মধ্যপ্রাচ্য বহুদিন ধরেই এক উত্তাল বারুদের স্তূপ, যেখানে প্রতিশোধ, ক্ষমতা এবং ধর্মীয় মতাদর্শের লড়াই অব্যাহত। এই প্রেক্ষাপটে ইরান ও ইসরায়েলের শত্রুতা এক অনিবার্য বাস্তবতা। কিন্তু প্রশ্ন হলো— ইরান কি সত্যিই ইসরায়েলের জন্য হুমকি, না কি তারা কেবল এক “কাগুজে বাঘ”, যারা বড় বড় কথা বললেও বাস্তবে কিছুই করতে পারে না?

গত কয়েক বছর ধরে ইসরায়েল একের পর এক ইরান-ঘনিষ্ঠ শীর্ষ নেতাকে টার্গেট করে হত্যা করেছে— সোলাইমানি, আলী মোহাম্মাদি, মোসাদে ফাখরিযাদে কিংবা সিরিয়ায় বিভিন্ন হিজবুল্লাহ ঘাঁটি। প্রতিবারই ইরান প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে, “সময়মতো জবাব দেওয়া হবে”— এই বুলি বারবার উচ্চারিত হলেও কার্যত দেখা গেছে, ইরানের পাল্টা জবাব ছিল সীমিত, প্রতীকী, কিংবা কেবল মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তাদের ছায়া-যোদ্ধাদের, যেমন হিজবুল্লাহ বা হুতি মিলিশিয়া।

ইরানের ঘনিষ্ঠরা হয়তো বলবেন— “সরাসরি যুদ্ধ আমাদের কৌশলে নেই। আমরা 'প্রক্সি' যুদ্ধে পারদর্শী।” তবে এটিও প্রশ্নবিদ্ধ— এই তথাকথিত প্রক্সি যুদ্ধেও কতটা সাফল্য এসেছে? হিজবুল্লাহ লেবাননে শক্ত অবস্থানে থাকলেও সাম্প্রতিক সংঘর্ষে তাদের কার্যকর প্রতিশোধের নজির নেই। হুতিদের মাধ্যমে রেড সি-তে কিছু জাহাজ টার্গেট করা হলেও, তা ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে কোনো চাপ সৃষ্টি করেনি। গাজায় হামাসের ব্যর্থতা এবং সাম্প্রতিক যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষে ইরানকে দেখা গেছে কেবল বিবৃতি দিতে— “আমরা পাশে আছি।”

এদিকে ইসরায়েল চুপচাপ বসে নেই। তারা নিজেদের “প্রতিরক্ষার” অজুহাতে সিরিয়া, লেবানন, এমনকি ইরান সীমান্ত পেরিয়ে রাজধানী তেহরান পর্যন্ত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, প্রযুক্তিগতভাবেও ইসরায়েল ইরান থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছে। ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক সংকট, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা— সব মিলিয়ে তারা নিজের দেশ সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে।

তবু ইরানের রাজনীতি এবং ধর্মীয় নেতৃত্ব ইসরায়েল-বিরোধিতা দিয়েই তাদের “বিপ্লবী বৈধতা” ধরে রাখে। তাই মাঝে মাঝে ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন, কিংবা “ইসরায়েল ধ্বংস হয়ে যাবে” ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়। কিন্তু কথায় যাদের হাত ভারী, কাজে তারা প্রায়ই হালকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন— ইরানের পররাষ্ট্রনীতি অনেকটাই “প্রতিক্রিয়াশীল” এবং রক্ষণাত্মক। তারা আক্রমণের হুমকি দেয়, কিন্তু বড় পরিসরের সংঘর্ষে যায় না। কারণ, সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে নিজেদের অস্তিত্বই হুমকিতে পড়তে পারে। ফলে তারা যুদ্ধের ধারে কাছে না গিয়েও "বিপ্লবী ভাবমূর্তি" বজায় রাখতে চায়।

ইরান যদি সত্যিই ইসরায়েলবিরোধী যুদ্ধকে 'অস্তিত্বের সংগ্রাম' হিসেবে দেখে, তবে তাদের প্রতিক্রিয়াও হতে হবে বাস্তব, সুসংগঠিত ও কৌশলগত। শুধু কথার লড়াই দিয়ে শত্রুকে দুর্বল করা যায় না। আর যদি বাস্তবতাই তাদের থামিয়ে রাখে, তবে ‘কাগুজে বাঘ’ বলাটাও খুব একটা ভুল হয় না। ইতিহাস কিন্তু শুধু ফাঁকা বুলি নয়, কর্মের ভিত্তিতেই বিচার করে।

লেখক: সাংবাদিক



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews