দুই বছর আগে বিক্রি হয়েছিল ফ্রান্সের শ্যাঁতু লুই ফোরটিন নামের একটি বিলাসবহুল প্রাসাদসম বাড়ি। ফরচুন ম্যাগাজিন তখন সেটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বাড়ি বলে অভিহিত করেছিল। মোট ৫৭ একর জায়গার ওপর তৈরি এই বাড়ির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও ২০১৫ সালে জানা যায়নি বাড়ির ক্রেতার নাম। তবে এখন জানা গেছে, ওই বাড়ি কিনেছিলেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান!

সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে এ তথ্য। শ্যাঁতু লুই ফোরটিন নামের বাড়িটি ফ্রান্সের ভার্সাইয়ের কাছে অবস্থিত। এর বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি ডলার। ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি দুর্গকে ২০০৯ সালে পুনর্নির্মাণ করা হয়। বাড়িতে আছে সোনার তৈরি ঝরনা ও মার্বেলের মূর্তি। আরও আছে গোলকধাঁধা ও পার্ক।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সৌদি যুবরাজের কাছে বিক্রি হওয়ার পর থেকেই শ্যাঁতু লুই ফোরটিন নামের বাড়িটিতে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। ২০১৫ সালের পর মালিকপক্ষ একবারের জন্যও বাড়িতে আসেননি।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি যুবরাজ খুব সতর্কতার সঙ্গে কিছু শেল কোম্পানির মাধ্যমে এই বিলাসবহুল বাড়িটি কিনেছিলেন। এখন এই বাড়ির মালিকানাও আছে এসব কোম্পানির হাতে। শেল কোম্পানি হলো একধরনের নিষ্ক্রিয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এগুলো মূলত ভবিষ্যতে ব্যতিক্রমী কোনো আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হয়। এসব শেল কোম্পানির মালিকানায় আছে এইট ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এটি একটি সৌদি প্রতিষ্ঠান, যার ব্যবস্থাপনায় আছেন সৌদি প্রিন্স সালমানের ব্যক্তিগত ফাউন্ডেশনের প্রধান কর্মকর্তা! এভাবেই বিলাসবহুল বাড়িটি নিজের কবজায় রেখেছেন সৌদি যুবরাজ। এরই মধ্যে সৌদি রাজপরিবারের সদস্যদের উপদেষ্টারা এ তথ্য স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, শ্যাঁতু লুই ফোরটিন সৌদি যুবরাজের সম্পত্তি।

অন্যদিকে বারমুডার আইনি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলবাই বলেছে, এইট ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির মালিকানায় আছেন ‘সৌদি রাজপরিবারের সদস্যরা’ এবং এর ‘সম্পদ বাদশাহ ও সৌদি রাজত্ব থেকে আসে’।

দুই বছর আগে বিক্রি হয়েছিল ফ্রান্সের শ্যাঁতু লুই ফোরটিন নামের বিলাসবহুল প্রাসাদসম বাড়ি। ছবি: রয়টার্সসৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সম্প্রতি দেশটিকে উদারপন্থী মুসলিম দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, উদারপন্থী ইসলামে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা সৌদি আরবের বাজার পরিকল্পনার একটি অংশ। একই সঙ্গে দুর্নীতির বিপক্ষে অভিযানের অংশ হিসেবে নভেম্বর মাসে দেশটিতে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। এতে আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজন প্রিন্স, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের। মূলত রাজধানী রিয়াদ ও বন্দরনগরী জেদ্দায় অভিযানটি চালানো হচ্ছে।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে কাউকে আটক করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আপনাকে অবশ্যই এ (দুর্নীতি) ব্যাপারে একটি সংকেত দিতে হতো, কেউ পালাতে পারবে না।’

সমালোচকেরা বলছেন, নিজের ক্ষমতাকে সংহত করার জন্যই যুবরাজ সালমান এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছেন। নিজে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার কথা বললেও সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদনে জানা গেছে সালমানের বিলাসবহুল সম্পদ কেনার কথা। শুধু বাড়ি নয়, সৌদি যুবরাজের ৪৫ কোটি ডলারে লেওনার্দো দা ভিঞ্চির চিত্রকর্ম ও ৫০ কোটি ডলারে ইয়ট কেনার খবরও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলোও কেনা হয়েছে শেল কোম্পানি ব্যবহার করেই।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক বিশ্লেষক ব্রুস ও রিডেল বলেন, ‘তিনি এখন নিজের একটি ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করছেন। বোঝাতে চাচ্ছেন যে তিনি ভিন্ন। সৌদি যুবরাজ নিজেকে সমাজসংস্কারক হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছেন। নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত প্রমাণের চেষ্টায় আছেন তিনি। সেই চেষ্টায় এই সংবাদ একটি বড়সড় আঘাত হানবে।’

তবে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি সম্পর্কে সৌদি সরকার বা রাজপরিবারের কেউ কোনো মন্তব্য করেননি। এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমটির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু এতে কোনো সাড়া মেলেনি।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews