের হয়তো বলতেন, ‘এরা মাত্র কজন লোক, ওদের জনগণ চায় না, এরা বিচ্ছিন্নতাবাদী দেশ বিরোধী ইত্যাদি।’ ডা. এইচবিএম ইকবালের নেতৃত্বে মালিবাগ মোড়ে যখন পিস্তল দিয়ে গুলী করা হয়েছিল, সে বিষয়ে জনাব জিল্লুর রহমানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল, পিস্তলসহ ছবি আছে। তিনি যোগ্য রাজনীতিবিদদের মত উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ছবি বড়ই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।’ এখানে ইসরাফিল সাহেব হয়তো বলতেন বিএনপির লোকেরা ডা. ইকবালের হাতের সাথে পিস্তল জোড়া লাগিয়ে দিয়েছে। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মেয়র জনাব মো. হানিফ জনাব আবুদল জলিলসহ বেশ কজন বড় মাপের নেতার কাছাকাছি যাওয়ার। তাদের নিকট থেকে এরকম আজগুবি কথাও শুনিনি। আবার তাদেরকে সব জান্তাও মনে হয়নি। অথচ সে আবদুল জলিলকে পাগল খেতাব নিয়ে আর হানিফ সাহেবকে অনাদরে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। সঙ্গত কারণেই আওয়ামী দলছুট কিশোরগঞ্জের ফজলুর রহমান যিনি বর্তমানে বিএনপি নেতা। তাকে বলতে হয়েছে, ‘সেই আওয়ামী লীগও নেই সেই ফজলুর রহমানও নেই।’ নেই সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমদ, নেই মাহমুদুর রহমান মান্না, নেই আ.স.ম. আবদুর রব, নেই ড. কামালসহ আরো অনেকে। আজ ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা। অতএব জী হুজুর আর সব জান্তাদের ভিড়ে কিছু রাজনৈতিক দল ও নেতা যে আক্রান্ত তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। টকশো নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “আমরা ডিজিটাল বা তথ্য প্রযুক্তি আইন করেছি তাতে কি ক্ষতি হল আমার বুঝে আসে না। এখানে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা হল কি ভাবে? সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুরাপুরি বজায় আছে দেখেন না টকশোতো আমাদের কে কি ভাবে টক বানিয়ে ফেলে আবার তারাও টক হয়ে যায়। সাংবাদিকরা এত স্বার্থপরের মতো কথা বলবে কেন? আপনারা কোন অপ-সাংবাদিকতা না করলেতো আপনাদের কোন ভয় থাকার কথা নয়।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞানগর্ভ উত্তরের পরে কোন সাংবাদিক এ প্রশ্নটা করতে পারেননি যে, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামী টিভি, দিগন্ত টিভি আর আমার দেশ পত্রিকা কোন অপ সাংবাদিকতার দরুণ বন্ধ হয়ে গেল? প্রশ্নটি উত্থাপন হয়নি। কারণ সেখানে সম্ভবত সব জান্তা সাংবাদিকগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আর্শিবাদে ধন্য তাই। এছাড়া যেসব সাংবাদিক ছিলেন তাদের পক্ষে এ প্রশ্ন করার সাহস কোথায়? ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ গাজীপুর জজ কোর্টে দেখা গেলো জামায়াত নেতা-কর্মীদের ভীড়। তারা এসেছিলেন মামলার হাজিরা দিতে। গাজীপুর সিটি-কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করার মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২৭ এপ্রিল ২০১৮ তাদের ৪৫ জনকে একটি পিকনিক স্পট থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর মামলা দেয়া হয় বিস্ফোরক আর ২০১৫ সালে গাড়িাভাঙ্গা। যাই হোক কাঁচা হাতের নাম ধামবিহীন একজন কলামিস্ট হিসেবে অনেকেই আমাকে চেনার দরুন বলে উঠলেন, “ভাই আপনার লেখা পাই না।” এমন কথা বললেন ৪৫ জন নেতাকর্মী বহরের শীর্ষ ব্যক্তি প্রখ্যাত আলেম ও রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা এসএম ছানাহউল্লাহ সাহেবও। যিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী ছিলেন ২০ দলের সিদ্ধান্তের কারণে যিনি ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারকে সমর্থন জানান আর এটাই হল গ্রেফতার হওয়ার মূল কারণ। ওনাদের কথার কারণেই আবার কিছু লিখতে ইচ্ছে হল। ভেতরে ভেতরে দু’চার জন পাঠকও যে তৈরি হয়েছে তা আমার অজান্তেই রয়ে গেছে কারণ আমি সব জান্তা নই। ১ অক্টোবর ২০১৮ রাতে টিভিতে একটি টকশো দেখছিলাম। সেখানে ছিলেন আওয়ামী লীগ এর প্রয়াত নেতা জনাব মহিউদ্দিন এর ছেলে এবং বিএনপি নেতা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জনাব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। তাদের তর্ক দেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা মনে পড়ে গেলো। তিনি যথার্থ বলেছিলেন, “টকশোতে আমাদেরকে টক বানায় আবার তারাও টক হয়ে যায়।” বাস্তবে দেখা গেলো বিএনপি নেতা যে ভাবে টক হয়েছেন তা লক্ষ্য করার মতো। আমার স্ত্রী বলে উঠলো “আওয়ামী লীগকে টক বানাবে এমন সাধ্য কার?” প্রকৃত পক্ষেই অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় আকর্ষণীয় বক্তা আর সব জান্তা যে পরিমাণ আওয়ামী লীগে রয়েছে তা অন্য কোন দলে নেই। তবে অন্যরা এ দেশে কি ভাবে রাজনীতি করতে চায়। ২৯ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কি পরিমাণ লোক হয়েছে তা জানতে হলে আওয়ামী লীগ নেতা মাননীয় সেতুমন্ত্রীর নিকট থেকে জানতে হবে। উনারা দেখেছেন যে পরিমাণ লোক হয়েছে তাতে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমে গেছে। এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা জনাব নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, “এতে যদি জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া বুঝায় তাহলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নেই।” জনাব নজরুল ইসলাম খানের কথাটা শুনে একটি কথা মনে পড়ে গেলো আমার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার চিকন্দী গ্রামে। একদিন একজন অতিব হালকা পাতলা মানুষ মেদভুড়িওয়ালা একজনকে জিজ্ঞেস করলো, “ভাই আপনার বাড়ি কোথায়?” তিনি উত্তর দিলেন “চিকন্দী”। মোটা লোকটি যখন ছিপ ছিপে লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন “আমার বাড়ি নাই।” বাড়ি নাই মানে, লোকটি বললেন, আপনি এত মোটা হওয়ার পর যদি বাড়ি হয় চিকন্দী। তবে কি আর আমার বাড়ি থাকে? আমার দেহের যে অবস্থা। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে আওয়ামী লীগের কোন বাড়ি নেই আছে কেবল সব জান্তা আর শক্ত মাড়ির লোক চাপাবাজ বললে সুন্দর হয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে হয় তিনি খুব সুন্দর করে বলেছেন, “নির্বাচনের মাধ্যমে যদি জনগণ ভোট দেয় তবে আছি না হলে নাই।” অত্যন্ত চমৎকার ভাবেই তিনি কথা বলেছেন। আবার ড. কামাল সাহেবদের জোটও তার সহ্য হয় না কামাল সাহেব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তার পকেটে সব সময় টিকিট থাকে।” এ জবাবটা ড. কামাল সাহেব সুন্দরভাবেই দিয়েছেন। তিনি বলেন, “উনি যদি নিজের ওজন বুঝে কথা না বলেন তা ওনার ব্যাপার আমি বা আমরা এসব কথা শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের ধারা যদি অব্যাহত থাকে তবে জনগণ ভোট দিবে এবং তাদের কেউ আবার ক্ষমতার মসনদে বসাবে তাহলে কি কামাল সাহেব কি রব সাহেব এতে ভয় পাওয়ার তো কোন কারণ নেই। হাসি লাগে তখনই যখন বলা হয় “বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে হবে।” ইতোপূর্বে শুনলাম জামায়াত শেষ। যে জামায়াত ছাড়লেই কি আর ধরলেই কি? সে জামায়াত সিলেটে ৮-৯ হাজার ভোট পায় যে বিএনপি বরিশালে ৮ হাজার ভোট পায়। সে জামায়াত আর সে বিএনপি নিয়ে চিন্তার কোন কারণই নেই। চিন্তার কারণ একটাই সিলেটে জামায়াতকে ৮ হাজার আর বরিশালে বিএনপিকে ৮ হাজার ভোট দিয়ে জনগণকে বুঝাতে চাইলাম ওদের কোন জনসমর্থন নেই। মরার জনগণ তাও বুঝে ফেলে। এ জনগণের সমর্থন দরকার নেই আমাদের ইভিএম আর নূরুল হুদা থাকলেই চলবে আর সব জান্তা তো আছেই বিএনপি আর জামায়াত চলে যাও পাকিস্তান জনগণের খেতা কিলাই তোমরা বসে থাকো ঘরে যা করার আমরাই করবো এ নিয়ে কারো মাথা ঘামানোর দরকার নেই।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews