পিৎজা খেয়ে আর দেরি করলাম না। থরং ফেদিকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়লাম থরং হাই ক্যাপের উদ্দেশে। যদিও এক ঘণ্টার বিরতি নেওয়ার কথা ছিল, তবে এখানে প্রায় ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের মতো লেগে গেল। তাকিয়ে দেখলাম, থরং হাই ক্যাম্প পাহাড়ের ঠিক ওপরে। সেখানে যাওয়ার রাস্তাটা আঁকাবাঁকা। ছোট ছোট পাথরগুলো পাহাড়ের গায়ে এমনভাবে ঝুলে আছে, যেন একটা ছোট পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে, একটা বাতাসেই যা কয়েক শ ফুট নিচে গড়িয়ে পড়বে। থরং ফেদি থেকে থরং হাই ক্যাম্প যেতে প্রায় ৩৫০ মিটার উচ্চতা উঠতে হবে। হাঁটার শুরুতেই কিছুটা ক্লান্ত লাগে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তবে ১৫–২০ মিনিট হাঁটলেই শরীরের সঙ্গে মানিয়ে যায়। আমার ক্ষেত্রে সব সময় এমন হয়।
ওপরে ওঠার সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ১০ কদম উঠেই দাঁড়িয়ে দম নিই। কখনো কখনো ১০ কদমের জায়গায় তিন কদমেও দম নিতে হয়েছে। এভাবে ১ ঘণ্টা ২৩ মিনিট ট্রেক করার পরে, অবশেষে থরং হাই ক্যাম্পে পৌঁছালাম। আমার পোর্টার মঙ্গল অনেক আগেই পৌঁছে গেছেন। এর মধ্যে শুরু হলো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এখন অফ সিজন, তাই ট্রেকার কম। এ কারণে ওপরে থাকা টি–হাউস বা রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ। একটাই খোলা ছিল, থরং হাই ক্যাম্প হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ। ভেতরে ঢুকতে না ঢুকতেই মুষলধারে বৃষ্টি নামল। অন্য কোনো ট্যুরিস্ট হলে হয়তো এমন বৃষ্টিতে গদগদ হয়ে রোমান্টিকতা খুঁজতেন; কিন্তু আমার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেল। আগামীকাল ভোর চারটায় আমার পুশ আপ, সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত থরং লা পাসের উদ্দেশে। এমন বৃষ্টি থাকলে তা আর সম্ভব হবে না। যাহোক, মাথা থেকে দুশ্চিন্তা বিদায় করে টেবিলে বসে দুধ–চা অর্ডার করলাম।
আমার রুমে এখনো যাইনি। এদিকে বিদ্যুৎ নেই। রুমে নাকি ফোন চার্জেরও ব্যাবস্থা নেই। নেটওয়ার্কও পাচ্ছি না। গায়ের ফ্লিসটা হালকা ভিজে গেছে। খুলে পাশেই রাখলাম। চা চলে এল। চায়ে চুমুক দিতে দিতে গতকালের ছবিগুলো দেখছিলাম। পাশের টেবিলে দুজন বসে আড্ডা দিচ্ছেন। তাঁরা হিন্দি ভালো বলেন। চেহারায়ও নেপালিদের মতো নয়। হঠাৎ তাঁদের মধ্যে একজন আমার অবস্থা জানতে চাইলেন। ভালো আছি জানালাম।