দেশে একাদিক্রমে হস্তীর প্রাণহানি আমাদের উদ্বিগ্ন না করিয়া পারে না। সর্বশেষ গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এলাকায় মহাসড়কের পার্শ্বে মৃত হস্তী উদ্ধারের সংবাদ প্রকাশ পাইয়াছে। এমনিতেই নির্বিচারে বন ধ্বংস এবং জলবায়ু পরিবর্তনসৃষ্ট দুর্যোগে বন উজাড়করণের ফলে বন্যপ্রাণীর খাদ্য ও আবাসস্থল হ্রাস হেতু হস্তীসহ কতিপয় প্রাণীর অস্তিত্ব সংকটে পড়িয়াছে।
যে কারণে হস্তী সকল মনুষ্য বসতি ও ফসলি জমিতে খাদ্য অন্বেষণে বাহির হয়। এইরূপ ঘটনায় মনুষ্যকুলের আক্রমণে হস্তীর প্রাণহানির ঘটনাও আমরা দেখিয়াছি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হস্তী প্রজাতি রক্ষা করা অতীব জরুরি।
ধারণা করা যায়, গাজীপুরের আলোচ্য হস্তী কাহারও মালিকানাধীন ছিল। আমরা মনে করি, হস্তীর সুরক্ষার বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিমালিকানাধীন হইলেও উহাদিগের প্রতি কোনোরূপ অবহেলা প্রদর্শন অনুচিত। উহাদিগের খাদ্যসংস্থান, অসুস্থ হইলে শুশ্রূষাসহ সকল প্রকার যত্ন লইতে হইবে। এমনকি কোনো কারণে হস্তীর মৃত্যুতেও যথাযথ সমাহিতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে সার্কাস, ভ্রমণ, শোভাবর্ধন, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক কার্যে হস্তী ব্যবহারের নিমিত্তে ব্যক্তিমালিকানায় লাইসেন্স দেওয়া এবং নবায়ন কার্যক্রম স্থগিতকরণের নির্দেশ দিয়াছেন হাইকোর্ট। আমরা মনে করি, হাইকোর্টের এই নির্দেশনা হস্তীর উপর নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতা বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করিবে।
তবে বন্যহস্তী সুরক্ষায়ও আমাদের উদ্যোগী হইতে হইবে। তাহাদিগের সংরক্ষণে বন বিভাগের দায়িত্বই প্রধান। তজ্জন্য আমরা প্রত্যাশা করি, বন প্রশাসন আলোচ্য ক্ষেত্রে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করিবে। হস্তীর ব্যাপারে তাহারা যদ্রূপ তৎপর থাকিবে, তদ্রূপ এই প্রাণীর খাদ্য ও বাসস্থান তথা বনাঞ্চল সুরক্ষায়ও বন বিভাগের দায়িত্বশীল ভূমিকা কাম্য। একইভাবে হস্তী-মনুষ্যকুলের দ্বন্দ্ব নিরসনসহ সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিতে পারে।
মনে রাখিতে হইবে হস্তী মনুষ্যকুলের শত্রু নহে। তাহাদিগের সুরক্ষা পরিবেশ ও মানব সম্প্রদায়ের জন্যই উপকারী ভূমিকা পালন করিবে। অধিকন্তু ব্যক্তিমালিকানাধীন হস্তীর ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক হইবার বিকল্প নাই।