দ্রুজ যোদ্ধা ও বেদুইন গোষ্ঠীর মিলিশিয়াদের মধ্যে কয়েকদিনের সংঘর্ষে হাজারও মানুষ নিহত হওয়ার পর নড়বড়ে যুদ্ধবিরতির কারণে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুইদা শহরে নতুন করে সংঘাতের খবর না এলেও ওই অঞ্চলজুড়ে এখনও তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সোমবার বিবিসির প্রতিনিধিরা সুইদার ছয় মাইলের মধ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হন, যুদ্ধবিরতি থাকলেও এর বেশি যাওয়া নিরাপত্তা জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলেই বিবেচিত হচ্ছে।

“রাস্তার সামনের দিকে দ্রুজ স্নাইপাররা সক্রিয়। ওটাই সবচেয়ে বড় বিপদ,” সামনের দিকে যেতে চাওয়া প্রতিবেদকদের এভাবেই সাবধান করেন সিরিয়ার এক সেনা কমান্ডার।

ওই পর্যন্ত যাওয়ার পথে প্রতিবেদকরা সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে যাওয়া জনমানবহীন অনেক দ্রুজ গ্রামও দেখেছেন।

আগের কয়েকদিন এই মহাসড়ক ছিল যুদ্ধক্ষেত্র। দোকান ও নানান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, ফুটপাতজুড়ে পড়ে আছে গুলির খোসা।

প্রতি আধা মাইল পরপর দেখা যাচ্ছে বিশ্রামরত সিরীয় সেনাসদস্যদের ছোট ছোট দল। বেশিরভাগই তরুণ, পরনে কালো পোশাক, গরম চা খাচ্ছেন, পাশে বন্দুক।

যুদ্ধবিরতি কার্যকরে সিরীয় সরকারি বাহিনী মোতায়েনের পর চারদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও এই অবস্থা।

সরকারি বাহিনী মোতায়েনের উদ্দেশ্য ছিল, সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায় ও বেদুইন উপজাতিদের মধ্যে সপ্তাহখানেক ধরে চলা সংঘর্ষের ইতি টানা। সাম্প্রদায়িক ওই সংঘাত এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

আপাতত যুদ্ধবিরতি বজায় আছে, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে এটি ভঙ্গুর, বেশিদিন টিকবে না, বলছেন বিবিসির প্রতিবেদকরা।

“আমরা যত দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হচ্ছি, তত দেখছি শত শত সশস্ত্র বেদুইন রাস্তার পাশে জড়ো হয়ে আছে। আলাদা করে লাল-সাদা মাথার স্কার্ফে তাদের চেনা যাচ্ছে, তারা মেজাজ ছিল চড়া, মাঝে মাঝে আকাশে গুলি ছুড়ছিল, আর সিরিয়ার সরকারি সেনারা তা উদ্বেগ নিয়ে দেখছিল,” বলেছেন এক প্রতিবেদক।

বেদুইন যোদ্ধারা বলছেন, যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়লে তার ফের অস্ত্র হাতে তুলে নিতে প্রস্তুত।

তারা চাইছেন, সুইদা শহরে থাকা আহত বেদুইনদের মুক্তি। ওই আহতদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে বলে তাদের ভাষ্য।

“দ্রুজরা যদি চুক্তিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি না রাখে। তাহলে আমরা ফের সুইদাতে ঢুকবো, তাতে যদি সেটি আমাদের কবরে পরিণত হয়, তাও,” কয়েকদিন আগেই বিবিসির প্রতিবেদককে এমনটাই বলেছিলেন এক বেদুইন নেতা।

আপাতত যুদ্ধবিরতি বজায় আছে, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে এটি ভঙ্গুর, বেশিদিন টিকবে না। ছবি: বিবিসি

যুদ্ধ এরই মধ্যে শত শত লোকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বিভিন্ন দ্রুজ গোষ্ঠী বলছে, তারা এখনও সতর্ক, কেননা সিরিয়ার সরকারি বাহিনীও বেদুইনদের পক্ষ নিয়ে বিপুল পরিমাণ দ্রুজ সদস্যকে নির্বিচারে হত্যা করেছে, অন্যান্য নিপীড়ন-নির্যাতন তো আছেই।

এখন পর্যন্ত সিরিয়ান রেড ক্রিসেন্ট কিছু আহতকে সুইদা থেকে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলীয় দেরা শহরের প্রধান হাসপাতালে ওই আহতদের কাউকে কাউকে নিয়ে আসতে দেখেছে বিবিসি।

এদেরই একজন ২৭ বছর বয়সী আহমেদ। ক্রাচে ভর করে হাঁটার চেষ্টা করছেন, শরীরে এখনও সিরিয়ার সেনাবাহিনীর পোশাক, কিন্তু তার বাম পায়ে বিপুল পরিমাণ ব্যান্ডেজ।

“একটি রকেটচালিত গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়েছিল, আমি শার্পনেলে আহত হই।

রকেটচালিত গ্রেনেডের শার্পনেলে আহত ২৭ বছর বয়সী আহমেদ। ছবি: বিবিসি

“স্পষ্ট করে কিছু কথা বলতে চাই, যখন আমরা সুইদায় প্রবেশ করি, দেখি আমাদের সামনে থাকা বাড়িগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অনেক শিশুর পোড়াদেহ পড়ে আছে, কোনো কোনো শিশুর মাথাও কাটা ছিল। পরিস্থিতি ছিল কল্পনারও বাইরে,” বলেন এ তরুণ সেনা।

বিবিসি তার কথার সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

ওই হাসপাতালের বাইরেই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় সিরিয়ান রেড ক্রিসেন্টের এক সমন্বয়ক রিহাম বারমাউইর।

তিনি পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ উল্লেখ করে ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির কথা জানান।

“অনেক সার্জারি দরকার,” বলেন তিনি।

মাত্রই এই নারী সুইদা প্রদেশ থেকে কয়েকজন আহতকে বের করে নিয়ে আসতে পেরেছেন। কিন্তু আরেক দফা আহতদের আনার চেষ্টা করাটা ‘বেশি বিপজ্জনক’ হয়ে যাবে, কেননা ‘স্নাইপাররা অ্যাম্বুলেন্স লক্ষ্য করেও গুলি ছুঁড়ছিল’।

বিশ্রামরত এক সিরীয় সেনা। ছবি: বিবিসি

গত বছর আহমেদ আল শারার নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থিরা সিরিয়ার ক্ষমতায় আসার পর দ্রুজ আর বেদুইনদের মধ্যে হওয়া এই সংঘর্ষকেই সবচেয়ে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক সংঘাত বলা হচ্ছে।

কয়েক দশকব্যাপী চলা বাশার-আল আসাদ পরিবারকে ক্ষমতাচ্যুত করেই শারার বাহিনী গত বছর দামেস্কের দখল নেয়।

“সিরিয়ার জন্য আমাদের সবাইকে আরও বেশি করে কাজ করতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হতে হবে,” সুয়েইদা প্রদেশে বাস্তুচ্যুতদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্রে এমনটাই বলেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জরুরি প্রতিক্রিয়া বিষয়ক মন্ত্রী রা’দ আল-সালেহ।

“আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কিন্তু আমাদের আশাও আছে,” তিনি বলেন।

“আমাদের সমাজে জ্ঞানী-বুদ্ধিমান মানুষও আছেন, তাই আমি বিশ্বাস করি—আমরা এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠতে পারব, এবং শান্তি ও ন্যায়বিচার অর্জন করতে পারব।”

সুইদার পথে অবশ্য এই আশার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না, বলছেন বিবিসির প্রতিবেদক।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews