পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা যেন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় কারো কোনো দায় নিতে হয় না। ফলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। এবার ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে ভারি বর্ষণের পর চট্টগ্রামের দুই জায়গায় পাহাড় ও দেয়ালধসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাত ২টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবর শাহ থানার পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় পাহাড়ধসে মাটি ঘরের ওপর পড়ায় এক পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে রাত ১টার দিকে পাঁচলাইশ থানার রহমাননগর এলাকায় দেয়ালধসে নিহত হয় একজন। প্রশ্ন হচ্ছে এই মৃত্যুমিছিল থামবে কবে?

গত বছর পাহাড় বিপর্যয়ে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। পাহাড়ের ঢালুতে বাস করা মানুষজন চাপা পড়ে নিজের জীবন, ঘরবাড়ি, আত্মীয় স্বজন সবকিছু হারায়। এই করুণ মর্মান্তিক মৃত্যুর কোনো সান্ত্বনা নেই। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে এর কোনো প্রতিকারও নেই। ফি বছর এ ধরনের মানবিক বিপর্যয় দেখা দিলেও কারও কোনো হুঁশ নেই। বরং লোভ ও লালসা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। সর্বগ্রাসী মানসিকতার কাছে হার মানছে আইন, কানুন মানবিকতা- সব। ফলে প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ মানুষের।

যখন একটি ঘটনা ঘটে পত্রপত্রিকা-মিডিয়া পরিবেশবিদরা সরব হয়। ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের নিয়েও অনেক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। কার বিরুদ্ধে আগে কী কী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল, কী কারণে কোন সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করা যায় নি, পাহাড় ধসের কারণই বা এসব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়। কিন্তু স্বজন হারানোদের কান্নার রোল আকাশে বাতাসে মিলিয়ে না যেতেই সবাই সব কিছু ভুলে যান। আর চলতে থাকে আরেকটি মর্মন্তুদ ঘটনার জন্য নির্দয় অপেক্ষা। এই যেন নিয়ম কিংবা নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পাহাড়ের ওপর থেকে গাছ কেটে, ট্রাকে ট্রাকে মাটি কেটে পাহাড়কে ন্যাড়া করে ফেললে বৃষ্টি বাদলায় তার ধসে পড়া ছাড়া আর কী কোনো উপায় থাকে? আর পাহাড়ের ঢালুর নিচে যে সমস্ত অসহায় মানুষ বসতি স্থাপন করে তাদের মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়। অকাতরে প্রাণ যায় এসব ভাগ্যাহত মানুষের। যারা সমতলে জায়গা না পেয়ে জীবনের অমোঘ টানে এই বিপজ্জনক জায়গাকেই বাসস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছিল।

ইতিপূর্বে চট্টগ্রামের ১২টি পাহাড়কে ভূমিধসের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সরকারিভাবে গঠিত তিনটি বিশেষজ্ঞ কমিটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও কক্সবাজার পৌরসভার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে বসবাসকারী প্রায় ১০ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সেই সুপারিশ কার্যকর হয়নি পাঁচ/ছয় বছরেও।

লাখ লাখ বছরের ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখাই শুধু নয় মানুষের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য এই পাহাড়গুলোর বেঁচে থাকটাও সমান জরুরি। কিন্তু মানুষ তার লোভ ও লাভের হিংস্র থাবা বসিয়েছে পাহাড়ের ওপর। পাহাড় কেটে সমতল ভূমি তৈরি করছে। এতে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

পরিবেশের ওপর অব্যাহত অত্যাচারের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের পিছু ছাড়ছে না। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীর বাসস্থান ও জ্বালানি সংগ্রহের কারণেও পাহাড় ধ্বংস হচ্ছে। পাহাড় কাটা রোধ করতে হলে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে দিতে হবে। আপদকালীন অবস্থায় শুধু পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থলে সরে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশ জারি করলেই চলবে না। এ জন্য স্থায়ী পুনর্বাসন ব্যবস্থা জরুরি। মনে রাখতে হবে পাহাড়কে ঘিরে যদি অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করা না যায় তাহলে পাহাড় কাটা কোনো দিন বন্ধ করা যাবে না। পাহাড়ের কান্নাও থামবে না।

এইচআর/পিআর



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews