আপনার পাশের ফ্লাটে একজন ‘সিঙ্গেল মাদার’ থাকে না? তাকে একদিন দেখা দরকার। যে নারীর গায়ে এই খেতাবটি লাগানো, তাকে নিয়ে সমাজ এমনই কৌতুহলী, সমাজের অনেক প্রশ্ন আছে। কিন্তু আধুনিক যুগে এসে পরিস্থিতি পরিস্কার হলেও বিভিন্ন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি আর সমস্যার সম্মুখীন হতে একা মায়েদের। এর মধ্যে কেউ আবার নতুন করে যদি সম্পর্কে জড়িয়ে নতুন সংসারের সিদ্ধান্ত নেয়, তাকে তো আরও বিব্রত হতে হয়।

স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়া, স্বামীর মৃত্যু বা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অনেক মা একাই সন্তান বড় করার সাহসী পদক্ষেপ নেন। কিছু বছর আগেও সমাজে সিঙ্গেল মাদারদের সহজভাবে নেওয়া হতো না। এখন অবশ্য দিন বদলেছে। স্বামীর মৃত্যু বা বিচ্ছেদের পর অনেক মা এখন একা সন্তানের দায়িত্ব নেন। কখনো অসুখী দাম্পত্য থেকে বাঁচতে নিজেকে ও সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে নতুন একটি জীবনের স্বপ্ন দেখে।

কিন্তু পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, ‘সিঙ্গেল মাদার’-দের এই সমাজে পথচলা মোটেও সহজ নয়। প্রতি পদক্ষেপে কতোই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয় তাদের। সবচেয়ে সমস্যা হলো নতুন করে অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানো, সেটা আমাদের সমাজে বড় একটা ট্যাবু। নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হলেও পরিবার বা সমাজ অনেক ক্ষেত্রেই এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেয়না। তাছাড়া একা মায়েদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়, মানসিক অবস্থাও পাল্টে গেছে। তাই নতুন সম্পর্কে জড়ানোর আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।

যাকে আবার জীবনসঙ্গী করতে চাচ্ছেন আগে তাকে যাচাই করুন। দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে তার বিশ্বাস কতটুকু ভেবে নিন। তিনি শেষ কবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কে জড়িয়েছিল এবং সম্পর্কটা কতদিন টিকেছিল সেটা নিয়েও ভাবুন। বিভিন্ন মতবিরোধকে সে কিভাবে সমাধান করে, রাগ সামলাতে দক্ষতা কেমন, সম্পর্ক বিষয়ক সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করে কিনা সেটা আপনাকে পর্যবেক্ষণ করে নিতে হবে।

সাংসারিক ও অর্থনৈতিক কর্তব্যগুলো সম্পর্কে তার অভিমত কী, সন্তানাদি নিয়ে তার চিন্তাধারা কেমন? সন্তানের প্রতি সে কতটা ধৈর্যশীল? সে কি নিজের সন্তান নিতে চায়? আপনার সন্তানকে সহজভাবে মেনে নিতে এবং তাদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে কি না- এগুলো বিষয় অবশ্যই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।

অবিবাহিতদের প্রেমের থেকে তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা মায়ের প্রেমের বিষয়টি জটিল। এসময় নতুন করে সংসারের পরিকল্পনা দোষের নয়। তবে সঙ্গী পছন্দের ক্ষেত্রে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সতর্কতা অঅর যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি থাকতে হবে। কারণ পুরনো ভুলের পুনরাবৃত্তি আশাপ্রদ নয়। আর নিজের পাশাপাশি সন্তানের ভবিষ্যৎও জড়িয়ে এর সঙ্গে। তাই যেকোনো সম্পর্কে জড়ানোর আগে নিজের সঙ্গেই কিছুটা বোঝাপড়া হওয়া জরুরি। ভবিষ্যতে যার সঙ্গে নিজেকে জড়াতে চাইছেন, তার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি কিছু প্রশ্ন করুন নিজেকেই। সময় নিন পর্যাপ্ত।

তার প্রয়োজনীয়তা

এখন অনেক নারী একাই ভালো আছেন, তেমনই থাকতে চান। আর একবার তালাক হলে অনুভূতি কঠিন হয়, নতুন করে সংসার শুরুর অনুভূতি মন থেকে হারিয়ে যাবে তাও নয়। এক্ষেত্রে নিজেকে সময় দিয়ে প্রয়োজনগুলো বুঝতে হবে। নিজেকে একাকী জীবনযাপনের জন্য সমর্থ বলে মনে হলে নতুন সম্পর্ককে আর না করাই ভালো। তাই নতুন সম্পর্কে যাওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন যে আপনার আর সন্তানের জীবনে তৃতীয় ব্যক্তির প্রয়োজন কতটুকু।

নিজের চাওয়া সম্পর্কে বুঝুন

সঙ্গী বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সঙ্গীর কাছে আপনার প্রত্যাশার বিষয়ে স্পষ্টভাষী হওয়া জরুরি। সংসারের দায়িত্ব নেওয়া বা সঙ্গ দেওয়া- যে কারণই হোক নতুন সঙ্গীকে আপনার ইচ্ছা জানাতে হবে। এতে ভবিষ্যতে কষ্ট পাওয়া ও বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচবেন। তাই সম্পর্কের আগে এসব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন।

সঙ্গী যেমন হলে ভালো হয়

জীবনসঙ্গীর মধ্যেকার গুণাগুণ একেকজনের কাছে একেকরকম হয়। একা থাকা অবস্থায় মানসিকতা নরম থাকে বলে অন্যের ভালো কথায় গলে যাওয়ার বিষয়টি কাজ করে। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই আত্মসম্মান ধরে রাখতে হবে আপনার সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে। অন্যের কথায় প্ররোচিত না হয়ে সব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জীবনের এমন পর্যায়ে আপনাকে আর্থিক এবং মানসিক উভয় দিক থেকে স্থিতিশীল একজন সঙ্গী বেছে নিতে হবে। এমন একজন যে আপনাকে সম্মান করবে এবং আপনার পরিস্থিতি বুঝে পাশে থাকবে। যে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে বিশ্বাসী। কারণ দ্বিতীয় এই অধ্যায়ে এসে সম্পর্কের স্থায়িত্ব বেশ জরুরি। আর্থিক নিশ্চয়তার পাশাপাশি আপনার সঙ্গে মানসিকতার মিল আছে কিনা, সেই দিকটি বিচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব বুঝে শুনে তবেই সামনে এগোতে হবে।

সন্তানকে মানিয়ে নিতে সময় দিন

আপনার নতুন সঙ্গী আপনার সন্তানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের ক্ষেত্রে এ পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে সময় প্রয়োজন। কারণ তাদের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বড়দের মতো না। অনেক সময় মেনে নিতেও পারে না যে তাদের মায়ের জীবনে অন্যকেউ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আর আগে ডিভোর্স হলে ওই বিষয়গুলো বোঝার মতো মানসিক অবস্থা ও বয়স সন্তানের হলে দুটো মিলিয়ে তার গভীর প্রভাব পড়ে যায় মনে। তাই পরবর্তীতে মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে।

এগুলো মাথায় রাখুন। সন্তান বড় হলে তার সঙ্গে আলাপ করুন। বোঝার চেষ্টা করুন সন্তান নতুন ব্যক্তিকে তার জীবনে সহজভাবে স্থান দিতে পারছে কিনা।

মনে রাখবেন, সমাজ, সন্তান আর পারিবারিক দিক বিবেচনা করে তারপর নতুন সম্পর্ক। পাছে লোকে কি বলে তা ভেবে গুটিয়ে থাকবেন না। নতুন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তাড়াহুড়া নয়। সবদিক ভেবে তবেই সিদ্ধান্ত। নিতে হবে। নতুন জীবনে যাওয়ার আগে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া একান্ত জরুরি।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews