নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাড়াহুড়া করে দেড় লাখ ইলেকট্রনি ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার যে উদ্যোগ নিয়েছে তার কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি বলেছে- আগামী নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় বসানোর জন্যে বিতর্কিত ইভিএম ব্যবহারের পায়তারা করছে সিইসি ও ইসি সচিব। তবে এবার গায়ের জোর খাটিয়ে কোনো লাভ হবে না। যতই জেল জুলুম নির্যাতনের পথ বেছে নিন কোনো এন্টিবায়োটিকই আপনাদের টিকাতে পারবে না। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন।
তিনি মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের যাতাকলে দেশবাসীকে অন্ধকার দম আটকানো অবস্থায় ফেলা হয়েছে। যাতে জনগণের প্রতিবাদী মিছিল রাজপথে এগিয়ে যেতে না পারে। ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সরকার শেষ মরণ কামড় দিচ্ছে। কিন্তু তাদের সময় পার হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার অধীনে নয়, আগামী নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভুইয়া, মো: মুনির হোসেন, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার দাবি জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন দেড় লাখ ইভিএম ক্রয় ও সংরক্ষণের জন্য এ প্রকল্পের ব্যয় হবে ৩৮২১ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অথচ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসির সাথে সংলাপে আওয়ামী লীগ ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, পেশাজীবী সংগঠন ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছে। এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশনারও একাধিকবার বলেছেন সবাই না চাইলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না। কিন্তু প্রতিশ্রুতির বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে সিইসি বিপুল টাকার অঙ্কে দেড় লক্ষ্য ইভিএম মেশিন ক্রয় করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। সেইসাথে কমিশনের সচিব ইভিএম ব্যবহারের বিধান অন্তর্ভূক্তের ইঙ্গিত দিয়েছেন- যা সম্পূর্ণভাবে জনগণের সাথে প্রতারণা।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনকে ক্ষমতাসীনদের অনুকূলে ম্যানিপুলেট করার জন্য ইভিএম ব্যবহার প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনের সচিবের যৌথ প্রজোযনা। ইভিএম মানেই ক্রুটিযুক্ত নির্বাচন। ইভিএম দিয়ে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ইভিএমে সাধারণ মানুষের আস্থা নেই। এ মেশিন দ্বারা ডিজিটাল কারচুপি হওয়া সম্ভব। ইভিএম সম্পর্কে এর আগে বিস্তারিত আমরা জানিয়েছি।
আগামী নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় বসানোর জন্যে বিতর্কিত ইভিএম ব্যবহারের পাঁয়তারা করছে সিইসি ও কমিশনের সচিব। আগামী নির্বাচন পুরোপুরি জালিয়াতির ওপর সাজাতেই এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কমিশনের সচিব আওয়ামী নেতাদের হুকুম তামিল করেন নির্বাচন কমিশনে, সেজন্য তিনি প্রায় প্রতিদিন আওয়ামী লীগের অফিসে বৈঠক করেন। কোনো অবস্থাতেই আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের অশুভ তৎপরতা বন্ধ করতে জনগণ প্রস্তুত।
রিজভী বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে নির্বাসনে পাঠিয়ে এখন আগামী নির্বাচন নিয়ে অবৈধ সরকার নতুন নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। আওয়ামী অপশাসনের ছোবলে শুধু দেশের জনগণই নয় দেশ-বিদেশে সমর্থন হারিয়ে এতিম হয়ে পড়ে আওয়ামী নেতারা পাগলের প্রলাপ বকছে। এদের বক্তব্য বিবৃতি সামঞ্জস্যহীন। মসনদ হারানোর ভয়ে এরা মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভূগছে। বিএনপি নেতা নেত্রী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যে উদ্ভট কথা বলেন, পরÿণেই হাসানুল হক ইনু আরেক ধাপ এগিয়ে আরেকটি উদ্ভট বক্তব্য দেন। পাগলামির ঘোরের মধ্যে আওয়ামী সরকার এখন নিমজ্জিত। এদের বোধহয় পাবনায় যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
দেশব্যাপী মিথ্যা মামলায় ফের গ্রেফতার শুরু হয়েছে জানিয়ে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আগামী নির্বাচনের আগেই এ সরকারের পতন হবে এমন আলামত দেখে দেশব্যাপী মিথ্যা মামলার ছড়াছড়ি আর নির্বিচারে গ্রেফতারের হিড়িক শুরু হয়েছে। ঈদের প্রাক্কালেও গ্রেফতার করা হচ্ছে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ হাজার কর্মীদেরকে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সরকার শেষ মরণ কামড় দিচ্ছে। কিন্তু তাদের সময় পার হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচন হবে না। আগামী নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এবার গায়ের জোর খাটিয়ে কোনো লাভ হবে না। যতই জেল জুলুম নির্যাতনের পথ বেছে নিন কোনো এন্টিবায়োটিকই আপনাদের টিকাতে পারবে না। বর্তমান আওয়ামী সরকার যুক্তি ও বিবেকবর্জিত, নৈরাজ্যপ্রসূ। এদের পতন অনিবার্য ও অত্যাসন্ন।
সারাদেশে পুলিশী গ্রেফতার ও নিপীড়নের চিত্র তুলে রিজভী বলেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও দিনাজপুরের পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঠাকুরগাঁও সদর পৌর যুবদল সভাপতি আহমেদুলøাহ বাবু সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান লিটন সহ ২৪ জন নেতৃবৃন্দের নাম উলেøখ করে ২০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করেছে। ফেনী সদর পৌর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলামকে গ্রেফতার এবং জেলা বিএনপির গাজী হাবিবুলøাহ মানিক, যুবদলের খন্দকার নাসির উদ্দিনসহ বেশকিছু নেতাকর্মীকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আসামি করেছে।
এছাড়া নোয়াখালী স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পুলিশ হামলা চালিয়ে আব্দুলøাহ আল-নোমান, শরীফ, শামিমসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডারদের হামলায় মোঃ আজিম, মাইনুর ও রুবেল সহ ১৫ জনের অধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। বিএনপি ও এর অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন রিজভী।