সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রিতার (১১) বিয়ের অনুষ্ঠান আজ শুক্রবার। গোপনে সব আয়োজন সম্পন্ন করতে কার্যত ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছে এ বালিকাকে। পরিবার সদস্যরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছে গত সপ্তাহে। তাতে বয়স বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৮ বছর চার মাস ২৭ দিন। স্থানীয় বাজারের এক মুদি দোকানির সঙ্গে বিয়ে দিতে অভিভাবকরা এ তোড়জোড় করছেন। ঘটনাটি নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের। স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
নান্দাইল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘মনগড়া জন্ম নিবন্ধনে বিয়ে দেওয়া আইনত দণ্ডনীয়। বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আলোচিত এ বাল্যবিয়ে নিয়ে রিতার অভিভাবকরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
সূত্র জানায়, শেরপুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলামের মেয়ে রিতা স্থানীয় খুররম খান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। গত দুই দিন স্কুলে আসেনি সে। পরিবারের নির্দেশে সে এখন ঘরবন্দি। সে জন্য সহপাঠীরা দেখা করতে পারেনি। তবে বাড়িতে শামিয়ানা টানিয়ে রিতার বিয়ের আয়োজন দেখে এসেছে তারা। চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের ধুরুয়া গ্রামে তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। বরের মনিহারি দোকান আছে স্থানীয় বাজারে। কন্যাপক্ষ পাত্রের ব্যবসার জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা দেবে এবং বিয়ে হবে দুই লাখ টাকা দেনমোহরে। বরযাত্রায় থাকবে ৯০ জন অতিথি। স্বজনরা এসব তথ্য অবগত হলেও নাবালিকার বিয়ে থামাতে তত্পর নয় কেউই।
রিতার স্কুলের রেজিস্টারে দেখা গেছে, তার জন্মতারিখ ১ ডিসেম্বর ২০০৬। সে হিসাবে তার বয়স ১১ বছর পাঁচ মাস ২৭ দিন। নাবালিকা এ ছাত্রীর বিয়ের কথা অবগত নন বলে জানান প্রধান শিক্ষক আতাহার আলী।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেওয়া একটি জন্ম সনদে দেখা গেছে, রিতার জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ২০০০, যা ইস্যু করা হয়েছে চলতি মাসের ১৮ তারিখ। তাতে চেয়ারম্যানের সিল থাকলেও নেই সচিব বা চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ই-তথ্য সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ রুবেল বলেন, ‘স্থানীয় মেম্বার গত ১৬ এপ্রিল নির্ধারিত ফরমে সুপারিশ করায় এই জন্ম নিবন্ধন ইস্যু করা হয়। এতে আমার কোনো দোষ নেই।’
তবে ইউপি সদস্য মাসহুদ মিয়া বলেন, ‘আমি এই নামে জন্ম নিবন্ধন দিতে কোনো সুপারিশ করিনি।’